রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেবিনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশের চেষ্টার ঘটনায় গ্রেফতার সুজন নামের এক ব্যক্তি রিমান্ডে এলোমেলো তথ্য দিয়েছেন। কার পরামর্শে এবং ঠিক কী উদ্দেশ্যে তিনি খালেদা জিয়ার কেবিনে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি যে ক্ষতিকর কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই হাসপাতালে প্রবেশ করেছিলেন, প্রাথমিকভাবে তা প্রতীয়মান হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদিনের রিমান্ড শেষে সুজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন।
সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দা আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে আটক রাখার আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে এসব তথ্য জানান।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সপ্তম তলায় চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। গত শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সুজন নামের ওই ব্যক্তি হঠাৎ হাসপাতালে প্রবেশ করেন এবং সপ্তম তলার সংরক্ষিত ভিআইপি ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের বিশ্রাম কক্ষে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
Advertisement
কারাগারে আটক রাখার আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ২৩ ডিসেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিকিউরিটি রাউন্ড দেওয়ার সময় সংরক্ষিত ভিআইপি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত রেজিস্টার ডা. তানিয়া আলমের কাছ থেকে পুলিশ খবর পায় যে, সুজন নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালের সপ্তম তলার সংরক্ষিত ভিআইপি ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের বিশ্রাম কক্ষে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান। কর্তব্যরত চিকিৎসক অসন্তুষ্ট হয়ে সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে তাকে বের করে দেন। তখন তিনি দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রাউন্ড ফ্লোরে দায়িত্বরত সিকিউরিটি তাকে হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আটক করে এভারকেয়ার হাসপাতালের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে আরও জাননো হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সুজন নিজের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান। কর্তব্যরত চিকিৎসক অনুমতি না দিলে তিনি অশোভন আচরণসহ নানা ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া খবরে তদন্তকারী কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্সসহ এভারকেয়ার হাসপাতালের কন্ট্রোল রুমে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন এবং ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি সুজন এলোমেলো তথ্য দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কী কারণে ও কী উদ্দেশে এবং কার পরামর্শে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার সঠিক কোনো তথ্য আসামি দেননি। তবে ক্ষতিকর কোনো উদ্দেশে তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আসামি কোনো ধর্তব্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে জোর সন্দেহ হওয়ায় আপাতত ফৌজদাররি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়।
গত রোববার (২৪ ডিসেম্বর) আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দা দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
Advertisement
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে সুজন নামের ওই অপরিচিত ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার কেবিনে প্রবেশের চেষ্টাও করেন তিনি। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
জেএ/এমকেআর/এমএস