নিজস্ব প্রযুক্তিতে লিফট তৈরি করেছেন ঈশ্বরদীর আমজাদ হোসেন। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিক টেকনিশিয়ান। নিজের তিনতলা ভবনে ওঠানামার জন্য এ লিফট তৈরি করেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে লিফট ব্যবহার করছেন।
Advertisement
আমজাদ হোসেন (৬৩) উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে।
কথা বলে জানা যায়, আমজাদ হোসেন পাবনা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে দুই বছরের ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে আইপিএস, চার্জার লাইট, বৈদ্যুতিক মোটর, ব্যাটারির চার্জার, ফ্রিজের ভোল্টেজ স্ট্যাবেলাইজারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করছেন। একসময় টিভি ও ফ্যান মেরামতের কাজও করেছেন। তিন বছর আগে ঈশ্বরদী পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে এক শতক জমিতে ইলেকট্রিক সামগ্রী বেচাকেনার জন্য একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করেন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠানামার জন্য ভবনের পেছনে দিয়ে একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠানামা করতে অসুবিধা হয়। এছাড়া দোকানের মালামাল ওঠানো ও নামাতেও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এ সমস্যা দূর করতে একটি লিফট তৈরির পরিকল্পনা করেন আমজাদ হোসেন। তবে শুরুতে বিষয়টি এত সহজ ছিল না। প্রায় তিন মাস এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার লিফট তৈরির জন্য একটি কন্ট্রোল বক্স, এক টন ওজন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গিয়ার বক্স, এক কিলোওয়াটের আইপিএস ও এক হর্স পাওয়ারের মোটর তৈরি করেন।
Advertisement
এরপর স্টিলের ওয়্যার, মেটাল স্ট্রাকচার ও কেবিনের জন্য একটি রিপ্লেকা গ্লাস দিয়ে লিফট তৈরির কাজ শুরু করেন ইলেকট্রিশিয়ান আমজাদ হোসেন। প্রায় তিন মাস প্রচেষ্টার পর দোকানের সামনে তিনতলায় ওঠানামার জন্য একটি লিফট তৈরি করতে সক্ষম হন।
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক ভবনটি চারতলায় উন্নীত করা যাবে। এজন্য চারতলা পর্যন্ত ওঠানামার জন্য লিফট তৈরি করি। এখন লিফট দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় চলাচল করছি।
এ লিফটে উঠে একটি সুইচে চাপলে দ্বিতীয় তলায় ওঠা যাবে। সেখানে নামার প্রয়োজন না হলে আরেকটি সুইচ টিপে তৃতীয় তলায় ওঠা যাবে। একইভাবে আবার তৃতীয় তলা থেকে নিচে নামতে হবে। একসঙ্গে তিনজনের বেশি এ লিফটে যাতায়াত করতে পারবেন। একইসঙ্গে এক টন ওজনের মালামাল ওঠানামা করানো যাবে। বিদ্যুৎ না থাকলে লিফট চালাতে জেনারেটের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ লিফট আইপিএস দিয়ে চালানো যাবে।
লিফটটি তৈরিতে যেসব ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে তার সবই তৈরি করেছেন আমজাদ হোসেন। লিফটে ব্যবহৃত একটি কন্ট্রোল তৈরি করতে ৩-৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তবে এটি খুবই স্বল্প খরচে তৈরি করেন আমজাদ। চারতলা ভবনের একটি লিফট সংযুক্ত করতে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে তার খরচ হয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকা।
Advertisement
আমজাদ হোসেন বলেন, এ লিফট আমি নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। এটি নিরাপদ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এখন এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।
তিনি বলেন, আমার উদ্ভাবিত এ লিফট তৈরির বিষয়টি সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জানাবো। পাশাপাশি ইলেকট্রিক প্রকৌশলীদের পরামর্শ নেবো। স্বল্প খরচে নির্মিত এ লিফট যদি তিন ও চারতলা ভবনে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার অনুমতি সরকার আমাকে দেয় তাহলে আমি এটি তৈরি করবো।
ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের ডাকবাংলোর সামনে দিয়ে চলাচলের পথে অনেক পথচারীকে আমজাদ হোসেনের লিফটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। এ লিফট দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।
লিফট দেখতে আসা পথচারী আহমেদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, সড়কের পাশে এমন লিফট দেখে কৌতূহল হলো, তাই দেখতে এলাম। বিষয়টি আমার কাছে খুবই আশ্চর্য লাগছে। ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জাগো নিউজকে বলেন, আমজাদ হোসেনের লিফট তৈরির বিষয়টি আমি শুনেছি। আমার মনে হয় নতুন কিছু তৈরি অবশ্যই গর্বের। এ লিফট বিদ্যুৎ চলে গেলেও আইপিএস দিয়ে চলবে। এটি আধুনিক একটি ব্যবস্থা। আশা করি তার এ উদ্ভাবন সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে পৌঁছাবে।
শেখ মহসীন/এসআর/এমএস