দেশজুড়ে

দুরন্ত হিজড়া রানী, জিএম কাদেরের পক্ষে নেতাকর্মী

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসন।

Advertisement

স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের আলী উকিল এবং দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের কাজী আব্দুল কাদের এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির দখলে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে শফিকুল গনি স্বপন এবং চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এইচ এম এরশাদ (উপনির্বাচনে মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার) নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনে এরশাদ এবং তার পরিবারের সদস্যরাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন এরশাদের ছোট ভাই এবং জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। জাতীয় পার্টির এক সময়ের দুর্গ ছিল বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৩৩টি আসন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিয়ে দলটি দখলে রাখতে পেরেছে মাত্র সাতটি আসন। এরমধ্যে রংপুর-৩ আসন একটি। এখানে সিটি করপোরেশন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। অন্য আসনের তুলনায় রংপুর অঞ্চলের মধ্যে কেবল এই আসনে জাতীয় পার্টির একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় দলটি। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগ বা স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও মাঠ কাঁপাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী। ছয় প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরের সঙ্গে লড়াই হবে রানীর-এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা।

১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। এদিন থেকে জিএম কাদেরের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এরই মাঝে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পাঁচদিন পর ২৩ ডিসেম্বর রংপুর যান জিএম কাদের। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদ এবং মা-বাবার কবরসহ মাওলানা কেরামত আলীর (রহ.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। দুদিন রংপুরে অবস্থানকালে নিজ আসনের বাইরে মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জের প্রার্থীর পক্ষে পথসভা করে ফিরে যান তিনি। সেই থেকে তার পক্ষে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মিছিল-সমাবেশ করছেন নেতাকর্মীরা।

Advertisement

এদিকে, মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী। ঈগলের মতোই দুরন্ত রানী ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তছলিমের মোড় এলাকার ভোটার মো. নয়ন বলেন, রানী রংপুরের উন্নয়নে যেসব কথা তুলে ধরছেন তা যুক্তিসংগত। দিনরাত তিনি ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়েছে। নির্বাচনে আসতে চায় না। কিন্তু আমি যেখানেই যাচ্ছি, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষের একটাই কথা, এবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কেবল রানী আপাকে ভোট দিতেই কেন্দ্রে যাবো। মানুষের মাঝে একঘেয়েমি এসেছে। তারা এখন পরিবর্তন চাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি ঘুঘুর মতো বারবার এখানে এসে ধান খেয়ে চলে গেছে। তারা রংপুরের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এবার মানুষ আর সে সুযোগ দেবে না।

Advertisement

তবে রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি, এখানে বিকল্প কোনো চিন্তা করে লাভ নেই বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের ভোটার এমদাদ হোসেন।

তিনি বলেন, মানুষ এখনো লাঙল এবং এরশাদকে ভুলে যায়নি। বরাবরের মতো এবারও লাঙল প্রতীকের প্রার্থী এ আসনে জয়ী হবেন।

প্রচার-প্রচারণায় জিএম কাদের সরাসরি না থাকলেও কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না দাবি করে জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এস এম ইয়াসির জাগো নিউজকে বলেন, রংপুরের মানুষের জন্যই আমরা, জাতীয় পার্টি। যেখানেই যাচ্ছি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ। বরাবরের মতো এবারও লাঙলে ভোট দিয়ে মানুষ পাশে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি।

তিনি আরও বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানকে সারাদেশ নিয়ে ভাবতে হয়। এ কারণে রংপুরে এসে তিনি চলে গেছেন। তবে আজ (শুক্রবার) বিকেলের মধ্যে তিনি রংপুর আসবেন এবং ভোট পর্যন্ত অবস্থান করতে পারেন।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তুষার কান্তি মন্ডলকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ভোটযুদ্ধে লাঙল ও ঈগল ছাড়াও সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু একতারা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক ডাব, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহিদুল ইসলাম মশাল এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম আম প্রতীকে লড়ছেন।

জিতু কবীর/এএইচ/এমএস