সাহিত্য

সুমি ইসলামের চারটি কবিতা

সেই তো এলে

Advertisement

সেই তো এলেতবে এত দেরি কেন করলে?একটু আগে এলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?এখন এখানে সন্ধ্যায় আর কবিগান হয় নাবুড়ো অশ্বত্থটার গোড়ায় বসে আর বাউল একতারাতে সুর তোলে নাভরা বর্ষায় নদী আগের মতন আর যৌবন ফিরে পায় না,দোলপূর্ণিমা তিথিতে এখন আর বাঁশির সুর শোনা যায় না,হেমন্তে হাঁসেরা রাত কাটায় না জলাধারে,তোমাকে বিদায় জানানোর পরেসবাই কেমন ঝিমিয়ে গেল।তোমার পথ পানে চেয়ে থাকতে থাকতে একদিন ভোরে লীলাবতীকে বুড়ো অশ্বত্থের ডালে ওড়না পেঁচানো দেখা গেল,এখানের হাওয়াতে এখন লীলাবতীর দীর্ঘশ্বাস নদীর জলে লীলাবতীর চোখের জলবুড়ো অশ্বত্থ গাছটাতে আর সবুজ পাতায় ভরে যায় না,সেখানে শুধু হাহাকার আর অভিশাপ,সেই তো এলে, তবে এত দেরি করে কেন?

****

চুমুর স্বাদ

Advertisement

গতকাল লাবণ্য এসেছিল খোলা চুল আর তাঁতের শাড়িতে যেন সাক্ষাৎ প্রতিমা,তখন ভরা পূর্ণিমাদুজন হেঁটে চলেছি রেললাইনের ওপর দিয়ে বাতাসের সাথে ভেসে আসছে মিষ্টি একটা গন্ধগন্ধটা আমার চিরচেনা, এই গন্ধে আমি তলিয়ে যেতে থাকি সাগরের অতলে,আচমকা সে জানতে চাইলো, ‘বলো তো অমিয়, চুমুর ওজন কত?’উত্তরে বললাম, ‘এভারেস্টের ওজনের সমান’।কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা, আবার বললো, ‘বলো তো অমিয়, চুমুর স্বাদ কেমন?’আমি ওর দৃষ্টিতে দৃষ্টি স্থির রেখে বললাম, ‘সে তো অমৃত’।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো, ‘আসছে ভরা বর্ষায় তৈরি থেকোঝুম বৃষ্টিতে একগুচ্ছ ভেজা কদম নিয়ে হুড তোলা রিকশায় আমরাও চড়বো।’

****

রাতের ট্রেন

রেলের স্লিপারে হাঁটতে হাঁটতে বলেছিলেএকদিন আমারা রাতের ট্রেনে করে হারিয়ে যাবো বহুদূরে অনন্তকাল ধরে ট্রেনটা ছুটে চলবে রাতের নীরবতাকে ভেঙে মাতাল করা শব্দে ট্রেন ছুটে যাবে গন্তব্যহীন ভাবে।একটা একটা করে স্টেশন পেছনে ফেলে ছুটে চলবেশহর থেকে নগরে কখনও বা দুপাশে সবুজ ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে,মাঝরাতে জোনাকি পোকাদের আলোয় ভরে যাবে ট্রেনের কামরা তোমার সিল্কি চুলের মাঝে খেলা করে যাবে দুরন্ত হাওয়া রাতের ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলবে চাঁদটা।সারি সারি গাছ আর দিগন্ত জোড়া সবুজের মাঠ পেছনে ফেলে ছুটে চলবে রাতের ট্রেন,তারপর নাম না জানা কোনো স্টেশনে নেমে পড়বো ভোর হতেই।সেই স্টেশনের পাশ দিয়ে থাকবে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া মেঠোপথটা হবে কৃষ্ণচূড়ার হলুদ রঙের কার্পেট কোমল গালিচা দিয়ে আমরা হেঁটে যাবো,স্টেশনের পাশেই বানিয়ে নেবো ছোট্ট কুঠিরতারপর অনেক অনেক দিন কেটে যাবে একদিন রাতের ট্রেনে করে আবার আমরা নিরুদ্দেশ হয়ে যাবোপেছনে পরে থাকবে লোকালয়, সামনে নিরুদ্দেশ।

Advertisement

****

শেষ চিঠি

তোমার কাছে লেখা এটি আমারঅপ্রকাশিত প্রথম ও শেষ চিঠি।কালির সুগন্ধ এখনও বিদ্যমানভাঁজগুলো এখনো সজীব,খুব একটা মলিন হয়নিকোথাও নেই কোনো ভাঁজ।তোমাকে যা বলতে গিয়েও বলা হয়নি কখনওবলতে গিয়ে বারবার থেমে গেছিজমিয়ে রেখেছিলাম হৃদ মাঝারেএখানে সেইসব জমিয়ে রাখা কথাগুলো যত্ন করে লেখা আছে।আমার কল্পনাবিলাসী মন বারবারযে অবাস্তব ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দিতোতার প্রস্ফুটিত রূপগুলোই এখানে যত্ন করে লেখা।মাঝে মাঝে ওই আকাশটাকেগাঢ় কমলা রঙে সাজাতে ইচ্ছে করে,ঠিক যেন গাঢ় কমলা পাড়ের সাদা শাড়ির মতন।ওই চাঁদটাকে দূর থেকে না দেখেখুব কাছ থেকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।ঠিক যেমন বিড়ালের ছোট্ট বাচ্চাকেকোলে তুলে আদর করার মতন।তোমার কথাগুলো রবীন্দ্রসংগীতের মতনএখনও কানে বাজে,সেই নরম সুরের কথা আজও শোনার জন্য ব্যাকুল।

এসইউ/জেআইএম