ভ্রমণ

শীতের রাতে ক্যাম্পিং করতে যান বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত

তীব্র শীত ও সাগরের হিমেল বাতাস উপেক্ষা করে রাতের বেলায় ক্যাম্পিং করতে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ক্যাম্প করে সারারাত খোশ-গল্প, আনন্দ আড্ডায় মেতে উঠছেন তরুণ-যুবকরা। এ সময়ে প্রতি রাতে কয়েকটি গ্রুপ হয়ে সেখানে ছুটে যাচ্ছে অনেকে।

Advertisement

সারাদিনের ব্যস্ততা, নাগরিক কোলাহল কিংবা পড়াশোনাকে বিদায় জানিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা সমুদ্রের পাড়ে ভ্রমণ করেন। তবে বর্তমানে ভ্রমণে যুক্ত হয়েছে নতুন এক মাত্র। হোটেল, মোটেল রাত্রি যাপনে বাড়ছে অনিহা।

আরও পড়ুন: সুসং দুর্গাপুর ভ্রমণে কী কী দেখবেন? 

পর্যটকেরা ঝুঁকছে ক্যাম্পিং এর মোহে। এ যেন প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার আয়োজন মাত্র। রাতের আকাশ, নিস্তব্ধ চারদিক আর ভোরের সূর্যোদয় উপভোগ করতে বাঁশিবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত হতে পারে এ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য উপযুক্ত স্থান।

Advertisement

নীল জলরাশি আর সমুদ্রের গর্জনের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত ক্যাম্পিংয়ের জন্য সেরা স্থান। জানা গেছে, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া নামক স্থানে অবস্থিত।

সমুদ্রপ্রেমীরা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা নিতে এই সৈকতে ক্যাম্পিং করে থাকে। সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ের অপরূপ সৌন্দর্য, রাতে সমুদ্র উপভোগ করতে স্থানটি ক্যাম্পিং এর শীর্ষ তালিকায় আছে।

আরও পড়ুন: মেঘালয় ভ্রমণে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?

বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অন্যতম একটা জায়গার নাম হচ্ছে এই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই সৈকত।

Advertisement

বছরের প্রায় সব সময়ই এখানে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভিড় থাকে। সীতাকুণ্ডে নতুনভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে যোগ হওয়া আরেকটি জায়গা হচ্ছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত।

বন বিভাগের উদ্যোগে সৈকতের শোভা বর্ধনের জন্য আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ঝাউ গাছ লাগানো হয়েছে। এখানে আছে কিছু পিকনিক স্পট। সেখানে সারাদিন ঘুরে-ফিরে কাটানো যাবে।

অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীদের জন্য। সবুজ ঘাসের উপর বসে চারদিকের নিরবতা উপভোগ করা অবশ্যই এক অনন্য রোমাঞ্চ তৈরি করবে।

আরও পড়ুন: ঢাকার আশপাশে কোথায় গিয়ে দেখবেন সরিষা ক্ষেত? 

বিকেলের সূর্য, মেঘেদের ওড়াউড়ি, প্রকৃতির শোভা যে কারও মন ভালো করে দেবে নিমিষেই। একপাশে সমুদ্র অন্যপাশে সবুজের সমারোহ, মন কেরে নেওয়ার মতো সৌন্দর্য। সমুদ্রের পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখার জন্য অনেকেই এখানে ঘুরতে আসেন।

এখন অনেকেই সেখানে যান ক্যাম্পিংয়ের উদ্দেশ্য। বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পিং কিংবা পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে আসার জন্য উপযুক্ত জায়গা এটি। সব রকমের ক্লান্তি দূর করে দেওয়ার জন্য হয়তো এটি একটি উপযুক্ত স্থান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুদের একটি গ্রুপ ক্যাম্পিং করে এ স্থানে। সেই গ্রুপের একজন বাহা উদ্দিন আকিফ। তিনি বলেন, ‘শীতকালে প্রকৃতি অনেকটা শান্ত থাকে। এ সময় ক্যাম্পিং করা বেশ আনন্দদায়ক। তবে যদি শীত সামাল দেওয়ার যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া যায়।’

আরও পড়ুন: ভারতের যে ৫ স্থানে বেশি ভিড় করেন পর্যটকরা 

‘আমরা বন্ধুরা মিলে বৃহস্পতিবার রাতে তাবু টাঙিয়ে ক্যাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। ওখানকার স্থানীয় কয়েকজন ছেলেকে দিয়ে আমরা এই আয়োজন করিয়েছিলাম। তারা তাবু, আগুন ও খাবার সামগ্রী সংগ্রহ করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে আমরা একসঙ্গে সাগর পাড়ে পৌঁছাই। সেদিন সেখানে আরও কয়েকটি গ্রুপ ক্যাম্প করেছিল। একসঙ্গে কয়েকটি গ্রুপ থাকলে নিরাপদ।’

সেই গ্রুপের আরেক সদস্য আহমেদ রাকিব জানান, তাবু ক্যাম্পিং করে খোলা আকাশের নিছে রাত্রিযাপনের অনুভূতিটা অন্যরকম, যা রোমাঞ্চকরও বটে। হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু ছোট ভাই আর বন্ধুদের নিয়ে চলে গেলাম বাঁশাবাড়িয়ে সমুদ্রের তীরে তাবু ক্যাম্পিং করতে।

ক্যাম্পিং করার জন্য বাঁশাবাড়িয়া বিচ সত্যিই অন্যরকম আদর্শ স্থান, প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের সঙ্গে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে তাবু টাঙ্গিয়ে রাত্রিযাপন, বারবিকিউ, রসের পায়েস আর সবাই মিলে গান-আড্ডায় অসাধারণ একটা রাত ছিল। হাঁড় কাপানো শীত, প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে সাগরের গর্জন এ যেন অন্যরকম অনুভূতি।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন নীলগিরি 

কীভাবে যাবেন?

দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামতে হবে। এই বাজারের মধ্য দিয়েই পশ্চিম দিকে সৈকতে যাওয়ার রাস্তা।

এই সৈকতের মূল আকর্ষণ হচ্ছে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে থাকা সরু লোহার ব্রিজ। প্রায় আধা কিলোমিটার এর মতো সমুদ্রের মধ্যে হেঁটে যাওয়া যাবে সেই ব্রিজ ধরে। রিজার্ভ ভাড়া নেবে ৩০০ টাকা।

জেএমএস/জিকেএস