আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সোমবার (৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Advertisement
আপনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন কেবিনেট কবে হচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে হয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি।
নতুন সরকারের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের শপথ কবে হতে পারে? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি আমি বলতে পারবো না।
বিরোধী দল কে হবে আপনার কাছে কি মনে হয়? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী যদি দেখা যায় তাহলে তো লাঙ্গল মার্কা হবে। বাকি স্বতন্ত্ররা থাকবেন। তাছাড়া পরিস্থিতি বোঝা যাবে সামনের রাজনীতি কোন দিকে যায়।
Advertisement
আরও পড়ুন>> শেখ হাসিনাকে ভারত-চীন-রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন
স্বতন্ত্র কি বিরোধী দল হিসেবে থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিষয়ে তো এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত শপথ না হচ্ছে।
নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আমার এলাকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার এলাকায় বলতে পারব স্বতঃস্ফূর্ত, আপনারা অনেকেই ছিলেন আমি দেখেছি। সকাল থেকে কীভাবে মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উৎসুক ছিল এবং খুবই সুষ্ঠুভাবে, বলা যেতে পারে দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে খুবই সুষ্ঠুভাবে ভোটাভুটি হয়েছে। খুবই সুশৃঙ্খলভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি বলেন, যারা পাস করে আসছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। যারা পাস করতে পারেননি তাদেরও একটা প্রচেষ্টা ছিল, তাদের অবদান ছিল।
Advertisement
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন প্রচণ্ডভাবে চাপের মধ্যে ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু ছিল। তার আগে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছিল। বৃহৎ একটি দল বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে। তাদের মধ্যে প্রচণ্ড চাপ ছিল যেটা আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন বক্তব্য আসছে।
নসরুল হামিদ বলেন, কিছুদিন আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে চারজনকে হত্যা করছে- এ বিষয়গুলো কিন্তু খুব খারাপভাবে নিয়েছেন ভোটাররা, ওই দলের ব্যাপারে। এটার খুব বড় একটা রি-অ্যাকশন পড়ছে। এই যে ৪০ শতাংশ দেশব্যাপী ভোট হয়েছে, এটা কিন্তু বড় একটা জিনিস। তাদের (ভোটার) মধ্যে রি-অ্যাক্ট করছে যে এই দলটা প্রত্যেকবার নির্বাচন বর্জন করে এবং একটা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে।
আরও পড়ুন>> নিরঙ্কুশ জয়ে টানা চতুর্থবার ক্ষমতার পথে আওয়ামী লীগ
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন কমিশন খুবই প্রোফেশনাল ওয়েতে পরিচালনা করেছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই, মাঠ পর্যায়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে খুবই সুষ্ঠুভাবে, খুব কড়াকড়িভাবে তারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। এটা ভালো দিক আমি মনে করি।
আগামীতে সরকারের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরবচ্ছিন্ন রাখা। সব প্রবলেম মাথায় রেখে এটাকে (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি) নিরবচ্ছিন্ন রাখা। গ্রাহক পর্যায়ে একটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ, এটা হলো আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমি মনে করি আমাদের মন্ত্রণালয় এটার জন্য প্রস্তুত আছে।
তিনি বলেন, সামনে একটা বড় বিষয় হলো আমাদের দেশের ইকোনমির ধারাবাহিকতা রাখা, মূল্যস্ফীতিকে নিচের দিকে নেওয়া। এ বিষয়গুলো বড় একটা চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ বিশ্বে আবার কী চেঞ্জ আসে, বিশেষ করে জ্বালানি ক্ষেত্রে বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে আমাদের আগামীর প্ল্যান করা উচিত।
ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৪০ শতাংশ ভোট খুবই সন্তোষজনক। এটা ব্যাপক ভোট এই পরিস্থিতিতে। অনেক দেশে তো সাত শতাংশ ভোট পড়ে না। আমরা মনে করি যে পরিস্থিতি হয়েছে ৪০ শতাংশ ইজ বিগ টার্ন, আপনারা খবর নিয়ে দেখতে পারেন। আমার কাছে সকাল থেকে যে খবর এসেছে মোটামুটি সবাই সন্তুষ্ট। আমার এলাকায় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।
আরও পড়ুন>> আওয়ামী লীগ ২২৩, স্বতন্ত্র ৬১ ও জাপা ১১ আসনে জয়ী
বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এখনকার যে ধারাবাহিকতা সেটা রাখা এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানিকে একটা সহনীয় পর্যায় রাখা। এক্ষেত্রে দুইটি বিষয় রয়েছে, একটি হলো গ্রাহক পর্যায়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখা। এটা বড় বিষয়। আর দ্বিতীয়টা হলো ধারাবাহিকতা যে উন্নয়ন হয়েছে সেটা ধরে রাখা। এটা পিছনে কাজ করে অর্থায়ন। সেটা আস্তে আস্তে সহনীয় করে নিয়ে আসতে হবে। এই তিনটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আমি মনে করি, আমরা সেভাবে পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করি আগামী দিনগুলোতে একটা সহনীয় পর্যায়ে যেতে পারবো।
আইএমএফের চাপে নতুন সরকার কি আবার দাম বাড়াবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ বলেন, আমি আগেও বলেছি দাম বাড়ানো বা কমানো বিষয় না, আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেভাবে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম হয়, আমরা সে মেথডে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। একটা পর্যায়ে আমাদের যেতে হতো, সুতরাং সে পর্যায়ে আমরা যাচ্ছি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় শতভাগ আসনের ফলাফল ঘোষণা শেষে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে দলটি টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে।
রোববার দিনগত রাত ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩টি আসন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এ পর্যন্ত ৬১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি এবার পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। যে ২৬টি আসনে তারা আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় পেয়েছিল তার অনেকগুলোতেই জামানত হারিয়েছে।
এর বাইরে আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। এছাড়া বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টি জয় পেয়েছে একটি আসনে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জন, তুলনামূলক কম ভোটারের উপস্থিতি হলেও রোববার মোটাদাগে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। এক প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনের ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় এদিন ভোট হয় ২৯৯ আসনে।
বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই কেন্দ্রগুলোতে গণনা শুরু হয়। কেন্দ্রে গণনার ফলাফল প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পাঠান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। এরই মধ্যে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গণমাধ্যমকে জানান, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে এবারের জাতীয় নির্বাচনে।
এমএএস/বিএ/এএসএম