শেষে ওভারে প্রয়োজন ১৯ রান। সমীকরণটা কঠিন বৈকি! তবে আপনি যদি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের ‘পাওয়ার হিটিং’ এর সাথে কিঞ্চিৎ পরিচিত হয়ে থাকেন তবে আর এটাকে অসম্ভব বলে মনে হবে না। তবুও ইংল্যান্ডের ১৫৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে গেইল সহ প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের দ্রুত বিদায়ের পর খেলার শেষ পর্যন্ত যে এতটা নাটকীয়তা অপেক্ষা করছিল, তা ভাবেননি অনেকেই। শেষ ওভারের প্রথম চার বলে চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ব্র্যার্থওয়েট তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন আরও একবার। সেই সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে নিল দ্বিতীয় বারের মত বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শিরোপা। ক্রিকেটের এই ছোট সংস্করণে ক্যারিবিয়ানরা যে যথেষ্ট সমীহ করার মত দল, তা সমগ্র ক্রিকেট বিশ্ব তাকিয়ে দেখল আরও একবার!পাশাপাশি নারীদের বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শিরোপাও ঘরে তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টানা তিন বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে তারা প্রথমবারের মত এই গৌরব অর্জন করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক স্টেফানি টেলর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। একই দিনে নারী ও পুরুষ উভয় দলই বিশ্ব টি-টোয়েন্টির শিরোপা জিতে যেন সেই পুরোনো ক্যারিবীয় রূপকথার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে বার বার।এ বছরেরই ১৯শে জানুরারী থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে যথাক্রমে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দুই শক্তিশালী দল বাংলাদেশ ও ভারতকে হারিয়ে তারা শিরোপা জয় করে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ক্যারিবীয় যুবাদের লড়াকু মনোভাব নজর কেড়েছিল ক্রিকেট বোদ্ধাদের। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যবধানে তিনটি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই এখন বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত একটি দল। অথচ কিছুদিন আগেও ওয়ানডে এবং টেস্টে তাদের পাওরফরম্যান্স তেমন সন্তোষজনক ছিল না। অথচ ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের লড়াকু মানসিকতা ও সামর্থ্যের জানান দিয়েছে।অথচ ক্রিকেটে এক সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি দল। গর্ডন গ্রিনিজ, ভিভ রিচার্ডস কিংবা ক্লাইভ লয়েডের মত কিংবদন্তীরা এক সময় খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছিল তারা। ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নব্বই এর দশকের শেষ দিক হতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই সেই পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেখা মিলছিল না। মাঝে মাঝে বেশ কিছু ভাল খেলা উপহার দিলেও সেই ধারাবাহিকতা আর ছিল না ক্যারিবীয় ক্রিকেটে।কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আবার বেশ ভাল দল এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গেইল, ব্রাভো, স্যামুয়েলস, রাসেল কিংবা স্যামির মত বেশ কিছু পাওয়ার হিটার থাকায় তারা যে কেউ যে কোন মুহূর্ত ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সক্ষম। ইতমধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ম্যানেজমেন্টের সাথেও কিছুটা বৈরিতা চলছে দলের খেলোয়ারদের। এরই সুত্র ধরে আবার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় থাকতে পারছেন না মূল স্কোয়াডে। কিন্তু সমস্ত অশনি সংকেতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কাছাকাছি সময়ে তিনটি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রমাণ করল, তাদের রক্তে মিশে আছে ক্রিকেট। পাশাপাশি, ক্রিকেট বাণিজ্যের মোড়কে ব্যবসায়ীক চিন্তা-ভাবনা যখন খেলাটির আনন্দকে কিছুটা হলেও গ্রাস করে নিচ্ছিল, তখন ক্যারিবীয়দের আমুদে উদযাপন ক্রিকেটের সেই পুরনো জৌলুসকেই যেন আবারও ফিরিয়ে এনেছে। অভিনন্দন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট। তারা কি তবে পারবে সেই স্বর্ণযুগকে আবারও নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে?আইএইচএস/এমআর/পিআর
Advertisement