রাজনীতি

‘গণসংযোগে বের হলে মানুষ বলে আপনি তো পাস’

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। ঢাকা-৭ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট করবেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। এবারের নির্বাচনে নিজের অবস্থান ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার আসন বণ্টনসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রায়হান আহমেদ।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার এলাকায় ছয়জন প্রার্থী। আপনি জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: ছয়জন প্রার্থী, সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি জিতবো। এই নির্বাচনকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। বয়স হয়েছে, এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। জীবনে আর কোনোদিন আমি নির্বাচন করবো না। পাস করলে হয়তো আবারও করবো। কিন্তু পাস না করলে আর নির্বাচন করবো না। আর আমার এ নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। এ আসনে জাতীয় পার্টির যিনি প্রার্থী ছিলেন তিনি প্রত্যাহার করেছেন। আমি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ১৮ ডিসেম্বর।

জাগো নিউজ: এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলনামূলক কম। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

Advertisement

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, এভাবে নির্বাচনের পক্ষে আমরা না। নির্বাচন হচ্ছে একদলীয়ভাবে। এখানে কোনো বিরোধীদল নেই। এখানে আওয়ামী লীগ বিরোধীদল নির্ধারণ করে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন>>‘বিদেশি চাপ আমরা কেয়ার করি না’

জাগো নিউজ: জাতীয় পার্টির সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতা হয়েছে। আপনি এই ভাগ-বাটোয়ারায় সন্তষ্ট?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: জাতীয় পার্টি ২৬টি আসনে সমঝোতা করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কতটি আসন পাবে কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের তিনজন কো-চেয়ারম্যান কিন্তু এই ২৬টি আসন থেকে বাদ পড়েছেন। আওয়ামী লীগ যখন দেখেছে তাদের যে আসনগুলোতে ক্যান্ডিডেট ভালো নয়, ঠিক সেই আসন জাতীয় পার্টিকে দিয়েছে। আমাদের অনেক প্রার্থীর নাম এই ২৬ আসনে ছিল না, কিন্তু পরে যুক্ত করা হয়েছে। এখন নির্বাচন হলে বোঝা যাবে দুটি পাবে, নাকি তিনটি পাবে নাকি পাঁচটির বেশি পাবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, আপনার আসনে জাতীয় পার্টি সমোঝতা করতে পারেনি?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: সে বিষয়ে দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আসলে এটা নিয়ে এত বেশি ইন্টারেস্টেড না। আমি তো পার্টিকে বলেছিলাম নির্বাচন করবো না। তবুও পার্টি আমাকে নমিনেশন দিয়েছে।

জাগো নিউজ: জনসংযোগ, প্রচার-প্রচারণায় আপনি অনেক এগিয়ে। মানুষের সাড়া পাচ্ছেন?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: প্রথম যেদিন গণসংযোগে বের হই সেদিন আমি বলেছিলাম দুইশ লোক আসবে আমার সঙ্গে। কিন্তু সেদিন আমার সঙ্গে পাঁচ-ছয় হাজার লোক বের হয়েছিল। নবাবপুর থেকে তাঁতীবাজার প্রতিটি এলাকার মানুষ আমাকে চেনে। সব আমার জ্ঞাতি-গোষ্ঠী। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে একেকদিন সাত থেকে আটটা ওয়ার্ড ঘুরি। সাত-আট ঘণ্টা হেঁটে মানুষের দরজায় যাই। গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

আরও পড়ুন>>‘আমেরিকা বাংলাদেশে একটি পুতুল সরকার বসাতে চেয়েছে’

জাগো নিউজ: এ আসনে সোলায়মান সেলিম আপনার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। পুরান ঢাকায় তাদের সমর্থনও রয়েছে বেশ। আপনাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কেমন হবে?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: সোলায়মান সেলিম তো বাপ না থাকলে নমিনেশন পেতো না। এখানে হাজী সেলিমই সব। তার ছেলের কোনো অবদান নেই। সেক্ষেত্রে তাদের প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক। আমার পাশেও মানুষ আছে। আমি নির্বাচন করবো শুনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি গণসংযোগে বের হলে মানুষ আমাকে বলে আপনি তো পাস। যদি কেন্দ্র দখল না হয় আমি পাস করবো।

এখানে হাজী সেলিমই সব। তার ছেলের কোনো অবদান নেই। সেক্ষেত্রে তাদের প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক। আমার পাশেও মানুষ আছে। আমি নির্বাচন করবো শুনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি গণসংযোগে বের হলে মানুষ আমাকে বলে আপনি তো পাস। যদি কেন্দ্র দখল না হয় আমি পাস করবো।

জাগো নিউজ: পুরান ঢাকা ব্যবসায়িক এলাকা হওয়ায় এলাকার ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজি প্রমাণিত। নির্বাচিত হলে এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ থাকবে?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: চাঁদাবাজির ব্যাপক উপদ্রব এ এলাকায়। ক্ষমতাসীন থেকে প্রশাসন সবাই জড়িত। আমাদের মতো সৎ লোকেরা ক্ষমতায় এলে এসব প্রতিহত করবো। এলাকায় সিসি ক্যামেরা কম। যদি মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা থাকতো অপরাধীদের চিহ্নিত করা যেত। আমি নির্বাচিত হলে এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেবো।

জাগো নিউজ: পুরান ঢাকায় যানজট, আবাসনসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। আপনি নির্বাচিত হলে কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন?

আরও পড়ুন>>প্রতিশ্রুত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: পুরান ঢাকার সব সমস্যা তো পাকিস্তান পিরিয়ড থেকে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি আমার শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করবো। এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের অনেক গাফিলতি রয়েছে। এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করে হেরেছি। আমি কাজ করার সুযোগ পাইনি। এবার সুযোগ পেলে পরিবর্তন আসবে।

জাগো নিউজ: বিএনপি-জামায়াত না থাকায় এ নির্বাচনকে অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ বলছেন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: বিএনপির মতো বড় একটি দল, জামায়াত, চরমোনাই পির নির্বাচনে আসেননি। ফলে দেশের জনগণের বৃহৎ একটি অংশ নির্বাচনে নেই। এই বৃহৎ অংশ এটাকে নির্বাচন বলে বিশ্বাসও করে না। এরা ভোটকেন্দ্রেও যাবে না। আমি মনে করি ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসবে না।

জাগো নিউজ: তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, তবুও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের কোনো প্রতিবন্ধকতা বা দুর্বলতা আছে কি?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: নির্বাচন কমিশনের শতভাগ দুর্বলতা রয়েছে। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা নির্বাচন কমিশন আসলে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব থেকে বের হতে পারে না। সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে না। নিরপেক্ষ একটা সরকার না হলে আসল নির্বাচন হয় না। আমার যে বিরোধী প্রার্থী সে তো নির্বাচনের ২০ দিন আগে থেকে পোস্টার লাগিয়ে রেখেছে। তারা নৌকার প্রার্থী, আমার পোস্টার, ব্যানারের ওপর দিয়ে তারা পোস্টার সাঁটাচ্ছে। এসবের তো কোনো প্রতিকার নেই।

জাগো নিউজ: এ আসনের ভোটারদের জন্য কী বার্তা দেবেন?

সাইফুদ্দীন আহমেদ মিলন: এই নির্বাচনে আমি মনে করি দল জরুরি বিষয় নয়।পুরো আসনে জাতীয় পার্টির সমর্থিত ভোটার অনেক কম। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ আছে যারা আমাকে ভালোবাসে। তারাই আমাকে ভোট দেবে। আমি পরীক্ষিত ও শিক্ষিত একজন ভালো মানুষ। দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে যদি আমার মতো একজন ভালো মানুষকে নির্বাচিত করতে পারে তাহলে এলাকার উন্নয়ন হবে। সত্যিকারে ভোট হয়ে যদি আমি বের হয়ে আসতে পারি তাহলে আওয়ামী লীগও দেখাতে পারবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

আরএএস/এএসএ/জেআইএম