পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন বিমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমান।
Advertisement
তিনি বিএসইসির কাছে সোনালী লাইফের বিমা গ্রাহকদের জমা করা প্রিমিয়ামের টাকা আত্মসাৎসহ পরিচালকদের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম স্থগিত করারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) বিএসইসির কাছে পাঠানো এক আবেদনে তিনি এ দাবি জানান। চিঠিতে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালকদের ২৪ ধরনের অপরাধের তথ্য তুলে ধরেছেন মীর রাশেদ বিন আমান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অধিকাংশ পরিচালক কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্য হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানটির একক কর্তৃত্ব ভোগ করছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: তথ্য গোপন করে চেয়ারম্যানের মেয়েকে সিইও বানানোর চেষ্টা
সেখানে বলা হয়েছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যানের দুর্নীতি তদন্তের জন্য একটি অডিট ফার্মকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। তবে অডিট কার্যক্রম ২০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করা হয়েছে, যেন এই সময়ে তিনি তার অবৈধ কার্যক্রম ও দুর্নীতির প্রমাণপত্র গায়েব করে ভুয়া প্রমাণপত্র তৈরির সুযোগ পান।
এছাড়াও চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের অন্যান্য পরিচালক এই অডিট কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য তাকে (মুখ্য নির্বাহী মীর রাশেদ বিন আমান) অফিসে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এবং তার চেম্বারের লক পরিবর্তনসহ কোম্পানির ই-মেইল আইডি ও আইআরপি লগইন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যানের সই করা বিভিন্ন বিলের মাধ্যমে হিসাব বিভাগ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান তার নিজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে চেক ইস্যু করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত চেয়েছেন রাশেদ বিন আমান।
Advertisement
যেসব অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে:অবৈধভাবে ও বিনা অর্থে কোম্পানির শেয়ারের মালিক হওয়া, অবৈধ জায়গার ওপর রাজউকের অনুমোদন ছাড়া ভবন অধিক দামে বিক্রি করা, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত খরচ বহন করা, অতিরিক্ত অফিস ভাড়া প্রদান, ইম্পেরিয়াল ভবনের বিদ্যুৎ বিল প্রদান, ইম্পেরিয়াল ভবনের পানির বিল প্রদান,হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো, পরিবারের সদস্যদের প্রতি মাসে বেতন প্রদান, পরিবারের সদস্যদের প্রিমিয়ামের টাকা সোনালী লাইফ থেকে প্রদান, ড্রাগন সোয়েটার কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন সোনালী লাইফ থেকে প্রদান, গ্রুপ বিমা পলিসির টাকা আত্মসাৎ, ঘোষিত লভ্যাংশের বাইরে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ গ্রহণ।
আরও পড়ুন: বন্ধ হতে পারে এক ডজন বিমা কোম্পানির ব্যবসা
এছাড়াও পরিচালকের ব্যক্তিগত খাবার বিল গ্রহণ, পরিচালকের ব্যক্তিগত বিলাসিতা ও মনোরঞ্জনের বিল গ্রহণ, পরিচালকের ব্যক্তিগত গাড়ি কোম্পানির টাকায় ক্রয়, পরিচালকের ব্যক্তিগত গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বিল প্রদান, ইম্পেরিয়াল জিমের এসি ক্রয় ও মাসিক জিম বিল প্রদান, পরিচালক হিসেবে অবৈধ কমিশন গ্রহণ, ইম্পেরিয়াল হোটেল বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ, ইম্পেরিয়াল ভবনের লিফট রক্ষণাবেক্ষণ বিল প্রদান, গ্রাহকের জমানো অর্থ থেকে পরিচালকের বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের মাসিক বিল প্রদান, ভবন ক্রয়ের জন্য ডিপোজিটের (এফডিআর) বিপরীতে লোন (এসওডি) করে ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা সুদ প্রদান, সোনালী লাইফের পরিশোধ করা বিদ্যুৎ ও পানির বিলের টাকা ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুছের গ্রহণ এবং পরিচালক না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে টাকা আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম অভিযোগ আনা হয়েছে।
এমএএস/এমকেআর/এমএস