মাহমুদুল আলম পলাশ ৪৩তম বিসিএসের কাস্টমস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ১৯৯৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল আজিজ ও ও মা রাজিয়া সুলতানা। পলাশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে কর্মরত।
Advertisement
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তিনি বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—
জাগো নিউজ: ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?মাহমুদুল আলম পলাশ: একেবারে তাৎক্ষণিক পর্যায়ে ভাষাহীন ছিলাম। অভূতপূর্ব এক ভালো লাগা কাজ করছিল। যখন রেজাল্ট পাই; তখনও অফিসেই ছিলাম। কাজের ব্যস্ততার মাঝেই রেজাল্ট দেখেছি। এক বড় ভাইও অবশ্য রেজাল্ট হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আমার থেকে আমাকে নিয়ে বেশি স্বপ্ন আমার বাবা-মা দেখেছিলেন। তাই প্রথম ফোনটাও তাদেরই দিই। আম্মু রেজাল্ট শুনে কান্না করে দিয়েছিলেন। তাদের জীবনের সবচেয়ে খুশির সংবাদটা বুঝি এটাই ছিল।
জাগো নিউজ: পড়াশেনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?মাহমুদুল আলম পলাশ: সত্যি বলতে সেভাবে কোনো প্রতিবন্ধকতা ফেস করতে হয়নি। মধ্যবিত্ত বাবা-মা তাদের সবটুকু দিয়েই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, যাতে পড়াশোনাটা ঠিকমতো করে যেতে পারি। এই পড়াশোনা করার সুবাদেই কলেজ লাইফ থেকে বাড়ির বাইরে। তাই বাবা-মা, পরিবার ছেড়ে থাকাটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
Advertisement
আরও পড়ুন: বিসিএসে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নপূরণ ঔষ্ণিকের
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মাহমুদুল আলম পলাশ: অনার্স পাস করার পর থেকেই আসলে বিসিএসের প্রতি আকৃষ্ট হই। কিছু কিছু বন্ধুকে দেখেছি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার থেকেই বিসিএসের পড়াশোনা করতে, কোচিংও করতে। কিন্তু আমি তখন একাডেমিক পড়াশোনাতেই সেভাবে সিরিয়াস ছিলাম না। আর বিসিএস তো আরও পরের কথা। ৪১তম বিসিএস অ্যাপেয়ার্ড দিয়ে অ্যাপ্লাই করে যদিও প্রিলি পাস করেছিলাম। কিন্তু যখন রিটেন এক্সাম; তখন আমার মাস্টার্স ফাইনাল এক্সামও চলছিল। আমি মাস্টার্সের জন্য ৪১তম রিটেন বাদ দিয়েছিলাম। মাস্টার্স শেষ করার পরেই মূলত ৪৩তম বিসিএস নিয়ে সিরিয়াসলি পড়াশোনা করেছি এবং সফলও হয়েছি।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—মাহমুদুল আলম পলাশ: যেমনটি বললাম, অনার্স শেষের পরেই মূলত বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। কোভিডের প্রভাবে লকডাউন শুরু হলে বাড়ি চলে যাই। ৪-৫ মাস বাড়ি ছিলাম এবং এই সময়টা খুব ভালো ভাবে কাজে লাগিয়েছিলাম। এরপরে মাস্টার্সের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক করে রিটেনের পড়াশোনা করেছি। তবে ৪৩তম রিটেনের আগের ১ মাস অনেক পড়াশোনা করেছিলাম। বাজারের বইগুলো থেকে নিজের মতো করে পড়াগুলো গুছিয়ে নিতাম। এছাড়া রেগুলার পত্রিকা পড়তাম। দিনের শুরুতেই ১-২ ঘণ্টা পত্রিকার পেছনে ব্যয় করতাম। এছাড়া আউট বই (গল্প, উপন্যাস, ফিকশন, নন-ফিকশন) পড়ার অভ্যাস ছিল অনেক। এগুলো কাজে দিয়েছে অনেক। তাই রিটেনের সময় আমার কলম কখনো থেমে থাকেনি। রিটেন এক্সাম খুব ভালো ভাবেই শেষ করেছিলাম।
যখন রিটেন পাসের রেজাল্ট পেলাম; তখন আমি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে বেশ কয়েকমাস যাবত কর্মরত। ব্যাংকের চাকরি করে ভাইভার জন্য খুব বেশি প্রিপারেশন নিতে পারিনি। তবে নিজের একাডেমিক বিষয়, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স—এগুলো যতটা পারি ঝালাই করেই ভাইভা বোর্ডে ঢুকেছিলাম। ভাইভা বোর্ডে ৩০-৩৫ মিনিটের মতো ছিলাম। পুরোটা সময়ই নির্ভিক থাকার চেষ্টা করেছি। সব প্রশ্নের উত্তর পারিনি কিন্তু সেরকম নার্ভাস ফিল করিনি। এটিই বোধহয় সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছিল ভাইভাতে।
Advertisement
আরও পড়ুন: বিসিএস হচ্ছে ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল: রুবেল তালুকদার
জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?মাহমুদুল আলম পলাশ: এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার মা। আমার মা খুব বেশি উচ্চ শিক্ষিত না হলেও তার চিন্তা-ভাবনা অনেক উচ্চমানের। তার অনুপ্রেরণাতেই এগিয়ে যাওয়া। এছাড়া যখন বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি; তখন বিভিন্ন ভাইয়া-আপু যারা বিভিন্ন ক্যাডার হয়েছেন, তাদের বিভিন্ন কথা-উপদেশ শুনতাম, তাদের লেখাগুলো পড়তাম। এগুলোও অনুপ্রেরণা হিসেবে অনেক কাজ করেছে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মাহমুদুল আলম পলাশ: সামনে এখন অনেকটা পথ। এই পথ যেন সুন্দর ভাবে, সৎ ভাবে, নিষ্ঠার সাথে অতিক্রম করতে পারি। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিক্রমায় যেন একটু হলেও অবদান রাখতে পারি।
এসইউ/এমএস