লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আটকের পর আবদুর রহিম রনি নামের এক আসামিকে পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
Advertisement
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলি অঞ্চল রায়পুর) আদালতে রনির স্ত্রী রিনা আক্তার পাঁচ কর্মকর্তাসহ সাত পুলিশের নামে মামলাটি করেন।
সন্ধ্যায় আদালতের পেশকার নুরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মামলা নথিভুক্ত হলেও কোনো আদেশ দেননি বিচারক।
বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে আবদুর রহিমকে রায়পুর সীমান্ত বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়। তখন তার কাছে কোনো অস্ত্র ও মাদক পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেলেও থানা হাজতে রাখেনি। কোনো একটি গোপন কক্ষে রেখে তাকে মারধর করে। পরে একইদিন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়। পুলিশ হেফাজতে মারধরের মামলা ও হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ জব্দ করতে আমরা আদালতে আবেদন করেছি।
Advertisement
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ, নুরুল ইসলাম, আবু হানিফ (২), সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সফিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল আতিক উল্যা ও ইউসুফ ঢালি।
এজাহার সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের সীমান্ত বাজার রায়পুর-চাঁদপুর সড়ক থেকে অভিযুক্তরা রনিকে আটক করেন। তখন তার সঙ্গে গরু বিক্রির ৯০ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে গেছেন। পরে তাকে নিয়ে এসে মারধর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেন। পরে সেখানে পানি চাইলে টিউবওয়েলের সঙ্গে তার মাথায় আঘাত করেন অভিযুক্তরা।
আটকের খবর পেয়ে রনির স্ত্রী রায়পুর থানায় বারবার গেলেও স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে তিনি সদর থানা, গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় ও জেলা কারাগারে খোঁজ নিয়েও স্বামীর সন্ধান পাননি। ফের রায়পুর থানায় গেলে সেখানে রনির মোটরসাইকেল দেখতে পান তিনি। তখন তিনি স্বামীর সন্ধান চাইলে তাকে বিভিন্ন কথা শোনানো হয়। পরে এসআই হানিফকে কল দিয়ে স্বামীর সন্ধান চান। হানিফ তার স্বামীকে ছাড়তে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এত টাকা নেই জানালে রনিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে বলে হুমকি দেন পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে পুলিশের দাবি, ১৮ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রনিসহ দুজনকে একনলা বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় অস্ত্র, ১৮০ পিস ইয়াবা ও ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
Advertisement
বাদী রিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর ব্যাপারে এসআই হানিফের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমার কাছে দুই লাখ টাকা চেয়েছেন। তারা আমার স্বামীর কাছে থেকেও ৯০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। তবুও আমি আরও ২০ হাজার টাকা দেবো বলে জানিয়েছি। একদিন আগে আটক করে তিনটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন রাতে আমার স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।’
মামলায় প্রধান অভিযুক্ত রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ বলেন, মামলার বিষয়টি আমি জানি না। তবে ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ে অভিযান চালিয়ে আমরা রনিকে অস্ত্রসহ আটক করি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, তারা (ভুক্তভোগী) মামলা করতেই পারেন। তবে অভিযোগ সত্য নয়। রনির বিরুদ্ধে এর আগেও কয়েকটি মামলা রয়েছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, অস্ত্র ও মাদকসহ আসামিকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানি। এর বেশি কিছু জানা নেই। আসামির স্ত্রী মামলা করেছে কি না তাও জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, এসআই হানিফ আসামির স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা চাওয়ার বিষয়ে কোনো কিছুই আমাকে জানানো হয়নি। তারা আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও করেননি।
কাজল কায়েস/এসআর/এমএস