‘যতক্ষণ রিকশা চালাই, ততক্ষণ শরীরে শীত লাগে না। গরমের কাপড়ও গায়ে রাখা লাগে না। কিন্তু যাত্রী নামিয়ে যখন আবার যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে হয়, তখন হাড় কাঁপানো শীত লাগে। আবার রাতে ফুটপাতে পলিথিন বিছিয়ে গায়ে কাঁথা দিয়ে ঘুমাতে গেলে সারারাত শরীর গরম হয় না। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন কষ্টে দিন কাটছে।’
Advertisement
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আলাপকালে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন আনুমানিক ৪৫ বছর বয়সী রিকশাচালক সুমন মিয়া।
রংপুরের বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ‘চার বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। অন্যান্য বছর শীতের শুরুতেই অনেকে রাতে কম্বল বিতরণ করতো। কিন্তু এবার কারও দেখা নেই। এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে এক টুকরো গরম কাপড় পাইনি। নিজের সামর্থ্য না থাকায় কিনতেও পারছি না। দিনে যা ইনকাম করি সপ্তাহ শেষে সংসারের খরচ মেটাতে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।’
গত কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতে সুমনের মতো খেটে খাওয়া মানুষের জনজীবন এমন বিপর্যস্ত। কাজের তাগিদে ঘর থেকে যারা বের হন, তাদের এমন শীতের কবলে পড়তে হচ্ছে। আর নগরের ভাসমান মানুষের দুর্ভোগ তো আরও কয়েকগুণ বেশি।
Advertisement
হাইকোর্টের সামনের ফুটপাতে কয়েকশ ভাসমান মানুষ জীবনযাপন করেন। তাদের প্রায় সবাই ভিক্ষুক। দিনের বেলা ভিক্ষা করে এবং সন্ধ্যার পর সেখানেই সারিবদ্ধভাবে বিছানা পেতে রাত যাপন করেন।
আরও পড়ুন>> ১৩ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে ৮.৮ ডিগ্রি
তাদের একজন জামালপুরের মাজেদা খাতুন (৫৫)। তার স্বামী-সন্তানের কেউ তার সঙ্গে থাকেন না বলে দাবি করেন তিনি।
আলাপকালে মাজেদা বলেন, ‘দিনে ভিক্ষা করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। তবে শুক্রবারে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ টাকা দিয়েই খাবার কিনে খাই। আর রাতে ফুটপাতেই ঘুমাই। তবে রাতে শীতে খুব কষ্ট হয়। ভালো একটা কম্বল কিনলেও রাখার জায়গা নেই। তাই পুরোনো কাঁথা গায়ে দিয়েই ঘুমাই। এভাবেই এ এলাকার ভাসমান মানুষ রাত যাপন করে।’
Advertisement
রমনা কালীমন্দির ফটকের সামনে ফুটপাতে গাছের পাতা, কাগজ, কাঠে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছিলেন চা দোকানি নাজমুল। এসময় আশপাশের আরও কয়েকজন তার সঙ্গে যোগ দেন। নাজমুল বলেন, ‘চায়ের দোকানের সারাক্ষণ পানি ব্যবহার করতে হয়। এতে শীতে হাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন চায়ের কেটলিতে হাত রেখে তাপ নেই। আবার শরীর গরম রাখতে গাছের পাতা, কাগজে আগুন ধরাই।’
দেশে কয়েক দিন যাবৎ দেশে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল দিনাজপুরে। সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সূর্যের দেখাও মেলেনি। সূর্যের দেখা না মেলায় শীত আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এমএমএ/ইএ/জিকেএস