সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসার স্বপ্ন প্রচার করছিল জাতীয় পার্টি। এর অংশ হিসেবেই প্রায় সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেনদরবার করে সমঝোতা করেছে ২৬ আসনে। সেগুলো থেকে সরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আবার সমঝোতা না হওয়ায় ভোটের মাঠ থেকে সরে গেছেন ফিরোজ রশীদের মতো হেভিওয়েট প্রার্থী। তবে নির্বাচনী প্রচারের যখন আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, তখনও মাঠে দেখা যাচ্ছে না দলটির অধিকাংশ প্রার্থীকে। ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনের মধ্যে ভালোভাবে মাঠে আছেন দলটির কেবল দুজন প্রার্থী। আরও দু-তিনজনকে মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও বাকিদের তেমন কোনো উপস্থিতি নেই। অধিকাংশ প্রার্থীই হাতেগোনা কিছু পোস্টার আর মাইকিংয়ে সারছেন প্রচার।
Advertisement
মহানগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-১৮ ও ৪ আসনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা শক্তভাবেই মাঠে আছেন। এছাড়া ঢাকা-৭ ও ১৬ আসনে প্রার্থীরা আছেন কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে। বাকি ১১টি আসনে তাদের দেখা মেলেনি সেভাবে।
ঢাকা-১৮ আসনে শেরিফা কাদের
এখানে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের। আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও শেরিফা ছাড়াও এ আসনে আছেন আরও ৮ প্রার্থী।
Advertisement
তাদের মধ্যে শক্ত অবস্থান আছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরীর। তিনি দলের মনোনয়ন না পেয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ফলে নির্বাচনের মাঠে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে শেরিফা কাদেরকে। তিনি নিয়মিত উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ করছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।
আরও পড়ুন>> প্রার্থী নিজেই জানেন না তার নির্বাচনী আসনের সীমানার পরিধি!
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তরা, দক্ষিণখান ও কাওলাসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনে নির্বাচনী আমেজ রয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের মূল লড়াই হচ্ছে শেরিফা কাদের ও খসরু চৌধুরীর মধ্যে। নিপা গ্রুপের চেয়ারম্যান খসরু চৌধুরী লড়ছেন কেটলি মার্কায়। আসনটিতে তিনি ব্যাপক শোডাউন সভা-সমাবেশ করছেন।
Advertisement
উত্তরখানের বাসিন্দা সিরাজ আলাউদ্দিন বলেন, এবারই প্রথম জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সরব প্রচার দেখছি। লাঙ্গল-কেটলির মধ্যকার জমজমাট লড়াই হবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সিট ছেড়েছে, তাদের কিছু ভোট লাঙ্গলে যাবে। আবার গার্মেন্টসের বড় ভোটব্যাংক আছে, সেখানে প্রভাব বিস্তার করবেন খসরু চৌধুরী।
এলাকায় নানান নাগরিক সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদক নির্মূল, প্রশস্ত সড়কসহ অন্য সমস্যার সমাধান করার প্রতিশ্রুতি যে দেবে, এলাকাবাসী তাকেই সমর্থন দেবে।
উত্তরা সেক্টর-৩ এর বাসিন্দা ব্যাংককর্মী হাবিব উদ্দিন বলেন, ঢাকা-১৮ বিশাল আসন। ঢাকার একটি প্রবেশদ্বার। বিমানবন্দর, গার্মেন্টস, হজ ক্যাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা আছে। এখানে স্মার্ট, সাহসী একজনকে এলাকার মানুষ বেছে নেবে।
আরও পড়ুন>> পোস্টারে এরশাদের ছবি, জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে শোকজ
নিজের অবস্থান নিয়ে শেরিফা কাদের বলেন, সাধারণ মানুষের আস্থাই আমাদের প্রধান শক্তি। ঢাকা-১৮ আসনের অনেক রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী। নির্বাচিত হলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব সড়কের উন্নয়ন করবো। ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ সিস্টেম উন্নত করবো। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল করবো। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই নির্বাচনের মাঠে নেমেছি। ভোটের মাঠে অনেকে গুন্ডামি করতে চায়। আমরা ভদ্রতা পছন্দ করি। আমাদের ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা না ভাবে। আমরা কখনোই দুর্বল নই।
ভোটের মাঠে বাবলা-মিলন
নিয়মিত গণসংযোগ করতে দেখা গেছে ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে।
এলাকাবাসী বলছেন, ঢাকা-৪ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম। আর লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন গত দুইবারের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। প্রতিযোগিতার মাঠে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব আওলাদ হোসেন। তার মার্কা ট্রাক। রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ প্রার্থী।
এলাকাবাসী বলছেন, দুবার সংসদ সদস্য থাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। আবার লাঙ্গল, ট্রাকের মাঝখান থেকে নৌকা প্রার্থীর জয় পাওয়াও কঠিন হবে।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বাবলা বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যারা জনগণের ভোট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করবে তাদের প্রতিহত করা হবে। ভোটের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করবে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন>> নির্বাচনী প্রচারণায় অস্ত্র প্রদর্শন, নৌকা প্রার্থীকে শোকজ
তিনি বলেন, এ এলাকায় চারবার এমপি ছিলাম। জনগণ ভোট দিতে পারলে ঢাকা-৪ আসনে লাঙ্গল জিতবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে জয়ী হবে আমি তা মেনে নেবো।
ঢাকা-৭ আসনে জাপার প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন মিলন। নগরের ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে পরিচিত এ রাজনীতিক বলেন, প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়মিত জনসংযোগ করছি। ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিনই পাঁচ-ছয়টি ওয়ার্ডে যাচ্ছি।
এর বাইরে ঢাকার অন্যান্য আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের কিছু পোস্টার দেখা গেলেও প্রচারের মাঠে নেতাদের তেমন দেখা যায়নি। একাধিক আসনে দেখা মেলেনি জাপা প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের প্রচার চোখে পড়েনি। এসব নিয়ে কথা বলতেও নারাজ দলটির প্রার্থীরা।
ঢাকা-১৬ আসনে গুটিকয়েক স্থানে দেখা যায় জাতীয় পার্টির নির্বাচনী পোস্টার। এ আসনে সংসদ সদস্য হতে প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডের (২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর) বাসিন্দারা ভোট দেবেন।
আসনটিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই আছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প। মাঠ, ঘাট, বাজার, দেওয়াল- সবখানেই নৌকার প্রার্থীর পোস্টার। মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনের পল্লবী মহিলা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন রোডের দু-তিন জায়গায় দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকটি লাঙ্গল মার্কার পোস্টার।
তবে ঢাকা-১৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আমানত হোসেন দাবি করেন, প্রচার ভালোই চলছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছি।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, একটি নির্বাচনী ক্যাম্প করেছি। আরও কয়েকটি করবো। ভোটের পরিবেশ ভালো। প্রচারে কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি।
এর বাইরে ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১২ ও ঢাকা-১০ আসন ঘুরেও জাপা প্রার্থীদের প্রচার চোখে পড়েনি।
তবে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেছেন, ভোটের মাঠে রয়েছেন প্রার্থীরা।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রচারের মাঠে সরব। তারা এলাকায় আছেন, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
এসএম/এমএইচআর/এমএস