রাজনীতি

প্রতিদ্বন্দ্বীরা ‘লাইটওয়েট’, তবুও দিন-রাত গণসংযোগে সাঈদ খোকন

নির্বাচন এলেই হিসাব-নিকাশ শুরু হয় হেভিওয়েট প্রার্থীদের নিয়ে। বিশেষ করে বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা, শিল্পপতি বা যারা দীর্ঘদিন ধরে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন, তাদেরই ধরা হয় হেভিওয়েট হিসেবে। এর বিপরীতে দেশজুড়েই কিছু প্রার্থী থাকেন যারা কেবল নির্বাচন করার জন্য করেন। তারা এর আগে কখনো এমপি নির্বাচিত হননি। স্থানীয় বা জাতীয় রাজনীতিতেও তাদের বিশেষ কোনো ভূমিকা থাকে না। এসব ‘লাইটওয়েট’ প্রার্থীদের নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রতিদ্বন্দ্বীরা তেমন চিন্তা করেন না। তবে এর ব্যতিক্রম ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ খোকন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে ৬ জন। তাদের সবাই লাইটওয়েট প্রার্থী। এসব অচেনা প্রার্থীদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও ঘাম ঝরাচ্ছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাতদিন গণসংযোগ করছেন তিনি।

Advertisement

স্থানীয়রা বলছেন, এ আসনে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে সাঈদ খোকনকে বিজয়ী ঘোষণা করা কেবল বাকি। এ কারণে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের তেমন আগ্রহও নেই। তারপরও তিনি দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মূলত দুটি কারণে। তিনি মাঠে থেকে ‘নির্বাচনী আমেজ’ তৈরির চেষ্টা করছেন। এছাড়া কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোও তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মনে করে, বিএনপি ছাড়া এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো চ্যালেঞ্জ। তাই যেসব আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সেগুলোতেও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে এ নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। কিন্তু এখন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর যারা প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের এলাকার মানুষই ঠিকমতো চেনে না। তাই নির্বাচন এখন মাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতা। সাঈদ খোকন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন, এটা সবাই জানে

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসনে চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আছেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এছাড়া আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু হামিদুর রেজা খান ভাসানী, সোনালী আঁশে তৃণমূল বিএনপির কাজী সিরাজুল ইসলাম, ছড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আক্তার হোসেন, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আমিনুল ইসলাম সরকার, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল আলম মজুমদার ও বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টির (জেপি) সৈয়দ নাজমুল হুদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আরও পড়ুন>> দুরন্ত হিজড়া রানী, জিএম কাদেরের পক্ষে নেতাকর্মী

পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, বংশাল ও কোতোয়ালি থানা এলাকা নিয়ে ঢাকা-৬ আসন গঠিত। এখন এসব এলাকার অলিগলি ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও নানান ধরনের নির্বাচনী প্রচারে। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর তুলনায় অন্যদের ব্যানার, পোস্টার খুবই কম। এছাড়া অন্য প্রার্থীদের তেমন গণসংযোগ করতেও দেখা যায়নি।

২৭ ডিসেম্বর ওয়ারী এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী সৈয়দ নাজমুল হুদা। এসময় তিনি তার নির্বাচনী প্রতীক বাইসাইকেলে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন। সঙ্গে ছিল ৮-১০ জন সমর্থক।

Advertisement

ঢাকা-৬ আসনে প্রার্থীদের অনেকেই অচেনা-অজানা। তারপরও আমাদের মতো মাঠের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মানুষের কাছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছোট বলে কোনো কথা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয় অর্জিত না হয়, আমরা কোনো প্রার্থীকে দুর্বল বা ছোট করে দেখবো না

আলাপকালে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলে দাবি করেন সৈয়দ নাজমুল হুদা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাঈদ খোকন একসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। কিন্তু জনগণ তার কাছে যে পরিমাণ সেবা আশা করেছিল, তা তারা পাননি। হয়তো তিনি এবার নৌকা নিয়ে জয় লাভ করতে পারবেন না। নির্বাচনে জনগণের মাঝে আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ চায় নেতৃত্বে নতুন কেউ আসুক। এ অবহেলিত পুরান ঢাকার উন্নয়ন করুক।

বিভিন্ন অলি-গলিতে মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের রবিউল আলম মজুমদারের ব্যানার-পোস্টার দেখা গেলেও তার নির্বাচনী প্রচার বা গণসংযোগ দেখা যায়নি। একইভাবে অন্যান্য প্রার্থীদের গণসংযোগও চোখে পড়েনি। তারা তেমন মাঠে নেই বলে জানিয়েছেন ভোটাররাও।

আরও পড়ুন>> স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে ১১৫১ প্লাটুন বিজিবি

ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন। ধোলাইখালে একটি মোটরপার্টস এর দোকানের মালিক তিনি। আলাপকালে মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-৬ আসনে এখন গণসংযোগে সবচেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। যদিও তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো এ আসনে অন্য কেউ নেই। তবে বিএনপি ছাড়া এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কতটা নিশ্চিত করতে পারবেন, তা নিয়ে সবারই প্রশ্ন রয়েছে।

সূত্রাপুরের লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা ইমরান আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এ আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। কিন্তু এখন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর যারা প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের এলাকার মানুষই ঠিকমতো চেনে না। তাই নির্বাচন এখন মাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতা। সাঈদ খোকন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন, এটা সবাই জানে।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার ও বিকেলে লালকুঠি এলাকায় নির্বাচনী পথসভা করেছেন সাঈদ খোকন। তার পথসভায় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তারপরও কেন এত গুরুত্ব দিয়ে গণসংযোগ করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কখনোই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। যদিও ঢাকা-৬ আসনে প্রার্থীদের অনেকেই অচেনা-অজানা। তারপরও আমাদের মতো মাঠের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মানুষের কাছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছোট বলে কোনো কথা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয় অর্জিত না হয়, আমরা কোনো প্রার্থীকে দুর্বল বা ছোট করে দেখবো না। এ এলাকা থেকে নৌকার বিজয় উপহার এবং পঞ্চমবারের মতো নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী করার আগ পর্যন্ত আমাদের ভোটযুদ্ধের প্রচারণা এবং সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

এমএমএ/এমএইচআর/এএসএম/এমএস