খেলাধুলা

সৌম্য সম্পর্কে হাথুরু: আমি না সে নিজেই নিজেকে ফিরিয়ে এনেছে

বাংলাদেশের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কেন যেন সব সময়ই সৌম্য সরকারকে অনেক পছন্দ করেন। এক কথায় বলা যায়, সৌম্য তার অনেক পছন্দের ক্রিকেটার। দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের কোচ হয়ে এসে সৌম্যকে জাতীয় দলের বাইরে দেখে নির্বাচকদের বলেছিলেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে।

Advertisement

হাথুরুর খুব ইচ্ছে ছিল, সৌম্যকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলানোর; কিন্তু ওই সময় তার বাজে ফর্মের কারণে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে এবার সাকিব আল হাসান না থাকায় ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং পারেন এবং নিউজিল্যান্ডের উইকেটে ওপরের স্তরে ঘাস থাকে, সৌম্যর জেন্টাল মিডিয়াম পেস কাজে দিতে পারে- এই বিবেচনায় তাকে দলে নেয়া হয়। তবে প্রথম ম্যাচে ডানেডিনে যারপরনাই ব্যর্থ তিনি। সবাইকে হতাশ করলেন।

কিন্তু প্রথম ম্যাচে না পারলেও পরে নিজেকে ঠিক মেলে ধরেছেন সৌম্য। দল জেতাতে না পারলেও নেলসনে দ্বিতীয় ম্যাচে রীতিমত সাড়া জাগিয়ে ফেলেন তিনি। এক দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে বসেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৬৯ রানের দীর্ঘ ঝোড়ো ইনিংস বেরিয়ে আসে এ বাঁ-হাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে। ১৫১ বলে করা ওই ইনিংসের ৯৬ রান আসে শুধু বাউন্ডারি (২২টি) ও ছক্কা (২টি ) থেকে।

লিটন দাস (১৭৬) ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের কোন ব্যাটারের ওয়ানডেতে এত লম্ব ইনিংস নেই। সেটাই শেষ নয়। নেপিয়ারে ঘাসের উইকেটে ছোট ছোট সুইং আর খুব ভাল লেন্থে বল ফেলে ৩ কিউই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে নিজের বোলিং সামর্থ্যের পরিচয়টাও নতুন করে দিয়েছেন সৌম্য।

Advertisement

সব মিলিয়ে নিজের অন্তর্ভুক্তিটাকে যথার্থতার প্রমাণ দিয়েছেন এ বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। খুব স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচকরা এবং বিশেষ করে হেড কোচ হাথুরু খুব খুশি, সন্তুষ্ট।

কারণ, ফর্মের বাইরে থাকা সৌম্যকে আবার দলে নেয়ার বিপক্ষে ছিলেন ক্রিকেট অনুরাগি ও ভক্ত-সমর্থকদের বড় অংশ। তাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছেন সৌম্য। এটা কোচ হাথুরুর নৈতিক জয়।

তিনি কি ভাবছেন? সৌম্যর ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠা কিভাবে দেখছেন টাইগার হেড কোচ? প্রিয় শিষ্য ভাল খেলায় যারপরনাই খুশি হাথুরু এবং বলে দিলেন, তিনি জানতেন অর্থ্যাৎ বিশ্বাস করতেন সৌম্য ভাল খেলবে। সৌম্যর সামর্থের ওপর তার আস্থা ও বিশ্বাস ছিল সব সময়।

তাই মুখে এমন কথা, ‘সে (সৌম্য) যেভাবে পারফর্ম করেছিল, তাতে আমি খুশি। আমি জানতাম সে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার মতো ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখে। আমি যখন এখানে ছিলাম তখন সে এটা করে দেখিয়েছে। আমরা সবাই বলি, ক্লাস ইজ পারমানেন্ট, ফর্ম অনেক কিছুর কারণেই প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে আপনার মাথায় কি চলছে। আপনার মাথা যদি পরিষ্কার থাকে, আপনি যদি আপনার ভূমিকা বুঝতে পারেন, পরিবেশের সঙ্গে কমফোর্টেবল থাকলে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারে। তার মাথাটা একেবারে পরিষ্কার, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সে পারফর্ম করতে না পারার মতো কোনো কারণ নেই।’

Advertisement

হাথুরু কিছুতেই মানতে রাজি নন যে তিনিই সৌম্যকে ফিরিয়ে এনেছেন। তার উল্টো দাবি, ‘আমি না ও নিজেই নিজেকেই ফিরিয়েছে। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে এটা সৌম্যর জন্য ছিল যে, হয় মারও না হয় মরো। এটা প্রমাণ করে সে মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী। সে জানতো পুরো দেশ তার বিপক্ষে ছিল। সে যদি ব্যর্থ হতো, তাহলে কি হতো সেটা আমরা জানি না। আমরা যে কাজটা ভালো করেছি সেটা হলো, তাকে বিশ্বাস করেছি, তাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছি এবং পুরো দল তাকে সমর্থন দিয়েছে। তাতে মনে হয়ে সে ফর্ম ফিরে পেয়েছে।’

এআরবি/আইএইচএস