প্রথমবারের মতো মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) প্রথমদিনই মেট্রোরেলের সব স্টেশনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে দৈনন্দিন প্রয়োজনে যেমন এই গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন, অনেক বিনোদনপ্রেমী মানুষের ভিড়ও দেখা গেছে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ ভিড় দেখা গেছে।
Advertisement
ঘড়ির কাঁটা ৮টা ছুঁই ছুঁই। মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য সচিবালয় স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন মোহাম্মদ জামাল কবিরাজ। গন্তব্য মিরপুর-১১। এই স্টেশনের পাশেই তিনি বসবাস করেন। ইসলামপুরে শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা তার। অন্য সময় ইসলামপুর থেকে মিরপুরে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই চলে যেত। কিন্তু এখন সেই চিন্তা নেই। ইসলামপুর থেকে প্রথমে সচিবালয় স্টেশনে এসেছেন। এরপর কম সময়ে মিরপুর যেতে পারবেন- সেটা ভেবেই তার চোখে-মুখে তৃপ্তিন ছাপ।
জামাল কবিরাজ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপুরে শাড়ির ব্যবসা করি। কিন্তু মিরপুর-১১ এ আমার নিজের বাড়ি। ইসলামপুরে দোকান বন্ধ করে জটলার কারণে অনেক সময় বাড়ি পৌঁছাতে রাত হতো। এমনও দেখা গেছে বাসায় গিয়ে দেখি ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু এখন সেই চিন্তা আর নেই, দ্রুত সময়ে বাড়ি যেতে পারবো। অনেক ভালো লাগছে। সচিবালয় থেকে ৭০ টাকা ভাড়া কোনো বিষয় নয়।’
মিরপুর-১০ নম্বরের বাসিন্দা শামীম হোসেন। কাকরাইলে ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন। কাজ সেরে আবার মিরপুর চলে যাচ্ছেন। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। শামীম হোসেন বলেন, ‘কোনো রকম মেট্রোরেলে চড়তে পারলেই গন্তব্য। কোনো ঝামেলা নেই, বিশেষ করে জটলা ও জ্যাম থেকে মুক্তি পেয়েছি।’
Advertisement
শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় অনেক বিনোদনপ্রেমীর ভিড় ছিল মেট্রোরেলে। এছাড়া রাতের ঝলমলে আলোয় প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল দেখতে ও ভ্রমণ করতে মতিঝিলেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন আতাউল ইসলাম শহীদ। সপরিবারে বসবাস করেন আরামবাগে। অন্য সময় প্রাইভেটকার ব্যবহার করলেও শনিবার মেট্রোরেলে বেড়াতে গিয়েছিলেন উত্তরার দিয়াবাড়ি।
আতাউল ইসলাম বলেন, ‘ছুটির দিনে পরিবারকে সময় দিতে দিয়াবাড়ি গিয়েছিলাম। খুব কম সময়ে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল চলে এলাম। আমাদের জন্য এটা এক ধরনের বিস্ময়।’
চলতি অর্থবছরের গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু হয়। এর মাধ্যমে এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনই চালু হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন>> টঙ্গী পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণে সমীক্ষা চলছে: কাদের
এতদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে এবং সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলাচল করতো। এখন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল রুটে ছুটছে মেট্রোরেল। প্রথমদিন রাতে মতিঝিলে মেট্রোরেল এসেছে, এটা দেখতেও অনেকে ভিড় জমান স্টেশনে।
প্রথমদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেলে উপচেপড়া ভিড় ছিল। তবে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় বেশি ছিল বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসি) ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে। সারাদিনই উপচেপড়া ভিড় ছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোনো স্টেশনে তিল পরিমাণ জায়গা ছিল না। তবে তাদের অনেকেই ছিলেন বিনোদনপ্রেমী। রোববার থেকে ভিড় আরও বাড়বে। রোববার থেকে রিয়েল পিকচার (আসল চিত্র) পাওয়া যাবে, কারণ এদিন অফিস-আদালত সবকিছু খুলবে।’
উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। আর উত্তরা থেকে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভাড়া ৯০ টাকা। পাশাপাশি উত্তরা থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ৭০ টাকা।
এছাড়া আগে থেকে চালু হওয়া উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা।
এ অংশের মাঝখানের সাতটি স্টেশনের জন্য আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও বিদ্যুৎচালিত এ গণপরিবহনে ভ্রমণের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান। বাকিটা সরকার দেশীয় উৎস থেকে ব্যয় করবে। মেট্রোরেলের পথটির নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি লাইন-৬। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। ১৬টি স্টেশনেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থামছে স্বপ্নের মেট্রোরেল।
এমওএস/ইএ/জেআইএম