পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে মুন্সিগঞ্জ। প্রচারণা শেষ। এখন ভোটগ্রহণের অপেক্ষা। ৬ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলার সংসদীয় আসন সংখ্যা তিনটি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ জেলায় নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে নারী প্রার্থীদের নিয়ে। পুরুষ প্রার্থীদের পাশাপাশি এবার জেলার সবগুলো আসনেই ভোটের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন একাধিক নারী প্রার্থী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৫ জনসহ ৭ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩টি আসনে। এরমধ্যে মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে মূল লড়াইটাই হবে দুই নারীর মাঝে। গ্রাম থেকে গঞ্জে, পাড়াগাঁয়ের অলিগলিতে জোর প্রচারণায় মুখর এসব প্রার্থীরা। নির্বাচিত হলে উন্নয়নের পাশাপাশি নারীদের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি তাদের।
Advertisement
মুন্সিগঞ্জ-১
শ্রীনগর-সিরাজিদখান নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে এবারের নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্রসহ ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন নারী। সোনালি আশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির অন্তরা সেলিমা হুদা, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির দোয়েল আক্তার ও ডাব প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশে কংগ্রেসের নুর জাহানা বেগম।
ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তারা। কেউ বলছেন উন্নয়নের কথা, কেউ দিচ্ছেন নারীদের জন্য কাজ করার আশ্বাস।
Advertisement
মুন্সিগঞ্জ-২
এ আসনে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই দুই নারী প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে। আসনটিতে গত তিনবারের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন এই নারী প্রাথী। তার বিপরীতে ভোটযুদ্ধে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা তাহমিনা। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দুজনই।
মুন্সিগঞ্জ-৩
সদর ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুইজন নারী প্রার্থী। তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী ফারিয়া আফরিন ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী মমতাজ সুলতান আহমেদ। কেটলি প্রর্তীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা না থাকলেও টেলিভিশন প্রতীকের অপর প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ-ঘাট। নির্বাচিত হলে চিকিৎসাসেবার উন্নয়ন ও কৃষিবান্ধব জেলা গড়ার প্রত্যাশা তার।
Advertisement
]
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী অন্তরা সেলিমা হুদা বলেন, আমি আশা করি মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের ভোটাররা আমাকে সুযোগ করে দিবেন। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে আগ্রহী। বিগত নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি ভোটার অনেক কম। আমরা ভোটারদেরকে ভোট দিতে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির দোয়েল আক্তার বলেন, জনগণের মাঝে সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচিত সকল মানুষের জন্য কাজ করবো। আমি যেহেতু নারী, তাই নারীদের বিষয়টি অগ্রাধিকার থাকবে।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহানা তাহমিনা বলেন, মানুষের ভালোবাসা দেখে আপ্লুত আমি। জননেত্রী শেখ হাসিনার চাইতে বড় কেউতো আর আওয়ামী লীগ করে না। জননেত্রী নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার নির্বাচনী প্রতীক ট্রাক। যদি জয়ী হই তাহলে আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করবো। আমি সবাইকে বলেছি গ্রামকে শহরে পরিণত করবো, ট্রাক নিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন গ্রামের সর্বত্র পৌঁছে দেবো। আরও বেশি সড়ক নির্মাণ করবো, সেতু নির্মাণ করবো। জনগণের যে সাড়া পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবো।
একই আসনের নৌকার প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি। করোনার সময় আমরা প্রতিদিন এসেছি। আমার তিনবার করোনা হয়েছিল, তারপরও মানুষের জন্য কাজ বন্ধ করিনি। মুন্সিগঞ্জ দুই আসনের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউশন, পদ্মায় নদীরক্ষা বাঁধ করেছি। মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। সবচাইতে বড় বিষয় এ আসনে কোনো হানাহানি মারামারি নেই, মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছি। তাই জনগণ আবারো আমাকে, নৌকাকে ভোট দেবে।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের বিএনএফ প্রার্থী মমতাজ সুলতানা আহমেদ বলেন, জয়ের কথা যদি বলি তাহলে হারজিত তো সবসময় থাকবে। নিবন্ধিত প্রতিটি দলই হেভিওয়েট, কাউকেই ছোট করে দেখতে পারবেন না। জনপ্রিয়তা আজকে আমার নেই কালকে হয়ে যাবে। সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন থাকে। আমার দল আমাকে বলেছে তুমি ফাইট করো, এজন্যই আমি মূল আসনে নির্বাচনে নেমেছি। এ জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আমার ইচ্ছা চিকিৎসা নিয়ে কাজ করবো, যেন মানুষকে সহজে ঢাকামুখো না হতে হয়। এই জেলাটি কৃষিনির্ভর, তাই আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই একটি আদর্শ জেলা হিসেবে মুন্সিগঞ্জকে গড়ে তুলবো।
এবারের নির্বাচনে জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৮ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৫ জন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু জাফর রিপন বলেন, জেলা প্রশাসর সব প্রার্থীর সমান সুযোগ দেবে। তিনটি আসনেই রয়েছে পর্যাপ্ত নজরদারি, ভোটে যে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/জিকেএস