জাতীয়

বাংলা একাডেমি থেকে ১১১ রিকশা চিত্রশিল্পীকে সম্মাননা

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ‘ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র’ অন্তর্ভুক্তি ও স্বীকৃতি উপলক্ষে ১১১ জন রিকশা চিত্রশিল্পীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সম্মাননা দেয় বাংলা একাডেমি। এ সময় রিকশা চিত্রশিল্পীদের ১০ হাজার টাকা মূল্যের চেক, সনদপত্র ও স্মারক চাদর (উত্তরীয়) দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানার পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর।

Advertisement

প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, এর আগে আমরা বাউল গান, শীতল পাটি বুনন, মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং জামদানিতে ইউনেস্কোর অপরিমেয় ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছি। এবারের যে অর্জন সেটা নিয়ে প্রায় আট বছর ধরে আমাদের কাজ চলছিল। তারা (ইউনেস্কো) এক সময় এটা ফিরিয়ে দিয়েছিল। সর্বশেষ আমাদের রিকশাচিত্র সংশ্লিষ্টদের শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনার ধরুন এই স্বীকৃতি পেলো।

তিনি বলেন, আমাদের এই অর্জনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর পর তিনি বলেছিলেন করোনার সময় মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পী-সাহিত্যিকদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু, রিকশাচিত্র যারা করে তাদের খোঁজ-খবর রাখা হয়নি। ওই সময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন যে, ‘আমি ৭০ জন রিকশা চিত্রশিল্পীকে প্রণোদনা দিয়েছি’। তখন আমি একটু লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। তখনই মূলত আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই রিকশাচিত্র শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কাজ করব। সেই প্রক্ষিতেই, মূলত আমাদের এই আয়োজন।

রিকশা চিত্রশিল্পীদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আর্ট করতে মূলত এনামেল পেইন্ট দেওয়া হয় না। কিন্তু, আপনারা এনামেল পেইন্ট দিয়ে কাজ করে সেই অসাধ্য কাজ সাধন করেছেন। আর এই কাজটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে পেরেছে। এটা শুধু আপনাদের জন্যই হয়েছে। এটা আপনাদের দ্বারাই সম্ভব, বাঙালির দ্বারাই সম্ভব। যারা এর সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ রিকশা চিত্রশিল্পীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা এই রিকশাচিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত তারা খুব ছোটবেলা থেকেই এই আর্টের কাজ করে যাচ্ছেন। আপনাদের কারণেই বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের কাছে নতুনভাবে পরিচিত হলো। আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে শুধু বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মূল অবদানটা আপনাদেরই।

Advertisement

তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার একটি অনুরোধ, আপনাদের আর্টে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অবশ্যই রাখবেন। যার জন্ম না হলে আমরা এই দেশ পেতাম না। এক্ষেত্রে, আমার আরেকটা অনুরোধ থাকবে, আর তা হলো বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে যে বড় বড় উন্নয়ন এবং মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে সেই প্রকল্পগুলো আপনাদের আর্টে আমরা দেখতে চাই।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, রিকশা চিত্রের মাধ্যমে আমাদের দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে যারা কাজ করেছেন, যারা নিজেদের উদ্ভাসিত করেছেন, সব মিলিয়ে তারা আমাদের সামনে একটি নতুন দিগন্ত তৈরি করেছেন। এই দিগন্ত তৈরি করার জন্যই আজ বাংলা একাডেমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমরা মনে করি, এইভাবে সবাইকে সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে আমাদের কাজগুলো একটি বড় জায়গায় উপস্থাপন করে প্রজন্ম এগিয়ে যাবে।

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বক্তব্যে রিকশাচিত্র শিল্পকে শক্তিশালী রাখার জন্য রিকশা যেন কখনো বন্ধ না করা হয় সেই আহ্বান জানান। প্রয়োজনে শহুরে রাস্তাঘাটে রিকশার জন্য আলাদা লেন করার প্রস্তাব পেশ করেন।

আল সাদী ভূঁইয়া/এমআরএম/জেআইএম