রাজনীতি

চট্টগ্রামের ১০ আসনে আওয়ামী লীগের ‌‘চ্যালেঞ্জ’ আওয়ামী লীগ

# একাধিক আসনে হামলা-মামলা# তিন মন্ত্রীর সঙ্গে নির্ভার এক সংসদীয় কমিটির সভাপতি

Advertisement

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আনন্দ-উত্তেজনার পাশাপাশি শঙ্কা ভর করছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে। বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ না করায় সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে যেখানে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, সেখানে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে অন্তত ১০টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বড় চ্যালেঞ্জ স্বতন্ত্র নামের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থীরাও যাদের বিবেচনা করছেন ‘ছায়াশত্রু’ হিসেবে। নির্বাচনী প্রচারণায় এরই মধ্যে হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে। হামলার শিকার কিংবা মামলার আসামিও হয়েছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরাই।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ১২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে দুই আসনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়ে ১৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আবার চট্টগ্রামের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার এক সংসদীয় কমিটির সভাপতি।

নির্বাচনী প্রচারণায় নির্ভার রয়েছেন চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পাশাপাশি শতভাগ নির্ভার রয়েছেন চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরী। বিএনপির ভোটবর্জনের পাশাপাশি নিজ দলের মধ্যে শক্ত কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ায় ভোটের বিষয়টি তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এই চার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা জামানত হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। একই সঙ্গে কিছুটা নির্ভার চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা এবং চট্টগ্রাম-৫ (সীতাকুণ্ড ও নগর আংশিক) আসনে নৌকার প্রার্থী এস এম আল মামুন।

Advertisement

আরও পড়ুন>> প্রচারণায় গিয়ে ফের নৌকা সমর্থকদের তোপের মুখে হুইপ সামশুল

চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই)

এই আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাতজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মাহবুব উর রহমান রুহেল। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘ঈগল’ প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। রুহেল সাবেক মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের ছেলে হওয়ায় কিছুটা ‘সেফ জোনে’ আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনে মাঠে রুহেল নতুন। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী গিয়াসের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। ভোটাররা বলছেন, রুহেলের চেয়ে গিয়াসের সঙ্গে তৃণমূলের ভোটারদের সংযোগ বেশি। এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাতেই রুহেলকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন গিয়াস। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর, সমর্থকদের ওপর হামলা, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)

Advertisement

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ভোটরে মাঠে তাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এখানে ভাঙচুর, হামলা, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের ঘটনা দৃশ্যমান। তরমুজ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তৈয়ব। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ফুলের মালা এবং নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী একতারা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)

চট্টগ্রাম-৩ আসনেও নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন আট প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তার প্রতীক ঈগল। তাদের মধ্যেই মূল লড়াইটা হচ্ছে। বিএনপি ভোটের মাঠে না থাকলেও স্থানীয় লোকজন দুই আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপভোগ করছেন।

আরও পড়ুন>> চট্টগ্রামে নৌকার প্রার্থীকে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির শোকজ

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)

ফটিকছড়ি এবং সন্দ্বীপের মতো সীতাকুণ্ডেও চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা আটজন। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি বাদেও পিতা আবুল কাসেম মাস্টারের অবদান রয়েছে। এই আসনে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইমরান। ঈগল প্রতীক পেয়েছেন এই প্রার্থী।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)

এই আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ সালাম দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতে করে মূল লড়াইটা এবার ত্রিমুখী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করার কারণে দলের নেতাকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ প্রকাশ্যে কেউ অপ্রকাশ্যে। এর মধ্যে একটি অংশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কেউ তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ও সাবেক বিএনপি নেতা মো. নাজিম উদ্দিন এবং কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষ নিয়েছেন। এই আসনেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকে শাহজাহান চৌধুরী শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের লাঙ্গলকে।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)

রাউজানে চূড়ান্ত প্রার্থী পাঁচজন। তবে এই আসনে নামে পাঁচ প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ধারেকাছেও কেউ নেই। ফজলে করিম চৌধুরী রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় এ পর্যন্ত ‘তিনিই রাজা, তিনিই মহারাজা’।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া)

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন। তাদের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই আসনেও নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ করার মতো সামর্থ্য নেই কোনো প্রার্থীর। মূলত বিএনপি মাঠে না থাকায় এই আসনে নির্ঝঞ্ঝাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ড. হাছান মাহমুদ।

 

আরও পড়ুন>> নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে ইসির মামলা

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও)

চট্টগ্রামের যে দুটি আসনে সবচেয়ে বেশি ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মধ্যে একটি চট্টগ্রাম-৮। আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে কেউ নির্বাচন করছেন না। এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক না থাকলেও আওয়ামী লীগের দুই নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এই আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ। নির্বাচনে কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং ফুলকপি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় কুমার চৌধুরী কিষান। এখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও দুই স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে জাতীয় পার্টির সোলায়মান শেঠকে।

চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালী)

এই আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী সাতজন। মূল প্রার্থী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ব্যারিস্টার সানজিদ রশিদ চৌধুরী। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে কিছুটা লড়াইয়ের আভাস দিলেও নির্বাচনী মাঠে তেমনটি জনপ্রিয় কিংবা পরিচিত নন। তাছাড়া চট্টলবীর খ্যাত প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান হিসেবে নওফেল আলাদা সুবিধা পেয়ে থাকেন। যে কারণে ফলাফল নিয়ে প্রায় দুশ্চিন্তা ছাড়াই মাঠে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর)

এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নয়জন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিন মাস আগের উপনির্বাচনে কোনো শক্তিক্ষয় ছাড়াই জয়ী হলেও এবার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী বাচ্চু। তার মাথাব্যথার মূল কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সফল মেয়র মনজুর আলম। বিএনপি থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আওয়ামী লীগে ফিরেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজের প্রভাব ধরে রেখেছেন দানশীল মনজুর আলম। ফুলকপি প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি। এই আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নেতৃত্ব দেওয়া নগর যুবলীগের একই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। ফরিদ মাহমুদ কেটলি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এই আসনে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের ঘটনাও ঘটছে।

আরও পড়ুন>> হয়রানির অভিযোগে পটিয়ার ওসি-এসআইদের বদলি চাইলেন নৌকার প্রার্থী

চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর)

এই আসনে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন দুই প্রার্থী। বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফের নৌকাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চসিক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। সুমন কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণাতেও একে অন্যকে ছেড়ে না দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। শুরু হয়েছে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগও। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও দুইভাবে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া)

এই আসনে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। নৌকা প্রতীক পেয়েও চূড়ান্ত টেনশনে রয়েছেন তিনি। তার মূল মাথাব্যথা বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। সামশুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নৌকাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে শক্তি প্রদর্শন শুরু হয়েছে আসনটিতে। ঘটেছে হামলা, পাল্টা হামলা, ভাঙচুর, মামলা-পাল্টা মামলার ঘটনাও। দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে সংসদ সদস্য থাকায় সামশুল হক চৌধুরীর পাশে রয়েছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। তবে বড় অংশ রয়েছে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। এই আসনে সুষ্ঠু ভোট নির্বাচনী ফলাফলে তারতম্য গড়ে দিতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

আরও পড়ুন>> এমপি নদভীর দেহরক্ষী প্রত্যাহার করলো নির্বাচন কমিশন

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)

এখানে চূড়ান্ত প্রার্থী সাতজন হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো প্রার্থী নেই। মূলত বিএনপি ভোটবর্জন করার সুফল পুরোপুরিই পেতে যাচ্ছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। অন্যদিকে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর সন্তান হিসেবে ভোটারদের কাছেও আলাদা কদর রয়েছে তার।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ)

চন্দনাইশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আট প্রার্থী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। নির্বাচনী মাঠে নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নৌকা প্রতীকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের আবদুল জব্বার চৌধুরী। ট্রাক প্রতীক নিয়ে নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আবদুল জব্বার চৌধুরী। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজ দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনের সুখস্মৃতি সংসদ নির্বাচনের মাঠে আলাদা আত্মবিশ্বাসের জোগান দিয়েছে আবদুল জব্বার চৌধুরীকে। এছাড়া এই আসনে স্থানীয়দের মণিকোঠায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী অলি আহমদ। বিএনপির সঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচনের মাঠে নেই অলি আহমদ। এর আলাদা সুফলও পাচ্ছেন আবদুল জব্বার। তাই নৌকা প্রতীক পেয়েও পাস করতে হলে আবদুল জব্বার চৌধুরীর চ্যালেঞ্জ নির্বাচনী মাঠে মোকাবিলা করে আসতে হবে নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে।

আরও পড়ুন>> নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন: ডা. শাহাদাত

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া)

এখানে চূড়ান্ত প্রার্থী সাতজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। এই আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনের মাঠে ঈগল প্রতীক নিয়ে নৌকার নদভীকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মোতালেব। মোতালেবকে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে শক্তি জুগিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় দুই নেতা। মূলত নির্বাচনের আগে থেকেই কেন্দ্রীয় এক প্রভাবশালী নেতার প্রকাশ্য সমালোচনা করে আসছিলেন নদভী। যে কারণে প্রভাবশালী ওই নেতা আড়ালে থেকে নৌকার বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ নদভী সমর্থকদের। এরই মধ্যে আসনটিতে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুই প্রার্থী অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দিচ্ছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। যে কারণে নির্বাচন কমিশনকে আলাদা চোখ রাখতে হচ্ছে আসনটিতে।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)

চট্টগ্রাম-৮ আসেনের মতো বাঁশখালীতেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১০ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এরই মধ্যে বেশকিছু সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা। এরই মধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান সিআইপি ঈগল প্রতীক নিয়ে মোস্তাফিজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত শিক্ষা ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানে অবদান রাখার কারণে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব তৈরি করেছেন মুজিবুর রহমান সিআইপি। অন্যদিকে ট্রাক প্রতীক নিয়ে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন নির্বাচনী মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন।

ইএ/এএসএম