কুষ্টিয়ার খোকসায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার সময় পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর, গরু ও নগদ টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাসহ গত চারদিনে থানায় তিনটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Advertisement
কুষ্টিয়া-৪ আসনের খোকসার জয়ন্তী হাজরা, আমবাড়িয়া, জানিপুর ইউনিয়নসহ ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় নির্বাচন আগে ও পরে কমপক্ষে ২৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জর সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও টিকে থাকার লড়াইয়ের বলি হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।
জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নৌকার সমর্থক সাকিব খান টিপু এবং সদ্যবিজয়ী ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আরিফুল ইসলাম নয়ন গ্রুপ নির্বাচনের দিন থেকে কমপক্ষে পাঁচবার হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িয়েছে। এসময়ে থানায় তিনটি মামলাও রেকর্ড হয়েছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে খোকসার জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের উথলী ও রাধানগর গ্রামে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা করা হয়। বিবদমান নৌকা সমর্থক টিপু ও স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের সমর্থক আরিফুল ইসলাম নয়ন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ট্রাক প্রতীকের সমর্থকরা প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করার জন্য মহিষবাথান মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেন। এসময় নৌকার সমর্থকরা প্রতিপক্ষের হামলা প্রতিহত করতে রাধানগর সমজিদের মাইক থেকে পাল্টা ঘোষণা দেন।
Advertisement
প্রতিপক্ষের লোকেরা উথলী গ্রামে নৌকা সমর্থক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িসহ নৌকার অপর সমর্থক সাবেক ইউপি মেম্বার বদিয়ার রহমান, মোস্তফা সালাম ও কুতুবের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ হামলা ও মামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন নূর জায়েদ। তিনি জানান, রাধানগর ও উথলী গ্রামে পরপর কয়েকটি ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। বুধবার রাত পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাধানগর ও উথলী গ্রামে গিয়ে হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা হয়। তবে গ্রামের কেউ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। গোয়ালের গরু-ছাগল ও নগদ টাকা লুট হয়ে যাওয়ার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক। দেখা গেলো তাকে ঘিরে পরিবার ও গ্রামের নারীরা ব্যস্ত। উঠানে বসিয়ে তার মাথায় পানি দেওয়া হচ্ছে। কেউ বুকে তেল মাখিয়ে দিচ্ছেন।
স্বামীর সেবার ফাঁকে হামলার বর্ণনা দেন শেফালি বেগম। তখনো রাতের খাবার শেষ হয়নি। এসময় হঠাৎ মাইকে ঘোষণা শুনতে পান। এর কিছুক্ষণ পরই তার বাড়ির আঙিনায় ট্রাকের লোকেরা স্লোগান দিয়ে ৪-৫ রাউন্ড গুলি চালান। এসময় তিনি সন্তানদের নিয়ে বাড়ির পাশের আখক্ষেতে আশ্রয় নেন। রাতে পুলিশ এলে তিনি সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরে আর কিছুই অক্ষত পাননি। সোনার গহনা, নগদ দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন হামলাকারীরা।
Advertisement
জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাইকে ঘোষণা দিয়ে ট্রাকের সমর্থকরা হামলা করেছেন। এসময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। হামলার পর থেকে তিনি ও তার লোকেরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
ট্রাকের সমর্থক মিজানুর রহমান মিজানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিপক্ষ নৌকার সমর্থকরা তার বাড়িতে হামলার জন্য মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেন। তার বাড়ির নারীরা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে পাল্টা আক্রমণ চালালে নৌকার সমর্থকরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ও নৌকার সমর্থক সাকিব খান টিপু এবং ট্রাক প্রতীকের সমর্থক আরিফুল ইসলাম নয়নের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
খোকসা থানার ওসি আন নূর জায়েদ বলেন, বুধবার রাতের হামলার ঘটনায় নতুন একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম