চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে একটি সোনাইছড়া লেক। কোলাহলমুক্ত লেক এলাকায় শোনা যায় পাখিদের অবিরাম কলকাকলী। উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পোলমোগরা গ্রামের এ লেক সোনাইছড়া লেক নামে পরিচিত। স্বল্প পরিচিত লেকটি এখন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের গন্তব্য।
Advertisement
শীতের রাতে লেকের পাড়ে প্রতিদিন তাবু টাঙিয়ে ক্যাম্পিং করছে পর্যটকরা। বিকেলে সেখানে গিয়ে সারারাত কাটিয়ে ফিরছেন পরেরদিন। খোশ-গল্প, হৈ-হুল্লড়, গান আর বারবিকিউ পার্টি করে আনন্দ করছেন তরুণরা। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে দিনের বেলায় সেখানে ছুটে যাচ্ছেন অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
আরও পড়ুন: বিশ্বের একমাত্র দশ তারকা হোটেল
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢল নিয়ন্ত্রণ করে শুকনো মৌসুমের পানি ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয় এ কৃত্রিম লেকের। বারোমাসি পাহাড়ি ছড়ায় বাঁধ দিয়ে জমে থাকা পানি ব্যবহার হয় আশপাশের তিন গ্রামের ৮০ হেক্টর জমির কৃষিকাজে।
Advertisement
২০০৬ সালে স্থানীয় কৃষকরা এ বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। পরে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রাকার সেচ প্রকল্পের আওতায় সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধ ও স্লুইসগেট তৈরি করে ১২ একর আয়তনের এ জলাশয় তৈরি করে। বর্ষায় বৃষ্টির আর শুকনো মৌসুমে ছড়ার পানিতে ভরা থাকে লেকটি।
কথা হয়, সোনাইছড়া লেকে ঘুরতে আসা পর্যটক ফখরুল হাসান ও এনামুল হকের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সোনাইছড়া লেকের নাম এখনো অনেকে শুনেনি। কিন্তু ছোট এ লেকের সৌন্দর্য অতুলনীয়।’
আরও পড়ুন: শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে কোন কোন স্পটে ঘুরবেন?
‘পাহাড়, ঝরনা, ঘন সবুজ বন, লেকের স্বচ্ছ পানি, নানা জাতের পাখির উড়ে বেড়ানো সব মিলে বেড়ানোর আদর্শ জায়গা এটি। এক কিলোমিটার হাঁটা রাস্তার কিছু পথ মাড়িয়ে এলেও লেকের চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখে সে কষ্ট উড়ে গেছে।’
Advertisement
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে ছুটে আসেন ১৫ জনের একটি গ্রুপ। গ্রুপটি লেকের পাড়ে তাবু টাঙিয়ে ক্যাম্পিং করে। বছরের শেষ রাত তারা এখানে উদযাপন করেছেন।
গ্রুপের একজন শাহরিয়ার বলেন, ‘আমার বাড়ি বড়তাকিয়া এলাকায়। শহর থেকে প্রায় সময় আমার বন্ধুরা এখানে বেড়াতে আসে। এবারও তারা এখানে ছুটে এসেছে। সব বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে অনেক আনন্দ করেছি।’
আরও পড়ুন: ডোমখালী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়
জানা গেছে, সোনাইছড়া লেকে ক্যাম্পসাইডে একসঙ্গে পাবেন পাহাড়, লেক ও ঝরনা। একই সঙ্গে দেখা মিলবে হরিণ,বানর,শুকর ও বনবিড়ালের ইত্যাদি। ক্যাম্প সাইডে আর্টিফিশিয়াল কোনো কিছুই নেই, এখানে সত্যিকার অর্থে প্রকৃতির মাঝে থাকার পরিবেশ পান পর্যটকরা।
এখানে একটি গ্রুপ ক্যাম্পিং এর ব্যবস্থা করেন। জনপ্রতি প্যাকেজ ৯৯৯ টাকা। প্যাকেজে যা যা থাকছে- সকালের নাশতায়- ডিম-খিঁচুড়ি, পানি ও চা। সন্ধ্যার নাশতায় থাকবে নুডুলস ও চা-বিস্কুট। রাতের খাবারে ভাত, মুরগির ঝাল ফ্রাই, ডাল, ভর্তা ও কোলড্রিংস।
আর ঘুমানোর জন্য তাবু-মেট, বালিশ, স্লিপিং ব্যাগ। (এক তাবুতে দুজন করে, বড় তাবুতে ৩জন)। একই সঙ্গে এই প্যাকেজের মধ্যেই থাকছে লেকের প্রবেশ ফি। আছে নামাজের ব্যবস্থাও।
আরও পড়ুন: শীতে হিমাচল ভ্রমণে ঘুরে দেখুন জনপ্রিয় ৬ স্পট
ক্যাম্পিংয়ে যে শর্তাবলি ও নিয়মকানুন মানতে হবে
ক্যাম্পিংয়ে কোনো প্রকার মাদকদ্রব্য বহন বা সেবন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। প্রত্যেক ক্যাম্পার তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি বহন করবে।
উচ্চস্বরে চিৎকার বা বড় সাউন্ড বক্সে গান বাজানো যাবে না। যেহেতু এটি প্রাকৃতিক একটি ক্যাম্পসাইড সেহেতু প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
সোনাইছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি ও বারৈয়ারঢালা ন্যাশনাল পার্ক নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. সরোয়ার উদ্দিন বলেন, ‘সোনাইছড়া কৃত্রিম লেক হলেও এর সৌন্দর্য অতুলনীয়। লেকটি পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।’
আরও পড়ুন: দার্জিলিং ভ্রমণে থাকার খরচ কমাতে যা করবেন
‘এখানে পূর্ণ নিরাপত্তায় ক্যাম্প করে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্যাডেল নৌকায় ভ্রমণ করা যায় পুরো লেকে। যাতায়াতের রাস্তাটি সংস্কার করা হলে এটি হবে দেশের পর্যটনের আরেক ঠিকানা।’
কীভাবে যাবেন?
সোনাইছড়া লেকে যেতে হলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে বাসে এসে প্রথমে নামতে হবে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজার। সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে হবে দেড় কিলোমিটার দূরে বড়তাকিয়া রেলস্টেশন।
স্টেশন থেকে হাঁটা পথে এক কিলোমিটার সমতল গ্রামীণ পথ ও পাহাড়ি ছড়া পার হলেই চোখে পড়বে সোনাইছড়া লেকের মনোরম দৃশ্য।
জেএমএস/জেআইএম