ভারতের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং বর্তমানে দেশটির সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির দুই দিনের সৌদি আরব সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তার এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক মদিনা সফর’ বলে উল্লেখ করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
Advertisement
সফরকালে মসজিদ-এ-নববী, জাবাল-ই-উহুদ এবং মুসলিমদের প্রধান ইবাদতখানা হিসেবে পরিচিত মসজিদ এ-কাবা পরিদর্শন করেছেন স্মৃতি ইরানি। এই সফরের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক টুইটে তিনি বলেছেন, এই সফর ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্কের প্রতিফলন।
আরও পড়ুন>> তুষারে ঢেকে গেছে সৌদির তাবুক পাহাড়
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো অমুসলিম প্রতিনিধি দলকে মদিনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও এ দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
Advertisement
সৌদি আরবের পর্যটন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট ‘ভিজিট সৌদি’র তথ্য অনুযায়ী, কোনো অমুসলিম মক্কা এবং মদিনার পবিত্র মসজিদে (মসজিদ-এ-নববী এবং মসজিদ আল-হারাম) প্রবেশ করতে পারেন না। কিন্তু মসজিদগুলোর আশপাশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
স্মৃতি ইরানির সৌদি সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ?ভারতের সংখ্যালঘু সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দু’দিনের সরকারি সফরে গত রোববার (৭ জানুয়ারি) সৌদি আরবে যান। তার এই সফর ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কোন্নয়নের কূটনৈতিক মিশনের অংশ।
স্মৃতি ইরানির সফরসঙ্গী হিসেবে প্রতিনিধি দলে ছিলেন ভারতের জুনিয়র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভি মুরালিধরনও। জেদ্দায় অবতরণের পর ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি মদিনায় যায়।
Undertook a historic journey to Madinah today, one of Islam's holiest cities included a visit to the periphery of the revered Prophet's Mosque, Al Masjid Al Nabwi, the mountain of Uhud, and periphery of the Quba Mosque – the first Mosque of Islam. The significance of the visit to… pic.twitter.com/WgbUJeJTLv
Advertisement
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই সফরে স্মৃতি ইরানি ২০২৪ সালের হজ সম্পর্কিত একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই করেছেন। চুক্তির আওতায় ২০২৪ সালের হজের সময় ভারত থেকে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন মুসলিম হজ করতে সৌদি আরবে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন>> এবারের হজে থাকছে না কোনো বিধিনিষেধ
স্মৃতি ইরানি ভারতীয় হজযাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে হজ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। একইসঙ্গে, ওমরাহ পালন করতে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
এছাড়া সৌদি আরবে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক এবং সেখানে থাকা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
বিবিসি খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো ভারতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে। এছাড়া সৌদি আরবে বিভিন্ন খাতে ২৫ লাখের মতো ভারতীয় নাগরিক কাজ করছেন।
আরও পড়ুন>> হিজরির বদলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করলো সৌদি সরকার
স্মৃতি ইরানি মদিনায় থাকার সময় মসজিদ এ-নববীর আশপাশের বেশ কিছু ছবি টুইট করেছেন। ভারতীয় এই প্রতিনিধি দলটি উহুদ পর্বত এবং মসজিদ-এ কাবাও পরিদর্শন করেছে।
সৌদি আরবে অমুসলিমরা কোথায় যেতে পারেন না?সৌদি আরবের পর্যটন বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ভিজিট সৌদি’তে বিদেশি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, মক্কা ও মদিনার পবিত্র শহরগুলো কেবল মুসলিম পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত। এই শহরগুলোতে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম হাজি সফর করে থাকেন।
সৌদি আরবে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মক্কা ও মদিনার কেন্দ্রীয় শহরে ধর্মীয় স্থানগুলোতে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সৌদি সরকার।
আরও পড়ুন>> লুকিয়ে মক্কায় প্রবেশ ইসরায়েলি সাংবাদিকের, ব্যবস্থা নিচ্ছে সৌদি
কিন্তু ‘ভিজিট সৌদি’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ দুটি পবিত্র শহরের মাঝামাঝি এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেগুলো স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এবং সেগুলো সবার জন্যই উন্মুক্ত।
সৌদি আরবের ভি ভিসা (অভিবাসন সম্পর্কিত নয় এমন নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, অমুসলিমদের মদিনায় ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও মসজিদ-এ-নববীর পবিত্রতা রক্ষায় মসজিদ ও তার প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অমুসলিমরা সাধারণত সৌদি আরবের ধর্মীয় স্থানগুলো; যেমন- মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, অমুসলিমরা মক্কার প্রধান মসজিদের বাইরের এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি তাদের দেওয়া হয়নি।
সেক্ষেত্রে ধর্মীয় কোনো স্থানে ভ্রমণের পরিকল্পনার আগে সে স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও শর্তাদি আগে থেকে জেনে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
সৌদি আরবে থাকা যুক্তরাষ্ট্র মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩০ মে একজন ইসরায়েলি ইহুদি সাংবাদিককে মক্কায় প্রবেশে সহায়তার অভিযোগে ২৩ জুলাই মক্কা পুলিশ এক সৌদি নাগরিককে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মক্কায় অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ সংক্রান্ত আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের ১৮ জুলাই ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল থার্টিন নিউজ ১০ মিনিটের একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, একজন ইসরায়েলি সাংবাদিক মসজিদ আল-হারামের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং তিনি আরাফাত পর্বত বেয়ে উঠছেন।
ওই ঘটনায় সৌদি নাগরিকদের পাশাপাশি গোটা মুসলিম বিশ্বের মানুষ অনলাইনে ক্ষোভপ্রকাশ করেন।
নেট দুনিয়ায় আলোচনার ঝড়সৌদি আরবে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন ব্যবহারকারীরা।
কিরণ ভাট নামে একজন এই ঘটনাকে ভারত-সৌদি আরবের মধ্যকার কূটনীতিক সম্পর্কের নতুন উচ্চতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে, অনেকে মদিনায় তাদের অবস্থানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। স্মৃতি ইরানি হিজাব না পরে ধর্মীয় স্পর্শকাতর স্থানের আশপাশে ঘুরে বেড়ানো নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন কেউ কেউ।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাদের কেন মদিনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হলো।
আবার, অনেক ব্যবহারকারী স্মৃতি ইরানির এই সফরের প্রশংসা করেছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/