বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সাতদিনের আদালত বর্জনের কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আগামীকাল রোববার। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ উপলক্ষে রোববার (৭ জানুয়ারি) সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ায় ওইদিন বিচারাঙ্গনগুলোতেও থাকবে শৈথিল্য। ছুটি থাকায় সাধারণ আইনজীবী থেকে শুরু করে বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই সেদিন আদালতে যাবেন না। কিন্তু তার আগের ছয়দিন কেমন গেল বিএনপি-জামায়াতের ডাকা আদালত বর্জন কর্মসূচি? এ ধরনের কর্মসূচি ঘিরে আইনজীবীদের কেমন সাড়া পেল তারা? এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এক পক্ষের দাবি- কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হচ্ছে। আবার অন্যপক্ষ বলছে, বর্জন কর্মসূচিতে সাধারণ আইনজীবীরা সাড়া দেয়নি, বিচার কার্যক্রমেও কোনো প্রভাব পড়েনি।
Advertisement
বিএনপিসহ তাদের জোট মিত্র ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি ভোটে না থাকায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির বিষয়টি আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে। অন্যদিকে ভোটে না এলেও বিএনপিসহ সমমনারা ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে গত কয়েকদিন ধরেই গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দিতে দেখা গেছে এই দলগুলোকে।
আদালত বর্জনের কর্মসূচি কতটা সফল হলো তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি তুলে ধরছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। বিএনপির আইনজীবীদের দাবি, এসময়ে সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা আদালতে যাননি। তবে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা বলছেন, বিএনপি ছাড়া সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা আদালত বর্জনের ডাকে কোনো সাড়া দেননি। আইনজীবী নেতাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচি দিয়ে তেমন কোনো ফায়দা নিতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত
শুধু তা-ই নয়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘একতরফা’ উল্লেখ করে এবং ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচারের নামে অবিচার বন্ধের দাবি’ নিয়ে ১ থেকে ৭ জানুয়ারি আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। ঘোষণায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টসহ সারাদেশে সব বিচারাঙ্গন বর্জনের আহ্বান জানানো হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন: সারাদেশে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আদালত বর্জন
গত ২৭ ডিসেম্বর সারাদেশে আদালত বর্জনের কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এরপর তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। ওইদিন সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে ডামি নির্বাচন বর্জন, কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনগণের অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং আইনজীবীদের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টসহ সারাদেশে আদালত বর্জনের কর্মসূচি চলছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচি কতটা সফল হয়েছে, এ প্রশ্ন রয়ে গেছে। কর্মসূচি চলাকালে আদালত প্রাঙ্গণে সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি কেমন ছিল, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। তবে আইনজীবী নেতাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচি দিয়ে তেমন কোনো ফায়দা নিতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত।
৩১ জানুয়ারি আদালত বর্জনের শপথ নিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জানান, ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সাতদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগসহ সারাদেশে জেলা আদালত, সেশন আদালত, মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত, মুখ্য জুডিসিয়াল আদালতসহ সব আদালত বর্জন করা হবে। কিন্তু দেখা গেছে, ৭ জানুয়ারি সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি মিলিয়ে এই সাতদিনের মধ্যে তিনদিনই ছিল ছুটির দিন। এছাড়া ভোটের আগের দিন অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ভোটের পর দিন ৮ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত বিএনপি ও সমমনারা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে।
Advertisement
আদালত বর্জনের কর্মসূচি কতটা সফল হলো তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি তুলে ধরছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। বিএনপির আইনজীবীদের দাবি, এসময়ে সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা আদালতে যাননি। তবে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা বলছেন, বিএনপি ছাড়া সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা আদালত বর্জনের ডাকে কোনো সাড়া দেননি।
আদালত বর্জনের বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ বলেছিল, এটি সংবিধান ও নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনাভোটে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ভোট হয়ে যায়। সেখানে বিএনপি দলীয় মাত্র কয়েকজন প্রার্থী বিজয়ী হন।
আরও পড়ুন: সব আদালত বর্জনের শপথ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের
তিনি বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপি। সারাদেশে সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবি ওঠে। সরকারের জনভীতি থাকায় গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের সমাবেশ পণ্ড করে দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারাদেশে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আদালতকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ বলেছিল, এটি সংবিধান ও নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনাভোটে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ
জয়নুল আবেদীন বলেন, জাতি চায় নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, আর ৭ জানুয়ারি একদলীয় নির্বাচন করছে সরকার। এরই প্রতিবাদে সারাদেশে আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবরোধ-হরতাল চলছে। অথচ সরকার এসব আন্দোলনেও দমননীতি প্রয়োগ করছে।
আদালত বর্জনের কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপিপন্থি এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ নিজেরা বোমা মেরে আগুন দিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ অবস্থায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। সারাদেশে বিচার অঙ্গনে এ কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির জাগো নিউজকে বলেন,সরকারদলীয়রা বোমা মেরে ও আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মেরে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ট্রেনে-বাসে আগুন দিচ্ছে এবং মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে উঠেপড়ে লাগেনি। বিএনপি সত্যিকার অর্থেই একটি ‘সন্ত্রাসী দল’। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তারা অগ্নিসন্ত্রাস করছে। সরকারদলীয়দের কে কোথায় আগুন দিয়েছে, তথ্য ছাড়া তা বলা উচিত নয়। যারা এসব বলছেন তারা নিজেরাই সন্ত্রাসের মদতদাতা।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ট্রেনে-বাসে আগুন দিচ্ছে এবং মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে চিহ্নিত করতে উঠেপড়ে লাগেনি। বিএনপি সত্যিকার অর্থেই একটি ‘সন্ত্রাসী দল’। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তারা অগ্নিসন্ত্রাস করছে। সরকারদলীয়দের কে কোথায় আগুন দিয়েছে, তথ্য ছাড়া তা বলা উচিত নয়। যারা এসব বলছেন তারা নিজেরাই সন্ত্রাসের মদতদাতা
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য একসময় আমরাও আন্দোলন করেছি। তবে এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিএনপিই নষ্ট করেছিল, বিচার বিভাগও তাদের হাতেই নষ্ট হয়েছে। তারাই বিচারকদের বয়স বাড়িয়ে ও লোভ-লালসা দেখিয়ে কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে চেয়েছিল, ড. ইয়াজউদ্দিনকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল।
আরও পড়ুন: ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের মিছিল
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি যেটা আছে সেটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। গণতন্ত্রের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস রাখতেই হবে। বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশে এ অবস্থা রয়েছে। সেসব দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নেই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ অংশ নেবে না, এমন ধারণা ‘পাগলের প্রলাপ’। এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, এসময়ের মধ্যে নির্বাচন করতেই হবে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ নির্বাচনবিরোধী কথাবার্তা বলতে পারেন না। যারা এসব বলেন তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি দেশের কোথাও বিচারিক কাজে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ছাড়া সারাদেশে সব আদালতে সাধারণ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি ছিল। আদালত পুরোদমে চলছে। অবকাশ শেষে গত ২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট খুলেছে। ওইদিন আপিল বিভাগ আইনজীবীদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। হাইকোর্ট বিভাগে পুরোদমে বিচার কার্যক্রম চলেছে। আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আদালতে না এলেও তাদের অনেকেই নিজ নিজ জুনিয়রদের পাঠিয়ে মামলার শুনানি করিয়েছেন।
গত ১০ বছরে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে ‘তামাশা’ হচ্ছে। সেই তামাশা বর্জনের অংশ হিসেবে আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেছেন। দেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিবার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না। আদালত বর্জন কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হচ্ছে। পাবর্ত্য জেলাগুলো ছাড়া সারাদেশে সব আদালতে বর্জন কর্মসূচি চলেছে
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ১ জানুয়ারি আদালত বর্জনের প্রথম দিন আমি ঢাকা জেলা জজ আদালতে গিয়েছিলাম আইনজীবীদের (আইনজীবী সমিতি) সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম পুরো আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের পদচারণা। কোথাও আদালত বর্জনের কোনো ছাপ দেখিনি। মানুষ ন্যায়বিচার ও অধিকার পেতে আদালতে আসেন। সেখানে যদি আদালত বর্জনের নামে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের বাধা দেওয়া হয়, সেটা হবে মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি কাজ।
আদালত বর্জনের বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জাগো নিউজকে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে উনার কাযার্লয়ের কয়েকজন আইনজীবী ছাড়া কোনো সাধারণ আইনজীবী আদালতে যাননি। গত ১০ বছরে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে ‘তামাশা’ হচ্ছে। সেই তামাশা বর্জনের অংশ হিসেবে আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেছেন। দেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিবার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না। আদালত বর্জন কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হচ্ছে। পাবর্ত্য জেলাগুলো ছাড়া সারাদেশে সব আদালতে বর্জন কর্মসূচি চলেছে।
আদালত বর্জন ও নির্বাচন ঠেকানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আদালত বর্জনের ডাকে সাধারণ আইনজীবীরা কোনো সাড়া দেননি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে দেশের সব আদালত স্বাভাবিকভাবে চলছে। সাধারণ আইনজীবী বর্জনকারীদের সঙ্গে নেই। আন্দোলনের নামে যারা গাড়িতে আগুন দেয়, মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের মুখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন এবং নির্বাচন বর্জনের কথা মানায় না।
আরও পড়ুন: ১৪ সপ্তাহে বিএনপির ১২৪৯ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড
গত ২৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৭ জানুয়ারি সরকার আরেকটি নীলনকশার পাতানো ডামি নির্বাচনের পাঁয়তারা চলছে। কথিত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য সরকারি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিদ্রোহী, অনুগত প্রার্থীসহ হরেক রকমের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কারা ডামি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে তা-ও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয় আজ্ঞাবহ করেছে, অথবা করায়ত্ত করতে না পেরে সেগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ওপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী ক্র্যাকডাউন করলো। তখন নেতাকর্মীদের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার উপেক্ষিত হলো। যা দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম