গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিক্ষক না হয়েও স্ত্রীকে শিক্ষক বানিয়ে ‘নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তরণ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে। তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি, কেরানি বা লাইব্রেরিয়ানও এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সাল থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আলোকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সাত দিনের এ প্রশিক্ষণ। দুদিন প্রশিক্ষণের পর মাঝখানে চারদিন বিরতি দিয়ে তা চলে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন কোন কোন শিক্ষক তার একটি তালিকা গত ১৬ ডিসেম্বর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়ালে সেঁটে দেওয়া হয়। শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের তালিকায় ৫৮ নম্বর ক্রমিকে মো. সাজু মিয়া এবং ৫৯ নম্বর ক্রমিকে রেখা বেগম নামের মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষকের নাম রয়েছে। প্রশিক্ষণের স্থান ছিল সুন্দরগঞ্জ মহিলা কলেজের ১০২ নম্বর কক্ষ। কিন্তু সব শিক্ষকের নামের পাশে ফোন নম্বর উল্লেখ থাকলেও নেই কেবল ওই দুই শিক্ষকের। স্কুলের প্যাডে প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায়, ওই শিক্ষককে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধান শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাজু মিয়াকে ওই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে সবাই চিনলেও রেখা বেগম নামের ওই শিক্ষককে কেউই চেনেন না। রেখা নামের ওই শিক্ষিকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী। ক্লাসে পাঠদান করা তো দূরের কথা, একদিনও স্কুলে আসেননি তিনি। গত কয়েক মাসের হাজিরা খাতা ঘেঁটে দেখা যায়, তাতে নেই কোনো সই। উপস্থিত ছিলেন না প্রশিক্ষণের পর নতুন বছরের গত দুই সপ্তাহেও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত রেখা বেগম নামের কোনো শিক্ষককে দেখেননি কেউ। এমনকি নামও শোনেননি তার। প্রশিক্ষণের তালিকায় হঠাৎ ওই শিক্ষকের নাম দেখে হতবাক হয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে রেখা বেগম নামের ওই ‘শিক্ষকের’ সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গেলে জানা যায়, তিনি পরিবারসহ বিভাগীয় শহর রংপুরে থাকেন।
কথা হয় মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রেখা বেগম আমার স্ত্রী। তাকে ২০১৬ সালে লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়েছি। তাকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সবাই জানে। এজন্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। লাইব্রেরিয়ান ও কেরানিরাও এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে মীরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। রেখা বেগম লাইব্রেরিয়ান পদে আছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে বেতন না পাওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান না করে কেউ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন না। তিনি যদি শিক্ষক না হয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
শামীম সরকার শাহীন/এসআর/জিকেএস