জাতীয়

‘সরকার বেশি লাভ করতে গিয়ে জ্বালানিখাতের সর্বনাশ করেছে’

বিশেষ ঘাটতি বা সংকট সামনে এনে সরকার ফের জ্বালানির দাম বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। রাজধানীজুড়ে যে গ্যাস সংকট চলছে, তা এ ঘাটতিরই অংশ বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

Advertisement

রাজধানীতে চলমান গ্যাস সংকট ও জ্বালানির অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত নেওয়া হয় অধ্যাপক এম শামসুল আলমের।

তিনি বলেন, ‘জ্বালানিখাতে অনেক অযৌক্তিক ও অন্যায় ব্যয় সমন্বয় হয়ে আছে। এটি ধারাবাহিকভাবে সরকারগুলো করে আসছে। সরকার নিজে এ খাতে অযৌক্তিক রাজস্ব আয় করার জন্য ব্যবসা করছে। এমনকি অধিক মুনাফার সুযোগ করে দিচ্ছে ব্যক্তিপর্যায়েও।’

আরও পড়ুন>> রাজধানীতে গ্যাসের জন্য হাহাকার, দিনে জ্বলছে না চুলা 

Advertisement

‘আমি মনে করি, জ্বালানিখাতে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় এবং মুনাফা কমাতে হবে। তেল-গ্যাস বা জ্বালানিখাতকে কোনোভাবেই রাজস্ব আয়ের খাত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। যেসব দেশ জ্বালানিখাতকে রাজস্ব আয়ের খাত হিসেবে বিবেচনা করেছে সেসব দেশেই জনদুর্ভোগ, বিশৃঙ্খলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এখন তাই করছে। রাজস্বের সঙ্গে মিলিয়ে জ্বালানিখাতের উন্নয়ন মানেই অবাস্তব চিন্তা।’

 

জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন হয়। তা না করে সরকার ও ব্যক্তিপর্যায়ে মুনাফা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। সরকার বেশি লাভ করতে গিয়ে জ্বালানি খাতের সর্বনাশ করেছে। এ খাতের যে সমস্যা আছে, তা নিয়ে আমরা বারবার আলোচনা করছি।

 

‘জ্বালানির দাম যত কম রাখা যায় তার জন্য নানান কৌশল নিতে হয়। জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন হয়। তা না করে সরকার ও ব্যক্তিপর্যায়ে মুনাফা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। সরকার বেশি লাভ করতে গিয়ে জ্বালানি খাতের সর্বনাশ করেছে। এ খাতের যে সমস্যাগুলো আছে, তা নিয়ে আমরা বারবার আলোচনা করছি। সরকার নিজেও জানে কীভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে। আমরা জ্বালানিখাতের মেরামত, সংস্কারের কথা বলছি।’ বলেছিলেন, শামসুল আলম।

আরও পড়ুন>> লুটপাটের তথ্য লুকাতে জ্বালানি নিয়ে গণশুনানি তুলে দেওয়া হয়েছে 

Advertisement

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের যে কথা বলেছেন, তা অবাস্তব বলে দাবি করেছেন তিনি। বলেন, ‘এমন ঘোষণা তো বহুবার দিয়েছেন। কীভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করবে? নতুন করে কি গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে সরকার? তার মানে আমদানিনির্ভর করতে হবে। সেক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েই এমন চিন্তা করছে।’

‘এটি তো একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কৌশল হতে পারে না। দামের সমন্বয় না করে এমন কথাবার্তা জনসম্পৃক্ত হয় না, তা আগে প্রমাণ মিলেছে। মূলত, জ্বালানির ওপরই জিডিপি, বিনিয়োগ বা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। সেই জ্বালানির আকাশচুম্বি দাম বাড়িয়ে তো আপনি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন না। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবকিছুর ওপরই প্রভাব পড়ে। উৎপাদন কমে অথবা উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।’

 

বৈশ্বিকভাবে জ্বালানির দাম বাড়ুক বা না বাড়ুক, যে ধরনের ঘাটতি তৈরি করে রেখেছে বাংলাদেশ সরকার, তাতে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি, জ্বালানির দাম ফের বাড়াবে। আমাদের মধ্যে এনিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। নির্বাচনের কারণে হয়তো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। এখন ফের সংকট সামনে এনে জ্বালানির দাম বাড়ানো হবে।

 

‘সরকার মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশকে। অথচ মধ্যম আয়ের দেশ হতে গেলে জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা সবার আগে জরুরি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা টোটালি রাজনৈতিক এবং জনপ্রিয় মন্তব্য। মানুষ এখন গ্যাসের জন্য খাবার খেতে পারছে না, তার জন্য কোনো ঘোষণা নেই, ব্যবস্থা নেই। তার মানে বিশেষ ঘাটতি যে রয়েছে তা চাপা দিতেই এমন কথাবার্তা।’

আরও পড়ুন>> জ্বালানি সংকট দ্রুত উত্তরণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার: প্রতিমন্ত্রী 

রাজনৈতিকভাবে জ্বালানিখাতের সংকট তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার সবই রাজনৈতিক। রাজনীতির বাইরে আপনি কিছুই ভাবতে পারবেন না। কিন্তু এখন আপনাকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই আগে কথা বলতে হবে। এই রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ আছে কতুটুকু? জনগণ তার ক্ষমতার চর্চা করতে পারে কি না? কথা বলার স্বধীনতা আছে কি না? এ বিষয়গুলো আমলে নিয়েই তো আপনাকে রাজনীতি মূল্যায়ন করতে হবে। এখন রাজনীতি মানেই তো ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকা। জনদায় নিয়ে তো কোনো রাজনৈতিক দল ভাবে না। গণতন্ত্র মানে তো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু এই গণতন্ত্র লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিচ্ছে। জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে লুণ্ঠনকারীদের স্বার্থে কাজ করছে এ গণতন্ত্র।’

জনদায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করি, জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। জনগণ চাইলে সরকারের চরিত্র ওল্টাতে পারে। সবশেষে জনগণকেই জাগতে হবে। আমি-আপনি বলে এই পরিস্থিতির সমাধান করতে পারবো না। সরকার নিজে থেকেও সমাধান করে দেবে না। জনগণের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। সরকারকে বাধ্য করতে হবে জনঅধিকার নিশ্চিত করতে।’

সরকার জ্বালানির দাম ফের বাড়াতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে জ্বালানির দাম বাড়ুক বা না বাড়ুক, যে ধরনের ঘাটতি তৈরি করে রেখেছে বাংলাদেশ সরকার, তাতে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি, জ্বালানির দাম ফের বাড়াবে। আমাদের মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। নির্বাচনের কারণে হয়তো দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। এখন ফের সংকট সামনে এনে জ্বালানির দাম বাড়ানো হবে।’

এএসএস/এএসএ/জিকেএস