একুশে বইমেলা

বইমেলায় থাকুক বইয়ের আধিপত্য

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

Advertisement

অমর একুশে বইমেলা মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী ও বাঙালি সংস্কৃতির স্মরণীয় বার্তা বহন করে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়। বাড়তে থাকে মেলার আকার-আয়তনও। কিন্তু কাগজের বই থেকে ধীরে ধীরে প্রযুক্তির সহায়তায় বইমেলার অনেক সেবা যেমন সহজ হয়েছে; তেমনই কিছু কিছু বিষয়ে বইমেলা তার স্বকীয়তা হারানোর পথে।

আগে বইমেলা যেমন লেখক-পাঠকদের মিলনমেলা ছিল। নতুন বইয়ের জন্য ছিল পাঠকদের অপেক্ষা। সেটি এখন প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। কারণ এখন বইমেলায় নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা যত বাড়ছে, একই সঙ্গে কমছে পাঠকের সংখ্যা। বই হাতে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারই যেন নতুন বই প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠছে। তার সঙ্গে প্রকাশকরাও যেন দিন দিন সৃজনশীল থেকে পরিণত হচ্ছেন শতভাগ বাণিজ্যিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে।

গত কয়েক বছর ধরে বইমেলায় ক্রমশই বাড়ছে খাবার-পানীয়সহ বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানির স্টলের আধিপত্য। বইমেলায় ক্রেতা না থাকলেও খাবারের দোকান ও ফ্রি কফি বুথে জনসমাগম বেশি। যার প্রেক্ষিতে বইয়ের ক্রেতা কম হলেও বাড়ছে মানুষের ভিড়। তবে এতে প্রকাশকরা দ্বিমত পোষণ করছেন। তবে প্রকাশকদের কেউ কেউ বলছেন, অন্যান্য স্টলের অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের চাপে মূল বইপ্রেমীরা মেলা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: সুশৃঙ্খল একটি মেলা দেখতে চাই: চাণক্য বাড়ৈ 

করোনা সংক্রমণের পর থেকে মেলায় বইয়ের ক্রেতাশূন্যতার কথাও জানাচ্ছে প্রকাশনীগুলো। তবে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের করা ‘ফ্রি কফি বুথ’ ও বিভিন্ন ছাড়ের অফারে খাবার-পানীয়ের স্টলে লম্বা লাইন দেখা যায়। মেলা প্রাঙ্গণে পাঠক ও দর্শনার্থীদের চেয়ে বিভিন্ন স্টলের কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি চোখে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকাশক বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এখন শো অফ করার প্রবণতা খুবই বেশি। মেলায় এসে বই কেনার থেকে ছবি তোলা লোকের সংখ্যাই বেশি। সাথে ফ্রি কফি পেলে তো কথাই নেই। কিন্তু টাকা খরচ করে বই কিনতে আগ্রহী মানুষ তুলনামূলকভাবে কম। অনেকে আবার একটি বই কিনে কয়েক ধরনের পোজ দিয়ে ছবি তুলছেন। বইটি তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়, ছবি তোলাটাই যেন আসল।’

প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত কয়েক বছর তা একটু এলোমেলো হয়। তবে মেলা থেকে যেন হারিয়ে যাচ্ছে সেই চিরচেনা বাঙালি সংস্কৃতি। প্রতি বছর কমে যাচ্ছে বইয়ের আধিপত্য। বইয়ের ওপর আধিপত্য করছে খাবার, পানীয়সহ অন্য ভোগ্যপণ্য ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

আরও পড়ুন: বইমেলায় পাঠকের ভিড় দেখতে চাই: কিঙ্কর আহসান 

এ বছরও যথারীতি ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হবে। চলবে ফেব্রুয়ারির শেষদিন পর্যন্ত। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সবকিছুর পাশাপাশি বইও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠুক মানুষের কাছে। বইমেলায় জনসমাগম বাড়ার চেয়ে বাড়ুক পাঠকের সংখ্যা। তাহলেই বইমেলা তার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/জিকেএস