দেশজুড়ে

চা বিক্রি করে মাসে নজরুলের আয় তিন লাখ

৭ বছর আগে মাত্র ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চা বিক্রি শুরু করেন শরীয়তপুরের যুবক কাজী নজরুল ইসলাম (২৮)। প্রথমে দুই লিটার দুধের চা বিক্রি না হলেও, এখন তার দোকানে চায়ের জন্য দৈনিক দরকার হয় অন্তত ৮০ লিটার দুধ। যা থেকে তার মাসিক আয় অন্তত তিন লাখ টাকা। তার হাতে তৈরি দুধ চায়ের স্বাদ এতটাই সুস্বাদু যে এরইমধ্যে প্রশংসা কুড়াচ্ছে জেলাসহ পাশের জেলার চা প্রেমীদেরও।

Advertisement

কাজী নজরুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের হাজতখোলা এলাকায়। বাবা নূরজামান কাজী আর মা আসমা বেগম ছাড়াও তার পরিবারে রয়েছেন ছোট ভাই কাজী ফয়সাল, স্ত্রী তামান্না আক্তার মারিয়া, ছেলে রহমাতুল্লা তাহসান আর মেয়ে কাজী নওসীন ইসলাম পরী। তার দোকানটি সদর উপজেলার আংগারিয়া বাজার বাইপাস সড়কের পাশে। দোকানের নাম ‘হাইওয়ে চায়ের আড্ডা’।

নজরুলের দোকানে দুধ চায়ের পাশাপাশি পাওয়া যায় দই চা, হরলিক্স চা, বাদাম চা, মালাই চা, রং চা, কফি, মালাই কফি আর দুধের স্বরের তৈরি মজাদার মালাই আইসক্রিম। প্রকারভেদে চায়ের দাম রাখা হয় ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন গড়ে তার দোকানে ৩০ হাজার টাকার অন্তত তিন হাজার কাপ চা বিক্রি হয়। এ থেকে তার দৈনিক লাভ হয় ১০ হাজার টাকা। আর এই আয়েই চলে তাদের পুরো সংসার।

কাজী নজরুল ইসলাম জানান, একসময় তিনি এসি ফ্রিজ সারানোর কাজ করতেন। তবে সব সময় এই কাজ থাকতো না। পরে মামা কামাল সরদারের পরামর্শে এসি ফ্রিজ সারানোর পাশাপাশি বাড়তি রোজগার করতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তবে এটাই যে তার মূল পেশা হয়ে যাবে প্রথমে ভেবে ওঠেননি তিনি। তার তৈরি দুধের চা মজাদার হওয়ায় ধীরে ধীরে চা প্রেমীদের আকর্ষণ বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে তার দোকানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পাশের জেলা মাদারীপুর থেকেও অনেকে আসেন সুস্বাদু চা খেতে।

Advertisement

শুরু থেকেই নজরুলের দোকানে চা খেয়ে আসছেন মনোহর বাজারের বাসিন্দা দ্বীপ সাগর সাহা। অবসর সময়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও এখানে নিয়মিত চা খাওয়ার কথা জানালেন তিনি।

দ্বীপ সাগর সাহা বলেন, যতদিন ধরে এখানে চায়ের স্টলটি দিয়েছে আমি ঠিক ততদিন ধরে এখানে চা খেতে আসি। এখানে চা খেতে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে জেলার মধ্যে বেস্ট চা বানায় নজরুল, দারুণ স্বাদ। তাছাড়া ওরা ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চা তৈরি করে। এজন্য মাঝেমধ্যে পরিবারের সঙ্গেও চা খেতে আসা হয়।

বিগত ৩ বছর ধরে ছুটির দিনগুলোতে নিয়মিত নজরুলের চায়ের আড্ডায় চা খাওয়ার কথা জানালেন চাকরিজীবী ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় অন্যান্য দিনগুলোতে এখানে চা খাওয়ার সুযোগ হয় না। শুক্রবার কিংবা শনিবার হলেই বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় এখানে চা খেতে চলে আসি। নজরুলের দোকানের চা অত্যন্ত সুস্বাদু ও ভিন্নতা রয়েছে।

৭ বছর বয়সী মেয়ে তাসনীম ইসলাম নোহাকে নিয়ে দাদপুর থেকে চা খেতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাই চা পছন্দ করে। নজরুলের দোকানের চায়ের সুনাম শুনে পরিবার নিয়ে একদিন এখানে চা খেতে এসেছিলাম। এরপর থেকে নিয়মিত আসা হয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যায়। তবে এখানকার মালাই চা খুব বিখ্যাত। আমার মেয়ে নজরুলের দোকানের মালাই চা খুব পছন্দ করে, তাই মেয়ের জন্য এখানে আরও বেশি আসা হয়। এমনও হয়, আমার মেয়ে ছুটির দিনে নানুর বাসায় ঘুরতে না গিয়ে এখানে মালাই চা খেতে আসে।

Advertisement

পাশের জেলা মাদারীপুর থেকে নজরুলের দোকানে চা খেতে আসা মেহেদী হাসান শুভ বলেন, কয়েক মাস আগে আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে এখানে ঘুরতে এসে চা খেয়েছিলাম। তার দোকানের দুধ চায়ের স্বাদ এবং গন্ধ দুটোই আলাদা। এখনতো মাঝেমধ্যেই আমি এখানে চা খেতে আসি।

চা দোকানী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার দোকানে বেচা বিক্রি ভালো হওয়ার কারণ হচ্ছে এখানে গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে চা বানানো হয়। তাই দুধচায়ের আসল স্বাদ পাওয়া যায়। তাছাড়া সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে চা বানাই। আর এজন্যই জেলার পাশাপাশি পাশের জেলা থেকেও লোকজন এখানে চা খেতে আসে।

তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো কাজই ছোট নয়। আমি ছোট একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আজ এতো বড় প্রতিষ্ঠান করে দাঁড় করিয়েছি। আপনারা বেকার না থেকে চাইলে ছোট একটি ব্যবসা দিয়ে শুরু করতে পারেন। আশা করি একটা সময় ভালো কিছু করতে পারবেন।

এফএ/এএসএম