রাজশাহী প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে পড়বে কালাই রুটির কথা। রাজশাহী আর কালাই রুটি যেন একই সূত্রে গাঁথা। যদিও কালাই রুটির আদি নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। জেলার অলি-গলিতে এ রুটি পাওয়া যায়। তবে কালাই রুটি শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রাজশাহী বিভাগে। শুধু রাজশাহী উপশহরেই পাশাপাশি তিনটি কালাই রুটির বড় রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
Advertisement
জানা যায়, একসময় শ্রমজীবী মানুষের খাবার ছিল এ রুটি। ধান কাটা বা এ ধরনের কাজের পর লবণমিশ্রিত একটি রুটি খেয়ে পানি পান করেই অনেকক্ষণ কাজ করা যেত। তবে কালের পরিক্রমায় এ রুটি সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ থেকে সর্বসাধারণের খাবার হয়ে উঠেছে।
রাজশাহীতে শীতের সময় রাস্তার পাশে অস্থায়ী ভাবে অনেক কালাই রুটির দোকান বসে। শীতের সময়েই কালাই রুটি বেশি খায় মানুষ। সন্ধ্যার নাস্তা কিংবা রাতের খাবার হিসেবেও খাওয়া হয়। যদিও রেস্টুরেন্ট মালিকরা জানান, শীতের সময় বেশি বিক্রি হলেও রেস্টুরেন্টে সারাবছরই কালাই রুটির চাহিদা থাকে।
আরও পড়ুন: এক কাপ কফির দাম প্রায় ২ লাখ টাকা
Advertisement
কালাই রুটির দাম ৩০ টাকা পিস। তবে স্পেশাল কালাই রুটি নিলে দাম পড়বে ৫০ টাকা। স্পেশাল রুটির সঙ্গে যোগ হয় আরও কিছু। তাই দাম বেশি। তবে রুটির সঙ্গে মরিচ ও বেগুন ভর্তা ফ্রি। আরও পাওয়া যায় আলু ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, ধনিয়া ভর্তা। হাঁসের মাংসের সঙ্গেও দারুণ লাগে কালাই রুটি। দাম ১২০ টাকা বাটি। এছাড়া গরুর মাংস ১৪০ ও গরুর বট (ভুড়ি) ১০০ টাকা বাটি।
রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াজ ও জাহিদ বলেন, ‘কালাই রুটি খেতে ভদ্রার মোড় থেকে রিকশা নিয়ে চলে এলাম উপশহরে। তিনটি দোকানেই যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বাহিরেও চেয়ার-টেবিল পেতে বসা অনেকেই। আমরা একটি ফাঁকা টেবিল দেখামাত্রই বসে পড়লাম।’
গৃহিণী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘কালাই রুটি সাধারণত গমের রুটির চেয়ে অনেক পুরু এবং বড় হয়। এর একটা খেলেই পেট ভরে যায়। তবে মেশিনে তৈরি আটা দিয়েও কালাই রুটি বানানো যায়। তবে শিল পাটা বা যাঁতায় পিষ্ট আটা দিয়ে কালাই রুটি বানালে স্বাদ বেশি হয়।’
আরও পড়ুন: সুন্দরীদের চড়-থাপ্পড় খেতে হয় যে রেস্তোরাঁয়
Advertisement
স্থানীয় রেস্টুরেন্ট কালাই বাড়ির মালিক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে কালাই রুটির দোকান দিয়েছি। ফুটপাতেই এ রুটি অনেকে খায়। রেস্টুরেন্টেও বেচা-বিক্রি খারাপ না। দিনে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।’
রুটি তৈরির কারিগর লোকমান হোসেন বলেন, ‘কালাই রুটি বানাতে দরকার মাসকালাইয়ের গুঁড়া ও আতপ চালের আটা। স্বাদমতো লবণ ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে খামি তৈরি করতে হয়। খামি থেকে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়। এরপর আটা নিয়ে গোলাকার করা হয়। দুই হাতের তালুতে রেখে বিশেষ কায়দায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বড় রুটি বানানো হয়। রুটিকে মাটির তাওয়ায় সেঁকে গরম করা হয়। রং বাদামি হলে নামিয়ে পরিবেশন করা হয়।’
এসইউ/জিকেএস