প্রবাস

বছরের এই সময়টা আমার অনেক প্রিয়

বছরের এই সময়টা আমার অনেক অনেক প্রিয়। চারপাশে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়। কেমন খুশি খুশি ভাব চারদিকে। সবার চেহারাতে হাসির আভা। সেসব দেখে আমার নিজেই বেশ হাসি খুশি থাকি। আশপাশের হামটি-ডামটিরা না হাসলে গুতা দিয়ে হাসাই। সবকিছুতেই উৎসব উৎসব ভাব ঠিক যেন ঈদের আমেজ।

Advertisement

হুমম, প্রতি বছর বড়দিনের ঠিক আগে দিয়ে পুরো ডিসেম্বর মাসই এমন, কাজেও ছুটি থাকে সুতরাং পোয়াবারো। চারদিকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, উঠোন এবং শপিংমলগুলো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর। দোকানগুলোতে সেল আর সেল।সবকিছুতেই মূল্যছাড়।

সবার ট্রলি উপচে পড়ছে, কেনাকাটা করছে। কেউ কেউ গাড়িতে সব শপিং রেখে এসে আবার ঢুকছে! এসব দেখে শপিং এ গেলেই আমারও একগাদা জিনিস কেনা হচ্ছে ,প্রয়োজনীয়গুলো তো অবশ্যই, যা দরকার নেই সেগুলোও কেনা হচ্ছে, মনে হয় কিনে রাখি, পরে কাজে লাগবে, এত এত সেল তো পরে থাকবে না, এই করে গুচ্ছের জিনিস কেনা হয়ে যায়, যদিও আমরা কোনো বোনাস পাই না তবুও। ক্রিসমাসের সময় অন্তত বোনাস দেওয়া উচিত, কী বলেন আপনারা?

তো এই যে মনের আনন্দের অতিসাজ্জে এত টাকা খরচ হয় এটা কি প্রয়োজন নাকি অপচয় সে হিসেব আবার আর এক জটিল সমীকরণ। অনেকটা পাটিগণিতের চৌবাচ্চার দুই নল দিয়ে পানি পড়ার গতির মতো, কোন গতিতে পানি পড়লে চৌবাচ্চা খালি হবে! কিন্তু তলানিতে তো একটু থেকেও যাবে তাই না? সেই গল্প না হয় আরেকদিন। আপাতত সান্তা ক্লস কিডসদের যে উপহার দিয়ে যাবে তাহা আমাকেই কিনে প্যাক করে মধ্যরাতে দোরগোড়ায় রাখতে হবে ভাবতেই মুখের হাসি একটু কমে যাচ্ছে, আরও খরচ!

Advertisement

এই উৎসবমুখর আনন্দময় সময়ে একটা জিনিস আমার খুব মনে বাজে। দেশ ছেড়েছি বহু বছর, এই দেশেই নিবাস। জন্মভূমিতে আর ঈদ করার সৌভাগ্য হয় না, সেই আফসোস মনে নিয়েই ক্রিসমাসের এই জমজমাট ভাবমূর্তি আমি ও আমরা উপভোগ করি কিন্তু মনে আছে ঈদের আগে দেশে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেত এবং এখনো সবকিছুর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায় ঈদের কেনাকাটা করতে। উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তরা হয়তো অতটা টের পায় না, তাই তাদের কাছে ঈদ বেশ আনন্দ নিয়েই আসে কিন্তু নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা হিমশিম খেয়ে যায় ঈদের বাজারে। অনেকে হয়তো বোনাস পায় কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পেরে উঠতে পারে না দিনশেষে তাদের হিসেব বাড়তেই থাকে, কোনটা কিনবে আর কোনটা বাদ দেবে! সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এখনও ঈদ তাই দেশে অনেকেরই কাছেই কপালের স্থায়ী তিন ভাঁজ বা গভীর দীর্ঘশ্বাস।

দেশে সরকার এত টাকা খরচ করে খেলাধুলা, আতশবাজী, কুচকাওয়াজ, বিশাল সদস্য বিশিষ্ট বিদেশ সফরসহ ইত্যাদি আরও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে। চাইলে কি একটু পারে না ওইসব খাতে খরচ কমিয়ে ঈদের সময় দ্রব্যমূল্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে? কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিতে যেমন পোশাক এবং খাদ্যবস্তুতে? যেগুলো সবারই কিনতে হয়। দেশের কোটি কোটি মানুষ তাহলে মনে স্বস্তি নিয়ে ঈদ করতে পারতো।

আরও পড়ুন: শান্তির বার্তা নিয়ে এলো বড়দিন

Advertisement

আচ্ছা দেশের জনগণের প্রয়োজন আগে নাকি কিছু না করলেও চলে টাইপ কাজের পেছনে খরচ করা আগে? বিদেশ সফরে থেকে ফিরে সরকারি নেতা ও আমলারা কি কিছু ভালো উদাহরণ বাস্তবায়ন করতে পারেন না? একটি পরিবারে উন্নয়নের চিন্তা যেমন বাবা-মা করেন তেমনি একটি দেশের ক্ষেত্রে সেই চিন্তা কিন্তু সরকারকেই করা উচিত।

দেশে একেবারেই নাকের ডগায় ভোট...যেসব খাতে উন্নয়ন করলে আলাদা করে ভোট চাওয়ার দরকার পড়ে না, সরকার গঠনের পর নেতাকর্মীরা সেসব খাত কেন ভুলে যায়?

আর জনগণকে বলছি, গোস্বা করে ঘরে বসে থাকলে আপনাদেরই লস, চোখ বন্ধ করে ভোট দিয়ে কপালের দোষ দিলে আপনাদেরই বিশাল ক্ষতি। সুতরাং জেনে বুঝে যোগ্য মানুষকে ভোট দিন, নিজের নাগরিক অধিকার আদায়ের সোচ্চার হোন। আপনার একার ভোট হয়তো তেমন কিছু না, কিন্তু অনেকগুলো ভোট একসাথে অবশ্যই একটা শক্তিশালী বার্তা, মনে রাখবেন একতাই বল।

বড়দিনের শুভেচ্ছা সবাইকে

এমআরএম/এমএস