তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ রসালো বিদ্রুপ দেখা যায়। সুযোগ পেলেই কেউ কেউ খালেদ মাহমুদ সুজনকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে ছাড়েন না। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নানা তীর্যক কথাবার্তা শোনা যায়। তিনি কেন বোর্ডে আছেন? বোর্ড পরিচালক হিসেবে তার সাফল্য কি? আসলে খালেদ মাহমুদ সুজন কি করেন? এসব নিয়েও নানারকম কথাবার্তা শোনা যায় কারও কারও মুখে।
Advertisement
কিন্তু এই মানুষটিই যে দেশের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরির কাজটি নীরবে করে যাচ্ছেন, তিনিই যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্ট্যান্ডিং কমিটি গেম ডেভেলপমেন্টের প্রধান এবং সব বয়সভিত্তিক জাতীয় দল যে সেই গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির হাতেই পরিচালিত হচ্ছে এবং বাংলার যুবারা মহাদেশীয় ও বৈশ্বিক আসরে সর্বোচ্চ সাফল্যও পেয়েছেন- সে খবর রাখেন ক’জন?
জেনে নিন- আকবর আলীর নেতৃত্বে পারভেজ ইমন, তানজিদ তামিম, মাহমুদুল হাসান জয়, তাওহিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেন দিপু, তানজিম সাকিব আর শরিফুলরা যে বিশ্ব যুব ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছেন এবং এবার মাহফুজুর রহমান রাব্বি, আশিকুর রহমান শিবলি ও আরিফুল ইসলামরা যে এশিয়া কাপ জিতে দেশকে সাফল্য উপহার দিলেন, তার নেপথ্য রূপকার কিন্তু খালেদ মাহমুদ সুজন।
আসুন জেনে নেই, তিনি কি করেন, কি ভাবেন? গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির অধীনে যে বৈশ্বিক আসরের পর মহাদেশীয় ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ সাফল্যের দেখা মিললো, তার পেছনের গল্প।
Advertisement
জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে খালেদ মাহমুদ সুজন সব গল্পই করেছেন। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তার সে সব সাফল্যের গল্প।
জাগো নিউজ: জাতীয় দল যা পারেনি। বাংলাদেশ যুব দল সেটা পারে। ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ বিজয় আর এবার এশীয় যুবাদের (অনূর্ধ্ব-১৯) শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ যুব দল। এ সাফল্যের রহস্য কী?
খালেদ মাহমুদ সুজন: প্রথম কথা হলো, জুনিয়র লেভেল তো আর সিনিয়র লেভেলের মতো নয়। দুটোকে এক করা যাবে না। মান, শক্তি ও সামর্থ্যের বিস্তর ফারাক। আন্ডার নাইনটিনে মেধা, প্রতিভা, স্কিল আর টেকনিকে তারতাম্য তত থাকে না। প্রায় একই রকম থাকে। তাই বড় দল আর ছোট দলের শক্তি এবং সামর্থ্যের পার্থক্য কম বলে মনে হয়। আর সিনিয়র লেভেলে বড় দলগুলোর শক্তি ও সামর্থ্য অনেক বেশি। তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, মনন, স্কিলও অনেক সমৃদ্ধ।
জাগো নিউজ: গেম ডেভেলপমেন্টের অধীনে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আপনি গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান। যুবাদের সাফল্যের জন্য আপনার কমিটির চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা কী থাকে? এবার কী তাই ছিল? না ভিন্ন কিছু?
Advertisement
সুজন: একটা বিশ্বকাপের পর আমরা দেড় দুই বছর যে সময় পাই, তাকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আমরা শুরু থেকেই খুব বেশি ছেলে না নিয়ে ২০-২২ জন বা সর্বোচ্চ ২৫ জন যুবাকে বেছে নেই। তাদের নিয়ে কাজ করি।
এক পর্যায়ে আমরা ১৫ জনকে বেছে নেই। এর বাইরে অল্প ক’জন মানে তিন থেকে চারজন স্ট্যান্ডবাই থাকে। তাদের দিয়েই আমরা প্রচুর ম্যাচ খেলি এবং শেষের দিকে দু-তিনটি বিদেশ ট্যুরে আমরা ১৫ জনের ওপরই মনোযোগ দেই। তাদের পারফরম্যান্সটা খুঁটিয়ে দেখি। ক্রিকেটাররাও একসঙ্গে বেশিদিন খেলার সুযোগ পায়। নিজেদের মাঝে সম্প্রীতি, সদ্ভাব তৈরি হয়। সংহতি আর ঐক্য গড়ে ওঠে। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। দল হিসেবে গড়ে ওঠে।
জাগো নিউজ: এবারের যুব দলকে নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী ছিলেন?
সুজন: সত্যি বলতে কি ততটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। আকবর আলীর দলটা হয়তো এশিয়া কাপ জেতেনি। তারপরও ভালো খেলছিল। আমাদের আস্থা ছিল, মনে হতো দলটা ভালো করবে। বড় সাফল্য উপহার দিতে পারে।
এবারের দলটিকেও শুরুতে তত ইমপ্রেসিভ মনে হয়নি। ডেভেলপ করতে সময় লেগেছে। ধীরে ধীরে জেলড হয়ে গেছে। কি বলবো, আমি প্রথম দিকে খুব একটা কনফিডেন্স পাচ্ছিলাম না। দল হিসেবে ভালো খেলছিল না। মাশাল্লাহ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভালো খেলে জিতি। এরপর ভারতে গিয়েও ভালো খেলি। তারপরও মাঝে একটু বিরক্তই ছিলাম। আমি মাঝে কিছুদিন দেখিনি তাদের পারফরম্যান্স।
এবার এশিয়া কাপে দেখলাম। খুব ভালো লাগলো। ছেলেরা অনেক ডেভেলপ করেছে। দল হিসেবে নিজেদের গুছিয়েও নিয়েছে।
মাঠে তারা আত্মবিশ্বাসী ও অ্যাগ্রেসিভ ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিংয়ে বেশ পরিবর্তন এসেছে। সময় ও দায়িত্ব নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলার সামর্থ্য তৈরি হয়েছে। মারুফ (মৃধা) মাঝে একদমই ভালো বল করছিল না। এখন দারুণ বল করেছে। সুইং করিয়েছে। আমার কাছে দারুণ লেগেছে। সব মিলে আমি মনে করি ভালোই ডেভেলপ করেছে।
জাগো নিউজ: যুব বিশ্বকাপ জেতানো লঙ্কান কোচ নাভেদ নেয়াজের পরিবর্তে স্টুয়ার্ট ল এবং ওয়াসিম জাফরকে ব্যাটিং কোচ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ জানাবেন কী?
সুজন: প্রথম কথা হলো ২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও করোনার কারণে আমরা দল নিয়ে সেভাবে মনোযোগী হতে পারিনি। সেটা বাস্তব অবস্থার কারণেই সম্ভব হয়নি। সে বছর করোনার কারণে প্রস্তুতি ভালো ছিল না। তবে আমার একটা স্বপ্ন ছিল, পরের বছর বিশ্বকাপে আমরা ভালো করার মতো দল সাজাবো।
চ্যাম্পিয়ন একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য। তবে তার বাইরে ভালো করাটাও অনেক বড়। আমার সে ইচ্ছাই ছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল সাজানোর চিন্তা থেকেই স্টুয়ার্ট ল’কে নিয়ে আসা। জুনিয়র লেভেলে ব্যাটিং সমস্যাটাই সবচেয়ে বড়।
তা কাটতে আর ব্যাটিংটা উন্নত করতেই ওয়াসিম জাফরকে ব্যাটিং কোচ করা। হি ইজ টেকনিক্যালি সাউন্ড। আর ভারতের মানুষ। ভাষা ও সংস্কৃতিটা কাছাকাছি। ছেলেদের বুঝতে ও মানিয়ে নিতে সহজ হবে। এছাড়া আমরা একজন ইংলিশ ট্রেনারও নিয়োগ দেই, নাম অ্যালেক্স। মোটকথা, আমরা একটা স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলাম। মাশাল্লাহ সো ফার সো গুড।
জাগো নিউজ: এই দল নিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখেন? কতটা আশাবাদী আপনি?
সুজন: দেখুন, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে শুধু ভালো খেললেই চলবে না। ভাগ্য লাগে। ভাগ্য ভালো না থাকলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিন। তবে আমি মনে করি আমাদের দলটা বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য রাখে।
জাগো নিউজ: স্টুয়ার্ট ল’ আর ওয়াসিম জাফরের মতো নামি ক্রিকেটার ও হাই প্রোফাইল কোচের সাথে নাজমুল ইসলামকে পেস বোলিং কোচ করেছেন। কাজটা কি একটু ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না?
সুজন: হ্যাঁ, অনেকে বলেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে কোচিংয়ে পড়াশোনার দরকার আছে। আমাদের নাজমুলের হয়তো তা নেই। তবে ভুলে গেলে চলবে না আমাদের তালহা জুবায়ের, নাজমুল আর রবিন (মাহবুব আলম) জাতীয় দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বের অনেক নামি ফাস্ট বোলিং কোচের সান্নিধ্যে এসেছে। তাদের কোচিং এবং টিপস পেয়ে অনেক কিছু জেনেছে, শিখেছে, বুঝেছে।
যেটা তাদের ক্যারিয়ার করেছে সমৃদ্ধ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা ম্যাচিউর হয়েছে। তারা জানে ছেলেদের সাথে কীভাবে কথ বলতে হবে। এবং আমার বিশ্বাস ছিল ওই জানা বিষয়গুলো তারা ভালো শেখাতে পারবে। তালহা ছিল প্রথমে। সে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ায় নাজমুলকে আমি দায়িত্ব দেই। দুজনই দারুণ কাজ করেছে।
মাশাল্লাহ নাজমুল পেসারদের নিয়ে বেশ ভালো কাজ করেছে। আমি খেলা দেখেই বুঝেছি পেসারদের উত্তরণে কোচ নাজমুল রেখেছে কার্যকর ভূমিকা। মারুফ মৃধা আর ইমন খুব ইমপ্রুভ করেছে। স্টুয়ার্ট নিজে অনেক ভালো, দক্ষ ও নামি কোচ। তার ক্রিকেট জ্ঞান, দুরদর্শিতা অনেক। তিনি নিজে দেখভাল করছেন।
সাথে ওয়াসিম জাফর ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছেন। আর আমাদের লোকাল ফিল্ডিং কোচ আশিকও খুব ভালো কাজ করেছে। দলের ফিল্ডিং আর ক্যাচিং যথেষ্ট ভালো ছিল। মাশাল্লাহ গুড কোচিং সেটআপ। আশিক খুব ডেডিকেশন নিয়ে কাজ করেছে। আগেরবার ডিকেন্স ছিল, এবার আশিক কাজ করলো ফিল্ডিং কোচ হিসেবে।
জাতীয় দলে সেভাবে স্লট থাকে না। লোকাল কোচরা সুযোগ পায় না। আমি চেষ্টা করি দুই বছর পরপর ফরেন কোচদের সাথে আমাদের তরুণ কোচদের সম্পৃক্ত করতে। নাইনটিন একটা জায়গা, যেখানে দেশের কোচদের কাজ করার সুযোগ আছে। যুব দলে থাকে। আমিও চেষ্টা করি আমাদের লোকাল কোচদের সম্পৃক্ত করতে। এর আগে বাবুল ভাই, সোহেল ইসলামও কাজ করেছে। এবার আমি কোয়াইট হ্যাপি উইথ দেম।
জাগো নিউজ: এশিয়া কাপে দলে কি স্পেশালিস্ট স্পিন কোচ ছিল না?
সুজন: দলের সাথে না গেলেও সোহেল ইসলাম আমাদের স্পিনারদের নিয়ে কজ করেছে। এবারও সোহেল আমাদের হেল্প করেছে। আর আমরা পাকিস্তানের শাহেদ মেহমুদকে নিয়েছি। সে স্পিনারদের নিয়ে কাজ করছে।
জাগো নিউজ: শাহেদ মেহমুদ তো বেশ ক’বছর ঢাকা লিগ খেলেছেন। দক্ষ লেগস্পিনার। তিনি কি লেগিদের নিয়ে কাজ করবেন?
সুজন: হ্যাঁ, আমরা শাহেদ মেহমুদকে ৬ মাসের জন্য এনেছি। মূলত লেগস্পিনারদের নিয়ে কাজ করার জন্য। শাহেদ এর মধ্যেই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরছে। অনেকগুলো জেলায় ছেলেদের বোলিং দেখেছে। বিভিন্ন জেলা ঘুরে শাহেদ কয়েকজন লেগিকে খুঁজে বেরও করেছে। তাদের নিয়ে কাজ করবে। আশা করছি আমরা শাহেদের হাত ধরে নতুন মেধাবি লেগস্পিনার পাব।
জাগো নিউজ: অনূর্ধ্ব-১৯ এর ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে গিয়ে কেউ বড় পারফরমার হতে পারছে না। একজন তামিম, সাকিব কিংবা মুশফিক বেরিয়ে আসছে না কেন? কারণ কী? এটা কি বিসিবির ব্যর্থতা, নাকি ক্রিকেটারদের আন্তরিক ইচ্ছের অভাব?
সুজন: দু’পক্ষই হতে পারে। সাকিব, তামিম আর মুশফিকরা বড় প্লেয়ার হয়েছে। তবে আমি বলবো তারা ‘লাকি’। কারণ তারা এমন সময় ক্যারিয়ার শুরু করেছে, যখন আমাদের জাতীয় দলে ব্যাকআপ প্লেয়ার অনেক কম ছিল। তাই তারা নিজেদের গড়ে তোলার ও ঘষা মাজার সুযোগ পেয়েছে। শুরুতে তাদের ব্যাটিং গড় ছিল ১৫/১৬। তারপর ধীরে ধীরে নিজেদের তৈরি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা- তামিম, সাকিব ও মুশফিকদের সিনসিয়ারিটি ছিল। তাদের বড় প্লেয়ার হওয়ার ইচ্ছে ও দৃঢ় সংকল্প ছিল।
আর এখনকার প্রজন্ম অল্প বয়সে অনেক টাকা পেয়ে যাচ্ছে। মনযোগ, মনসংযোগটা অন্যদিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরে যায়। ক্লাব ক্রিকেটে কোন দলে খেললে নিজের ক্যারিয়ারের উন্নতি হবে, সেসব না ভেবে জমি, বাড়ি, গাড়ির দিকে মন ছুটে যায়। এসবের জন্য একদম পাগল হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়। এখানে ফ্যামিলিও বড় ধরনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জাগো নিউজ: তাহলে কি বিসিবির কোনো দায় নেই? তরুণ প্রতিভাগুলোর যথাযথ পরিচর্যা ও উত্তরণে বিসিবি কি সঠিক ভূমিকা পালন করছে?
সুজন: দেখুন যে কোনো ভালো ছাত্রকে আরও ভালো করতে বিদেশে উচ্চতর শিক্ষায় পাঠানো হয়। আমাদের বিসিবির এ উচ্চতর শিক্ষাটা উন্নত করতে হবে।
এটা বলে বোঝালাম আকবর আলীদের যুব দলটি দেড় বছরে ৩৪-৩৫টি ওডিআই খেলেছে। এটা হিউজ। তাদের ট্রেনিংও হয়েছে। সাথে প্রচুর ম্যাচ খেলেছে। দেশে বিদেশে বিভিন্ন পরিবেশে প্রচুর ম্যাচ খেলে সব রকম পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর অভ্যাসটা তৈরি হয়েছিল। নানা প্রতিপক্ষ দেখে ফেলেছে। বিভিন্ন সময় হারতে হারতে শিখেছে। নানা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে শিখেছে।
সেখানে সেই ছেলেগুলো যুব ক্রিকেট শেষে আমাদের এইচপি বা একডেমির হয়ে বছরে বড়জোর দুটি ট্যুর করে, যা মোটেই যথেষ্ঠ নয়। এইচপি, ‘এ’ দল আর টাইগারদের ট্যুরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাইরে বিভিন্ন পরিবেশে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। উপমহাদেশ এবং বাইরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনে ক্রমাগত ট্যুরের ব্যবস্থা করতে হবে।
তাহলেই অনূর্ধ্ব-১৯’র পর ইমপ্রুভমেন্টের গ্রাফটা উঁচু থাকবে। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে কিন্তু তারা উন্নতি করতে পারবে না। শুধু দেশের মাটিতে সারা বছর ট্রেনিং করেও উন্নতি হবে না। ছেলেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট উপযোগী হয়ে উঠতে পারবে না। নিজেদের ইমপ্রুভ করতে পারবে না। ম্যাচ টেম্পারামেন্ট গ্রো করা, ম্যাচ সেন্স ডেভেলপ করা এবং সামগ্রিক উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ম্যাচ খেলা।
যুব দলের খেলা শেষে ওই তরুণরা যদি তিন-চার বছর বিভিন্ন দেশে নানান পরিবেশে ম্যাচ খেলতে পারে, তাহলে অনেক পরিণত হয়ে উঠবে। ঘরের ক্রিকেটে, প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল, এনসিএল, বিসিএল সব খেলবে। এর বাইরে সেই তরুণরা যখন নিয়মিত দেশের বাইরে ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলে ২৩-২৪ বছর বয়সে জাতীয় দলে ঢুকবে, তখন তার ক্রিকেট বোধ, উপলব্ধি, দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ হবে অনেক বেশি শানিত ও জাগ্রত। টেকনিক এবং স্কিল হবে আরও মজবুত।
আমাদের সবই অছে। কোচিং স্টাফ ভালো আছে। ট্রেনিংটাও ঠিকমতোই হয়; কিন্তু ছেলেদের ট্যুর বাড়াতেই হবে। তাদের দেশের বাইরে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতেই হবে। এর কোনোই বিকল্প নেই। সেটা আমরা কম করি। তা বাড়াতে হবে আরও অনেক বেশি।
বিসিবির একটা বাজেট তৈরি করতে হবে। ক্রিকেট অনেক এগোচ্ছে। আমাদের তরুণদের উন্নত করতে সব বড় ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো কি করে তা খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ভারতের জয়সওয়ালরা যুব বিশ্বকাপের পর শুধু আইপিএল নয়, দেশে-বিদেশে কত ম্যাচ খেলেছে। আমাদের তৌহিদ হৃদয় জাতীয় দলে ঢোকার আগে কয়টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে? আমরা কি যুব দলের খেলা শেষে জাতীয় দলে খেলার আগে তাকে ও অন্যদের সেভাবে তৈরি করতে পারছি?
আইএইচএস/