আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের ডামাডোলে সারাদেশে বইছে ভোট উৎসব। গত দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ- উদ্দীপনা তুলনামূলক বেশি। কারণ তরুণ ও শিক্ষিত ভোটারদের সংখ্যা প্রায় দুই কোটির উপর। তাদের উপরই ভরসা করছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলসমূহ। কারণ তাদের ভোটেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে।
Advertisement
এসব বিষয় মাথায় রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্যান্য দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বা অঙ্গীকারনামা প্রকাশ করেছে। মূলত ইশতেহার হল- জনগণের নিকট দলের প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ আগামীদিনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে কর্মযজ্ঞের অঙ্গীকার। তবে সেসব অঙ্গীকার হতে হবে বাস্তবমুখী ও জনবান্ধব।
গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। সেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করেছে। এছাড়া ‘ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান ’ স্লোগানকে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেখানে ভোটারদের মধ্যে এসব বিষয় মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ভিত্তিতে ভোট উৎসবে জনগণ সম্পৃক্ত হবে। সেই আশাবাদ করাই যায়। কারণ আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার জনবান্ধব।
Advertisement
ইশতেহারে ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিলেও ভিন্ন কিছু পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে একাত্তরের স্বাধীন- সার্বভৌম দেশ ও রাজনৈতিক মুক্তির দর্শনের পাশাপাশি ২০২১ সালে অর্জিত অর্থনৈতিক মুক্তি ও মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০৪১ সালে সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে সমৃদ্ধ দেশ ও জলবায়ুর বিরুপ প্রতিরূপ রুখতে ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যেসব বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে আওয়ামী লীগ তার ভেতরে রয়েছে: দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতেসক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সহজীকরণ, দৃশ্যমান অবকাঠামোর মাধ্যমে সুবিধা নিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার। সারকথা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
দারিদ্র্য বিমোচন, বৈষম্য হ্রাস ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আছে। বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে যে দুর্নীতি হয় তার নিয়ন্ত্রণ করা। ইশতেহারে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা আছে। দেশের বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ অতীতেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আবারও ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নে তাদের যে কর্মপরিকল্পনা তা তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান ছিল ইশতেহারে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনী ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতের ন্যায় এবারও তারুণ্য নির্ভর একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। যা জনবান্ধব অঙ্গীকার হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।
Advertisement
একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় দুর্নীতির বিষবাষ্প সামরিক জান্তা জিয়া ও তাদের উত্তরসূরি বিএনপি-জামায়াত জোট পুরো দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা থেকে উত্তরণের জন্য আজ অবধি চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় তিন জোটের রূপরেখায় দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও ছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির উপাখ্যানকে বক্ষে ধারণ করে এবং দিন দিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এমনকি ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি –জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে স্বরূপে ফিরে আসে। যদিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দুনীর্তির লাগাম টেনে ধরে। তার সমস্তটাই ম্লান হয়ে যায় ২০০১ এর নির্বাচনের পরে। সেসময় অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, এতিমদের জন্য বরাদ্দ টাকাও আত্মসাৎ করে স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান ও সহযোগীরা।
অবশ্যই সামরিক জান্তা জিয়ার ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ সংলাপ মনে পড়ে। জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিএনপি ও তার সহযোগীরা কাজটি সুচারুরূপে করে। তারা দুর্নীতিকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেয়। যা প্রতিকারের জন্য গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেখানে ভোটারদের মধ্যে এসব বিষয় মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে। আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ভিত্তিতে ভোট উৎসবে জনগণ সম্পৃক্ত হবে। সেই আশাবাদ করাই যায়। কারণ আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার জনবান্ধব।
লেখক: সাংবাদিক।
এইচআর/এএসএম