আন্তর্জাতিক

শান্তি ফিরেছে ইরান-পাকিস্তানে

পাকিস্তান এবং ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকারের কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত সপ্তাহে দুই দেশ একে অন্যের সীমানার ভেতরে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের আশঙ্কা দেখা দেয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ইরান-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তিতে এগিয়ে কে?

এসব হামলার পর দুই দেশই নিজ নিজ রাজধানী থেকে আরেক দেশের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দুই দেশের রাষ্ট্রদূতই তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইরান পাকিস্তানের সীমানার ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় মঙ্গলবার।

ইরানের হামলার জবাবে পাকিস্তান বৃহস্পতিবার ইরানের সীমানার ভেতরে হামলা চালায় । ইরান জানায় যে, পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে নয়জন নিহত হয়েছে।

Advertisement

দুই দেশের হামলা-পাল্টা হামলাকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতির আশঙ্কা তৈরি হলে পাকিস্তান আলোচনার মাধ্যমে ‘সব বিষয়ের’ সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে ফোনালাপের সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রস্তাব তোলেন।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দ্বিপাক্ষিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ইরানের সঙ্গে ‘সব বিষয়ে’ কাজ করার জন্য পাকিস্তানের আগ্রহের বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিলানি।

তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়েও রাজি হন। দুই দেশের রাষ্ট্রদূতরা যেন অপর দেশের রাজধানীতে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেন সে বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিলেও ইরানের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইরানের সারাভান শহরে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তা বড় পরিসরের জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চালানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে যে, তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখে।

Advertisement

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, এই ‘নিখুঁত হামলা’ ড্রোন, রকেট আর দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে চালানো হয়েছে। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চালানো ওই হামলায় সশস্ত্র সংগঠন বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি আর বেলোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলাগুলো চালানো হয়েছে বলে দাবি করছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

এই দুইটি গ্রুপই কয়েক দশক ধরে স্বাধীন বেলুচিস্তানের দাবিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান অঞ্চল দেশটির সবচেয়ে বড় প্রদেশ। পাকিস্তানের মোট ভূমির প্রায় ৪৪ শতাংশ বেলুচিস্তানে। তবে দেশটির মোট জনসংখ্যার (২৪.১ কোটি) মাত্র ৬ শতাংশ বাস করে ওই অঞ্চলে।

ওই প্রদেশটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী হলেও দেশটির অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় এটি সবচেয়ে কম উন্নত। বেলুচিস্তান বলতে আসলে যে অঞ্চলটিকে বোঝানো হয় তা পাকিস্তানের সীমানার বাইরেও ছড়ানো। পাকিস্তানের বাইরে আফগানিস্তান আর ইরানেও বেলুচিস্তানের কিছু অংশ রয়েছে।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান আর ইরানের মধ্যে যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তার দুটি হামলার ঘটনাই ঘটেছে বেলুচিস্তান অঞ্চলে। মঙ্গলবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি হয় পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান এলাকায়। আর বৃহস্পতিবার পাকিস্তান যে পাল্টা হামলা চালায় সেটা ছিল ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সিস্তান-বেলুচিস্তান অঞ্চলে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তান-ইরানের মধ্যে উত্তেজনা কমার ইঙ্গিত

পাকিস্তানের অন্য যে কোনো অঞ্চলের তুলনায় বেলুচিস্তানের ভৌগলিক. ঐতিহাসিক ও সেখানকার মানুষের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। ইরান ছাড়াও তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে বেলুচিস্তান অঞ্চলের। এই এলাকায় আরব সাগর সংলগ্ন উপকূলও রয়েছে। আয়তন সবচেয়ে বড় হওয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের খনিজ সম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই প্রদেশ। কয়লা, সালফারের মত খনিজ পদার্থের পাশাপাশি গ্যাসের খনিও রয়েছে এই অঞ্চলে।

টিটিএন