দেশজুড়ে

খরচ বাড়ায় কমছে লালি গুড়ের উৎপাদন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগর। শীতকালে কদর বাড়ে এ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের উৎপাদিত আখের লালি বা তরল গুড়ের। বংশ পরম্পরায় কয়েক যুগ ধরে উপজেলায় অর্ধশতাধিক পরিবার মহিষ দিয়ে আখ মাড়াই করে লালি তৈরি করে আসছে। তবে প্রতিনিয়ত উৎপাদন খরচ বাড়ায় এবং আখ চাষ কমে যাওয়ায় এ পেশার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকরা জমিতে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ করছেন। এ কারণে আখ চাষ কম হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত চলে লালি তৈরির কর্মযজ্ঞ। প্রথমে মহিষের চোখ ঢেকে ঘানি টানানোর মাধ্যমে আখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর রস জমিয়ে ছাকনি নিয়ে ছেকে রাখা হয় বড় কড়াইয়ে। পরর্বতীতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগুনে জাল দিয়ে ঘন করা হয় আখের রস। এরপর সেই রস লাল রং ধারণ করলে নামানো হয় কড়াই থেকে। এভাবেই তৈরি হয় মুখরোচক লালি বা তরল গুড়।

কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলার কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আখ চাষ করা হয়। এসব আখের রস থেকে লালি গুড় তৈরি করা হয়। চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। এ উপজেলার জমিতে চাষ করা আখ থেকে অন্তত ১০০ টনেরও বেশি লালি গুড় উৎপাদন হবে আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজারমূল্য এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুর ও বক্তারমুড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার বংশপরম্পরায় বাণিজিক্যভাবে লালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতিবছর শীতের শুরুতে লালি তৈরির কাজ শুরু করে পরিবারগুলো। মূলত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে লালি তৈরি ও কেনাবেচা। প্রতি কেজি লালি বা তরল গুড়ের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা।

কৃষক ও উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই লালি তৈরিতে বাড়ছে খরচ। পাশাপাশি বাজার দরও বাড়ছে। তাই এ পেশা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।

মোহাম্মদ আলী নামে এক কৃষক জানান, এ পেশায় গত বছর শ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরি ছিল ৫০০ টাকা, এবছর আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজের শ্রমিকের মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০ টাকায়। আখের রস সংগ্রহের জন্যে ঘানি টানাতে মহিষ কিনতে হয়েছে অতিরিক্ত দামে। এসব কারণে এবছরও লালি গুড়ের দাম বেড়েছে। অনেকে উৎপাদনও কমিয়ে দিচ্ছেন।

উপজেলার দুলালপুর গ্রামের লালি গুড় উৎপাদনকারী রাকিব মিয়া জানান, তাদের গ্রামে আখ চাষ কৃষি জমিতে চোখে পড়ার মতো ছিল। কিন্তু এখন তেমন আখ চাষ হয় না। পাশাপাশি আখ কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। ঘানি টানার জন্য লাখ টাকা কিংবা তারও বেশি দিয়ে মহিষ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে লালি গুড়ের দাম বাড়ছে। এভাবে সব বাড়তে থাকলে এক সময় লালি বানানোও যাবে না।

Advertisement

সহিদ মিয়া আরেক চাষি জাগো নিউজকে জানান, আমার বাপ দাদারা লালি তৈরি করতেন। এখন আমিও তৈরি করি। এবার তো অবস্থা ভাল না। সব কিছুরই দাম বেশি। আখ তেমন চাষ হয়নি, তাছাড়া সরকারি প্রণোদনাও আখ চাষিদের দেওয়া হয় না। তাই লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ অন্যান্য ফলের চাষ করেন কৃষকরা।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, লালিগুড় তৈরিতে ক্ষতিকর কোনো উপাদান ব্যবহার না করায় সারাদেশে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। আগে প্রচুর পরিমাণে লালি তৈরি হতো। বর্তমানে কৃষকরা জমিতে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ করছেন। আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছেন তারা। এতে করে লালিও কম তৈরি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি আধুনিক জাতের আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করি আগামীতে আখের চাষ ও লালি উৎপাদন আরও বাড়বে।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এনআইবি/জিকেএস