রফিক শেখ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাটের নয়নসুখ এলাকার কৃষক। এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড টমেটোর চাষ করেছেন। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় লাভের আশাও করছেন। তার মতো আনোয়ার শেখ, সুলতানা বেগম, সামছুল সরদার, সাত্তার মোল্লাসহ অনেক টমেটো চাষি লাভের আশা করছেন। বর্তমান যেভাবে ২০-২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন, শেষ পর্যন্ত এমন বাজারদর থাকলে তারা লাভবান হবেন।
Advertisement
চাষিদের দাবি, চাষের জন্য লিজ নেওয়া জমিসহ সার, বীজ, কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় চাষে খরচ বেড়েছে। তবে তারা সরকারি ভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উল্লেখযোগ্য পরামর্শ পাননি। ফলে নিজেদের মতো করে চাষাবাদ করেছেন।
জানা যায়, রাজবাড়ীর নদী তীরবর্তী চর ও নিচু অঞ্চলে টমেটোর চাষ বেশি হয়। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলায় বেশি চাষ হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল ও চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে হাইব্রিড টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে টমেটোর দাম ভালো পাওয়ায় খুশিও তারা। এমনকি আগাম আবাদ করা চাষিরাও দাম ভালো পাচ্ছেন। এ টমেটো ব্যাপারিদের মাধ্যমে রাজবাড়ী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ
Advertisement
কৃষকেরা জানান, ১ বিঘা জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ, বীজ বপন, লাগানো ও শ্রমিকের মজুরিসহ প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দিগুণেরও বেশি। ভালো ফলন হলে বিঘায় দেড় থেকে ২০০ মণ টমেটো পান কৃষক। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ২৫-২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ বছর রাজবাড়ীতে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় একটু বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে। টমেটো চাষি রফিক শেখ বলেন, ‘এ বছর ৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছি। কিছু বিক্রিও করছি। বর্তমানে পাইকারি ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এভাবে বাজার থাকলে লাভবান হবো। বাজার কমে গেলে লোকসান হবে।’
তিনি বলেন, ‘সার, বীজসহ অন্য সব কৃষিপণ্যের দাম অনেক বেশি। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। সরকার সার, বীজ, তেলের দাম কমালে আমরা উপকৃত হতাম। এ টমেটো রাজবাড়ী, পাংশা, ফরিদপুর ও ঢাকার মিরপুরে বিক্রি করি। এবার ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যেমন ফলন হয়েছে; সে তুলনায় ১ থেকে ২ লাখ টাকা পাবো।’
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে ফুলকপি চাষে লাভবান কৃষকেরা
Advertisement
চাষি আনোয়ার শেখ বলেন, ‘এবার আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো যাচ্ছে। লিজ নিয়ে চাষ করলে খরচ দুই গুণ হয়। ভালো ফলন হলে এক বিঘায় প্রায় দেড় থেকে ২০০ মণ টমেটো হয়। এখন আমরাই কৃষি অফিসার হয়ে গেছি। তাদের থেকে ভালো বুঝি, কোন সময় কোন ওষুধ বা সার লাগবে।’
সামছুল সরদার বলেন, ‘নিজের জমি না থাকায় লিজ নিয়ে টমেটো চাষ করেছি। চাষের খরচের সাথে বাড়তি ৪০ হাজার টাকাসহ সব মিলিয়ে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। গত বছরের চেয়ে ফলন ও বাজার দুটাই ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত যদি এমন থাকে, তাহলে লাভবান হবো।’
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একক সবজি হিসেবে রাজবাড়ীতে টমেটোর আবাদ সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকেরা সব সময় অভিযোগ করেন। একজন কৃষকের কাছে সব সময় যাওয়া সম্ভব নয়। দু’একবার গিয়ে পরামর্শ দিয়ে ফোন নম্বর দিয়ে আসা হয়। প্রয়োজনে তারা ফোনে পরামর্শ নেন।’
রুবেলুর রহমান/এসইউ/এএসএম