দেশজুড়ে

কৃষিজমির মাটি কেটে রাস্তা বানাচ্ছেন ঠিকাদার

মাদারীপুরের কালকিনির বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের পরিপত্তর গ্রামে কৃষকদের ব্যক্তিগত জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাস্তার কাজে মাটি নেওয়ায় ফসলি জমি এখন খালে পরিণত হয়েছে। এতে করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

Advertisement

একাধিক সূত্রে জানা যায়, কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের পরিপত্তর গ্রামে ভেকু মেশিন দিয়ে মিলন আকন, মুজাফ্ফর আকন, মোশারফ আকন, শাহ আলম হাওলাদারসহ ১৫ থেকে ২০ জন কৃষকের ব্যক্তিগত ফসলি জমির মাটি কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তা। একাজে বাধা দিলে কৃষকদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বহু গাছপালা কেটে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কাজ করা হচ্ছে। কৃষকরা বাধা দিলে মামলা ও হামলার হুমকি দিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাবুল আকন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

কালকিনি উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, এমএসআরডিপি প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর-শরীয়তপুর-বরিশাল জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পে ১২০০ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। যেখানে মাটি ভরাটে ব্যয় ধরা হয় ১৫ লাখ টাকা। পিরোজপুরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইএফটিই-ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট মাসে শুরু হয় এই প্রকল্পের কাজ। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে।

কৃষক শাহ আলম হাওলাদার বলেন, নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমার জমির একশোর উপরে গাছ কেটেছে ঠিকাদারের লোকজন। ফসলি জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তায় দিয়েছে। বাধা দেওয়ার পরও আমার কথা শোনেনি। বাবুল আকন নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটেছেন। এখন বোরো আবাদের সময়, কিন্তু জমিতে পানি থাকায় চাষাবাদ করতে পারছি না। আমরা এতে করে বিপদে পড়েছি।

Advertisement

ভুক্তভোগী আরেক কৃষক মিলন আকন বলেন, সরকার থেকে একটি রাস্তা বরাদ্দ হয়েছে। রাস্তা নির্মাণে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাস্তার কাজে মাটি বাইরে থেকে আনার কথা। অথচ আমাদের কৃষকের জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে ঠিকাদার। আমাদের নিজস্ব জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা নির্মাণ, সেটাতো টেন্ডারে নেই। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। কী করবো বুঝতে পারছি না। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।

আরেক কৃষক মুজাফ্ফর আকন বলেন, কৃষকরাতো এমনিতেই অসহায়। ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় হুমকি-ধামকির শেষ নেই। জোর করে ফসলি জমি থেকে মাটি নিয়েছে। এছাড়াও গাছপালা কেটে ফেলেছে। এর ক্ষতিপূরণ চাই, মাটি ভরাটও চাই। ভুক্তভোগী কৃষক মোশারফ আকন বলেন, রাস্তা নির্মাণে ৫শ’র ওপর গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিজস্ব জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা করছে। অথচ সরকার মাটি ভরাটের জন্য আলাদা টাকা বরাদ্দ রেখেছে। তাহলে আমাদের জমির মাটি কেন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে আমাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা এই অনিয়ম বন্ধসহ আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই। জমি ভরাট চাই।

মাদারীপুর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই দিনে দিনে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। তারপর কৃষকের জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ এটা গুরুতর অপরাধ। শুনেছি কৃষকদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আবেদন, এই ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ঠিকাদারের প্রতিনিধি বাবুল আকনের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভি করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Advertisement

কালকিনি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, এলাকার মানুষকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার মাটি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু কারো ফসলি জমি নষ্ট করে এলাকার মানুষের ক্ষতি করা যাবে না। রাস্তা নির্মাণ করার বিষয়টি আমাকে কয়েকজন অবগত করেছেন। আমি ঠিকাদারকে বলে দিয়েছি বিষয়টি সমাধান করার জন্য।

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, কৃষি জমি এভাবে নষ্ট করার এখতিয়ার কারো নেই। তাই এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে। পরিদর্শন শেষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এফএ/জিকেএস