বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ, ১ জানুয়ারি সারাদেশে বই উৎসব করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারের রুটিন কার্যক্রম হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যবই বিতরণে এ উৎসব আয়োজনে সম্মতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
Advertisement
তবে, কুমিল্লার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়ভাবে মাধ্যমিকের (ষষ্ঠ থেকে নবম) বই উৎসব করার সম্মতি দেয়নি ইসি। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী বিধির কারণে তাতে ‘অসম্মতি’ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। ফলে এবার মাধ্যমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব হচ্ছে না।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী— বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ করবেন।
অন্যদিকে, প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটিও হবে কি না, তা এখনো জানায়নি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
Advertisement
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে বই উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলীর সই করা চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, অন্যান্য বছরের ন্যায় ১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখেও শিক্ষাবর্ষ শুরুর দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ সংক্রান্ত ‘বই উৎসব’ সরকারের রুটিন কাজ হিসেবে আয়োজনে নির্বাচন কমিশন সম্মতি প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণের মাধ্যমে ‘বই উৎসব’উদযাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচন কমিশন সরকারের রুটিন কাজ হিসেবে সারাদেশে বই উৎসব আয়োজনে ‘সম্মতি’ দেয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী— কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় সুয়াগঞ্জ তফাজ্জল আহাম্মদ চৌধুরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় বই উৎসব আয়োজনের ‘অসম্মতি’ দেন সিইসি।
ইসি সচিবালয়ের থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, মাঠপর্যায়ের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মধ্যে যথানিয়মে বই বিতরণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ কাজ শুরুর সম্মতি দিলে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
Advertisement
শুধুমাত্র কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগঞ্জ তফাজ্জল আহাম্মদ চৌধুরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুষ্ঠান আয়োজনে নির্বাচন কমিশন অসম্মতি জ্ঞাপন করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির চার কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য পাঁচ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) শিশুদের জন্য এবার মোট দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩১ কপি বই ছাপা হচ্ছে। অন্য বইয়ের মধ্যে পাঁচ হাজার ৭৫২ কপি ‘ব্রেইল’বই ছাপা হবে। তাছাড়া শিক্ষকদের ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি ‘শিক্ষক সহায়িকা’ দেওয়া হবে।
এএএইচ/এমএএইচ/