সাহিত্য

সুমি ইসলামের তিনটি কবিতা

বয়সের দোরগোড়ায়

Advertisement

চলতে চলতে কখন জানি বয়সের শেষভাগে চলে এসেছিআর মাত্র মাইল ত্রিশ বাকিতারপর পিচঢালা রাস্তাটা পেরিয়ে পৌঁছে যাবো কাঁচা রাস্তার কাছেস্টিয়ারিংটা এবার শক্ত হাতে ধরতে হবে কোনো রকম ভুল করা চলবে না,ব্রেকে পা দিয়ে ধীরগতিতে চলতে হবেকাঁচা রাস্তাটা বড্ড পিছলেএই রাস্তায় মানুষজন অনেক কমকেউ পিছলে পড়ে গেছে, কারোবা পিচঢালা রাস্তার শেষভাগে এসেই গাড়ির ইঞ্জিনটা আচমকা বন্ধ হয়ে গেছে,কাঁচা রাস্তায় এসে মনে পড়ে গেল চন্দনার কথাসে বলেছিল, আমার বাড়ি কাঁচা রাস্তার শেষ মাথায়যখন তোমার সময় হবে তখন ঘুরে যেয়ো আমার বাড়িটাতেকুঁড়েঘর তালপাতার ছাউনি জারুল গাছের নিচে বসতে দেবো পিঁড়ি পেতেমাটির চুলোয় তখন গরম ভাতে উতলে ওঠা পালের পোষা মোরগের ঝোল নতুন আলু দিয়েক্ষেত থেকে উঠিয়ে আনা তাজা শিমের ভর্তা।চন্দনা, আমি তোমার বাড়ির খুব কাছাকাছি যে কোনো সময় চলে যাবো তোমার কাছেতুমি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে সেই মাঝবয়সে,কত চেষ্টা করেছি তোমার কাছে যাবার জন্য পারিনি, ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছি ঘরে।এখন আর ব্যর্থ হবো নাআমি এখন বয়সের দোরগোড়ায়কিছু মাইল গেলেই পৌঁছে যাবো তোমার কুঁড়েঘরের অতিথি হয়ে।

****

সে আসবে বলে

Advertisement

মখমলের মতন তুলতুলে নরম সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে সাদা সাদা মেঘেদের আনাগোনা দেখতে আমার ভালো লাগেইচ্ছে হয় বুকের বা’পাশে রেখে দেওয়া নীলখামের চিঠির সাথে একদলা সাদা তুলতুলে মেঘ মিশিয়ে দিয়েতাকে পাঠাবো বলে লিখে রেখেছি একশ একটা চিঠিযত্নে রেখে দিয়েছি ন্যাপথলিন দিয়েসাথে রেখেছি একশ একটা কালো গোলাপ,সে আসবে বলেছিল,সবুজ ঘাসের গালিচায় শুয়ে আকাশ দেখবো দুজনে মিলেধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামবে আবির মাখা পশ্চিম আকাশতার ঘারে মাথা রেখে পূর্ণিমা দেখবো,রাত কেটে সোনালি সূর্য ওঠে চিড়ল পাতার ফাঁক গলে সোনালি আলো এসে ঘর ভরে যায়।টলমলে স্রোতধারায় হংসদলেরা খেলা করেডাহুক ডাকে অশ্বত্থের ডালেআমি অপেক্ষায় রই আমি অপেক্ষায় থাকি আদি থেকে অনন্ত কাল অবধি,নীলখামে চিঠি রাখি সাথে কালো গোলাপআকাশ থেকে এক টুকরো মেঘ চেয়ে নিইশিশি ভর্তি করে শিশির রাখি রোজএক জোড়া জোনাকি আর জোছনার আলো,আমি অপেক্ষায় রই অপেক্ষার প্রহর গুনিআদি থেকে অনন্তকাল সে আসবে ধীর পায়ে।

****

তুমি বেঁচে থাকো

আমি চাই তুমি বেঁচে থাকোতোমার মৃত্যু হোককিন্তু জীবন সায়াহ্ন না আসুকতোমার একটা ঘর হোকতোমার একটা প্রিয় মানুষ হোকভালোবাসারা বৃষ্টির মতন ঝুমঝুমিয়ে পড়ুক তোমার ঘরের চালে,তোমার ঘরের পাশেরস্রোতিস্বিনী নদীর ধারা বয়ে চলুক অবিরত,জোনাকিরা ঘোর অমাবস্যাতে আলো জ্বালুক তোমার ঘরেজারুল ডালের ফাঁক দিয়ে দুধসাদা জোছনারা আলোকিত করুক তোমার আঙিনা,হাওয়ায় ভেসে যাওয়া প্রেমেরা এসে তোমাকে জীবন্ত করুক,তুমি এক কাপ ধোঁয়াটে চা আর কবিতার খাতা নিয়ে বেঁচে থাকো তোমার প্রিয় মানুষটির সাথে।

Advertisement

এসইউ/এমএস