সকাল সাড়ে ৭টা। নরসিংদী থেকে সৌহার্দ পরিবহনের একটি বাস গাবতলীর দারুস সালাম থানার চেকপোস্টের পাশে এসে থামলো। যাত্রীরা লাগেজ নামাতেই টানাটানি কয়েক যুবকের মধ্যে। লাগেজ সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়েই ২০০ টাকা দাবি। টাকা কেন? জানতে চাইতেই এক যুবক বলে ওঠে “আমরা সিটি কর্পোরেশনের। লাইন মারি, লাইনে ১০০ টাকা দিতে হবে। আর বকশিস ১০০ টাকা।” যাত্রী সোহান সরকার অগত্যা ঝামেলা না করে এক রকম বাধ্য হয়েই ১৫০ টাকায় নিস্তার পান। তবে এখানেই শেষ নয়, এ রকম অসংখ্য যাত্রীর কাছ থেকে সিটি কর্পোরেশনের নাম করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।একই ধরনের চাঁদাবাজির শিকার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজবাড়ি জেলায় প্রায়ই যাতায়াত করতে হয় তার। কিন্তু সব সময়ই তাকে এই হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া গত সোমবার (৪ এপ্রিল) সকালে চাচাতো ভাই ওয়াদুদ ঢাকায় আসে। সে দিনও বাস থেকে নামার পরই কয়েক যুবক চাঁদা দাবি করে। আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, কিসের জন্য চাঁদা দিতে হবে জানতে চাইলে তারা বলে, আমরা সিটি কর্পোরেশনের লোক। লাগেজ নামাতে হলে আমাদের মাধ্যমে নামাতে হবে। এ জন্য লাগেজ প্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। আর বকশিস যা দেন। রিসিভ কোথায়? উত্তরে যুবকরা বলেন, রিসিভ লাগবে না। এখানে কেউ রিসিভ চায় না। জাগো নিউজকে আব্দুর রাজ্জাকের বন্ধু ওয়াদুদ বলেন, পরিস্থিতি বুঝে যে পুলিশকে বলবো সে উপায়ও নেই। সকালেও এখানে পুলিশ থাকবে না? পুলিশ সদস্যদের না পেয়ে অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে ঝামেলা না করে টাকা চলে আসি।একই অভিযোগ দিনাজপুর থেকে আসা মালেকা ইয়াসমিনের। মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় আসতে দারুস সালামে সকাল বেলা কয়েক যুবকের চাঁদাবাজির শিকার হন তিনি। পরে ২৫০ টাকা দিয়ে নিস্তার পান।জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বাস থেকে নেমে লাগেজ বের করতেই টানাটানি, কে কোনটা নেবে। দেখে বোঝার উপায় নেই কে ছিনতাইকারী আর কে চাঁদাবাজ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাবতলী শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির কয়েক সদস্যের ইশারায় চলছে এই অভিনব চাঁদাবাজি। তবে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান তারা।ঢাকা বাস-ট্রাক অনার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরণের অভিযোগ তিনি এর আগে কখনো পাননি। তার কোনো পরিবহনের কেউ এ ধরণের ঘটনায় জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি চললেও বিষয়টি জানেন না কর্পোরেশন কর্মকর্তারা। যোগাযোগ করা হলে কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের চোখ যেন কপালে উঠার জোগাড়।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (মিরপুর) গুল্লাল সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনে এভাবে ট্যাক্স কিংবা চাঁদা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তাও আবার রিসিভ ছাড়া। চিন্তাই করা যায় না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।জেইউ/আরএস/পিআর
Advertisement