দেশে শিশুদের ডায়াবেটিস আশংকাজনক হারে বাড়ছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেশে শিশুর ডায়াবেটিসের হার শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ চিহ্নিত হয়েছে। ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে দুই সহস্রাধিক শিশু শিক্ষার্থীর ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। শিশুর ডায়াবেটিস বৃদ্ধির নেপথ্যে খাদ্য ও পরিবেশ দূষণ মূল ভূমিকা পালন করছে। বুধবার পবা মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধের আলোকে মূল বক্তব্য রাখেন ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মোজাহেরুল হক, বাংলাদেশ ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবীবুল্লাহ তালুকদার, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, সহ-সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, মো. সেলিম, প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণায় মোট অংশগ্রহণকারীদের ১.৮% ভাগ ডায়াবেটিস রোগাক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। ৩.৪% অংশ গ্রহণকারীর রক্তে ডায়াবেটিস মুখী প্রবণতা পাওয়া যায় অর্থাৎ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের ৫.২% ডায়াবেটিস রোগী ও রোগাক্রান্ত হওয়ার পথে। এই হিসাবকে ভিত্তিমূল ধরে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশে শিশুর ডায়াবেটিসের হার হচ্ছে ৫.২% বলে ধরা হয় বলে জানানো হয়।গবেষণাপত্রে বলা হয়- গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিলো মোট ২১৫২ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ১০৬৪ জন এবং ছাত্রী ছিলো ১০৮৮ জন। গবেষণায় আর্থসামাজিক অবস্থা, দৈহিক উচ্চতা, শরীরের ওজন, বি এম আই, মধ্যবাহুর পরিধি, রক্তচাপ, অভুক্ত অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজমাত্রা মূলতুল্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণায় বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত এতসংক্রান্ত মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়। এছাড়া গবেষণায় প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণার অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিলো ১৩.৩ বছর। এদের বি এম আই (বডি ম্যাস ইনডেক্স) হলো ১৮.৫ এবং মধ্যবাহুর পরিধি ছিলো ১৮.৫ সে. মি। এই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় কম বয়সী শিশুর ডায়াবেটিসের হার বেশি এবং গ্রামের শিশুদের চেয়ে শহরের শিশুরা ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হয়। পারিবারিক আয়ের সঙ্গে ডায়াবেটিসের একটি সরাসরি সম্পর্ক এই গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়। যে সব পরিবারের আয় বেশি সেসব পরিবারের শিশুদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও ততো বেশি। তবে শিশুর লিঙ্গ, বি এম আই এবং মধ্যবাহুর পরিধির সঙ্গে ডায়াবেটিসের কোন সম্পর্কসূত্র এই গবেষণায় পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি স্কুল-কলেজে আবাসিক এলাকায় খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা, শিশুর টিভি, ভিডিও গেম, ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, খাবারের নানাবিধ বিষ ও ক্ষতিকর পদার্থের মিশ্রন ও জেল, বায়ু, মাটি, বৃক্ষসহ পরিবেশ দূষণ বন্ধ ইত্যাদি।এমইউ/জেএইচ/পিআর
Advertisement