জয়পুরহাটের চারপাশ মৌমাছির গুঞ্জন আর সরিষা ফুলে সেজেছে নতুন রূপে। শীত মৌসুমে জেলার প্রায় প্রতিটি ফসলের মাঠ এখন সরিষা ফুলের দখলে। অন্যের সরিষা ক্ষেতকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্থানে মৌবাক্স স্থাপন করে মধু আহরণ করছেন অনেক মৌচাষি। মৌচাষে একদিকে লাভবান হচ্ছেন মৌয়াল, অপরদিকে ফুলের কৃত্রিম পরাগায়নে ফলন বাড়ছে চাষিদের। ব্যয় ও সময় কম লাগায় সাধারণ চাষিরা সরিষায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলার ক্ষেতলালের তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নের বিলের ঘাট টু জামালগঞ্জ চারমাথা রাস্তার পাশে এ চিত্র দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা।
Advertisement
সরেজমিনে জানা গেছে, ক্ষেতলাল উপজেলার তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নের বিলের ঘাট টু জামালগঞ্জ চারমাথা রাস্তার দুপাশে মধু সংগ্রহ করছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত খোরশেদ এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শাহানুর। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন তারা। এরপর এসব মধু স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেন।
আরও পড়ুন: হলুদ ফুলের বুকে মৌমাছির আনাগোনা
মৌচাষি শাহানুর ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৮-৯ বছর ধরে মধু সংগ্রহ করছি। এ বছর দুটি সাইটে কাজ চলছে। জয়পুরহাটের পুরানাপৈল একটি সাইটে কাজ করছি। এখানে প্রায় ২০ দিন ধরে মধু সংগ্রহ করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ মণ মধু সংগ্রহ করতে পেরেছি। এ মধু ৪০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করছি।’
Advertisement
মৌচাষি খোরশেদ বলেন, ‘মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে তৈরি প্রায় ১০০টি বাক্স বসিয়েছি। প্রতিটি বাক্স থেকে ৬-৭ কেজি মধু পাই। গত ২০ দিন ধরে সবগুলো বাক্স মিলে ১৫-১৬ মণ মধু সংগ্রহ করেছি। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’
জামালগঞ্জের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার পাশে মধু সংগ্রহ করা দেখে বাইক থামিয়ে মধু কিনলাম। এখানে একদম প্রাকৃতিক খাঁটি মধু পাওয়া যায়। দামেও কিছুটা কম। তাই একবারে বেশি করে কিনে নিয়ে যাবো।’
আরও পড়ুন: হলুদের সমারোহে পাল্টে গেছে সাতক্ষীরার দৃশ্যপট
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। তবে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষককে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে এ বছর ১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।
Advertisement
উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়ক হয়। ফলে সরিষার ফলনও বেশি হয়।’
জয়পুরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ১০০ কৃষককে পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছি। বিগত দিনে মৌচাষের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। মৌচাষ করে তারা যেন আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।’
এসইউ/জেআইএম