লাইফস্টাইল

যে কারণে উৎসবের মৌসুমে হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোকের ঘটনা বাড়ে

শীতে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন লেগেই থাকে। আর এ মৌসুমেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে শীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঘটনা বাড়ে।

Advertisement

আর এখন শুধু বয়স্ক নয় কমবয়সীদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে হৃদরোগের সমস্যা। এর মূল কারণ হলো অনিয়মিত জীবনযাপন ও শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া।

আরও পড়ুন: পানিতে ভিজিয়ে না রেখেও যেভাবে খাবেন চিয়া সিড

শীতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, যা হার্টের উপর কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয়। এই শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

Advertisement

বিশেষ করে যদি রোগীর হার্টের অবস্থা ভালো না থাকে। আরও বেশ কিছু কারণ আছে যেগুলো উৎসবের মৌসুমে হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোকের ঘটনা বাড়িয়ে দেয়-

কম শরীরচর্চা

শীত অলসতায় ভোগেন অনেকেই। ফলে শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা কমে যায়। আর অলস জীবনযাপন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি তিন গুণ বাড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: লেপ-কম্বল ব্যবহারের আগে রোদে না দিলে কী হয়?

Advertisement

পানিশূন্যতা

এমনিতেই শীতে পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে দেন সবাই। ফলে শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হতে পারে। আর ডিহাইড্রেশন হৃৎপিণ্ডকে চাপ দিতে পারে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।

অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

উৎসবের মৌসুমে বিশেষ করে ক্রিসমাস ও নববর্ষ উদযাপনসহ বিভিন্ন দাওয়াত খাওয়ার কারণেও হৃদযন্ত্রের খারাপ হতে পারে। কারণ উচ্চ চর্বি ও চিনিযুক্ত খাবার স্থূলতা, ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি হৃদরোগেরও ঝুঁকি বাড়ায়।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ ধমনী ও হৃদপিণ্ডকে চাপ দেয়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই রক্তচাপ নিয়নন্ত্রণে রাখা জরুরি।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে নিজেকে সুস্থ রাখতে কী কী করবেন?

উচ্চ কোলেস্টেরলের

শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল বেড়ে যাওয়ার ফলে ধমনীতে প্লাক তৈরি হয়। যা এথেরোস্ক্লেরোসিস সৃষ্টি করে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটে।

ধূমপান ও তামাক ব্যবহার

ধূমপান রক্তনালিগুলোকে সংকুচিত করে ও রক্তের জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যা পরবর্তী সময়ে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও উচ্চ রক্তে শর্করা রক্তনালির ক্ষতি করে, এথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: শীতে জয়েন্টে ব্যথা, মুখে ঘা হয় যে ভিটামিনের ঘাটতিতে

স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন

শরীরের অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটের চারপাশে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে চাপ সৃষ্টি করে, যা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো পরিস্থিতিতে অবদান রাখে।

অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন

ভারী মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়মিত হৃদযন্ত্রের ছন্দের কারণ হতে পারে, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

স্ট্রেস

দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস অস্বাস্থ্যকর আচরণে অবদান রাখে ও রক্তচাপ বাড়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্ডিওভাসকুলার রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ায়।

আরও পড়ুন: করোনার নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ এর লক্ষণ কী কী?

প্রতিরোধে কী করবেন?

ভারি পোশাক পরুন

শীতে উন্নতমানে আরামদায়ক পোশাক পরুন। আর অবশ্যই হাতের অংশ ঢেকে রাখার চেষ্টা করুন। এতে রক্তনালির সংকোচন প্রশমিত করতে সাহায্য করে, যা হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ কমায়। এর পাশাপাশি বুক ও মাথা ভালো করে ঢেকে রাখুন। এতে হৃদয়ের উপর চাপ কম পড়বে।

শরীরচর্চা করুন

শারীরিক কার্যকলাপের মাত্রা বজায় রাখতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ও সামগ্রিক হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতে জিমে গিয়ে বা বাড়িতে শরীরচর্চা করুন।

হার্ট ভালো রাখে এমন খাবার খান

হৃদরোগের ঝুঁকিতে অবদান রাখে এমন উচ্চ চর্বি ও উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এর বদলে ফল, শাকসবজি ও পুরো শস্য সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন।

আরও পড়ুন: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে যে খাবারে

হার্টের স্বাস্থ্যে পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফল, শাকসবজি ও পুরো শস্য সমৃদ্ধ হার্ট-স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা কার্ডিওভাসকুলার সুস্থতাকে সমর্থন করে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

ডিহাইড্রেশন রোধ করতে নিয়মিত পানি পান করুন। এর সঙ্গে অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন সেবন এড়িয়ে চলুন। এ অভ্যাস কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

শীতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য মেডিটেশন ও ব্রিদিং এক্সসারসাইজ করা জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ১০-২০ মিনিট হলেও মেডিটেশন করুন।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা জরুরি। কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির কারণগুলো পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

জেএমএস/এমএস