২০২৩ সালে সাগর পাড়ি দিয়ে অনিয়মিত পথে ইতালি পৌঁছেছেন অন্তত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। ২০২২ সালের তুলনায় এটি প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। ওই বছর অবৈধভাবে ইতালি গিয়েছিলেন ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ।
Advertisement
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি স্বীকার করেছেন, ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধ অভিবাসন কমাতে সফল হতে পারেননি তারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে সরকার নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও এ বছর (২০২৩ সাল) আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ইতালির কঠোর পদক্ষেপঅনিয়মিত অভিবাসন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২২ সালের অক্টোবরে ক্ষমতায় আসেন ইতালির ডানপন্থি রাজনীতিবিদ জর্জিয়া মেলোনি। তাই অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা ছিল প্রধানমন্ত্রী মেলোনির মূল লক্ষ্যগুলোর একটি।
আরও পড়ুন>> নতুন বছরেও অবৈধ অভিবাসনের হিড়িক, ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার ২০০ জন
Advertisement
ভূমধ্যসাগরীয় দেশ ইতালির রয়েছে আট হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রেখা। বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রপথে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে ইতালি হয়ে উঠেছে ইউরোপের ঢোকার প্রধান প্রবেশপথ।
গত বছর মধ্য ভূমধ্যসাগর হয়ে উত্তর আফ্রিকা থেকে ইতালি যাওয়ার পথটি ছিল ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিবাসন রুট। এই পথে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ তিউনিশিয়া এবং লিবিয়া থেকে ইতালির লাম্পেদুসা, সিসিলি হয়ে মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে গত এপ্রিলে ছয় মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল মেলোনি সরকার।
আরও পড়ুন>> অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আলবেনিয়ায় পাঠাবে ইতালি
Advertisement
দাবি করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রহণ করে ইতালি এবং তাদের আগমন ঠেকাতে একাধিক বিতর্কিত ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটির সরকার।
সামুদ্রিক টহল পরিচালনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও চুক্তি করেছে ইতালি।
উদ্ধার অভিযানে নিয়ন্ত্রণ আরোপগত বছর একটি ডিক্রি জারি করেছিল ইতালি সরকার। এর মাধ্যমে একই সমুদ্রযাত্রায় একাধিক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত রাখা হয় বেসরকারি সংস্থার উদ্ধারকারী জাহাজগুলোকে। নিয়মভঙ্গের অভিযোগ এনে অনেক জাহাজকে আর্থিক জরিমানা ও আটক করেছে ইতালি।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস এবং সি-আই’র মতো বেশ কয়েকটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী সংস্থা ওই ডিক্রির নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এর ফলে সমুদ্রে আরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
আরও পড়ুন>> ভূমধ্যসাগরে দিনে গড়ে ৮ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হচ্ছে: এমএসএফ
অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়ার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ইতালির। ওই চুক্তির আওতায় লিবীয় উপকূলরক্ষীরা সমুদ্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীবাহী নৌকাগুলোকে আটকাতে পারে এবং লিবিয়ায় ফিরিয়ে নিতে পারে।
এছাড়া, ২০২৩ সালের নভেম্বরে আলবেনিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ইতালি সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, সমুদ্র থেকে উদ্ধারের পর আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইকালে তাদের আলবেনিয়ার আশ্রয় শিবিরে রাখা হবে। অবশ্য দুই দেশ চুক্তিতে সম্মত হলেও আলবেনিয়ার পক্ষ থেকে এটি এখনো চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়নি।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টসকেএএ/