রাজনীতি

স্বস্তিতে শুরু হলেও অস্বস্তিতে বছর পার বিএনপির

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ দিয়ে ২০২২ সাল শেষ করেছিল বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা করে দলটি। এরপর ২০২৩ সালকে নির্বাচনী বছর ধরে জানুয়ারি মাস থেকেই সরকারের পতনের আন্দোলনে সরব হয়ে ওঠে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে চলে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের বছর খানেক আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগগুলোতে ধারাবাহিক সমাবেশ কর্মসূচি করে বিএনপি, যা শেষ হয় ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশের মধ্য দিয়ে।

Advertisement

তবে ওই বছরের একেবারে শেষভাগে ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৭ দফা ঘোষণা করেন। সেই ঘোষণায়ই তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ২৭ দফা হচ্ছে বিএনপির রূপরেখা। পরে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আরও পরামর্শ হলে সেগুলো রূপরেখায় যোগ করার কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুন>> দুঃসময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মিত্ররা, তবুও সতর্ক বিএনপি

আসে নতুন বছর ২০২৩ সাল। বছরের শুরু থেকেই ‘এক দফা এক দাবি’র ইঙ্গিত দিতে থাকে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় একের পর এক কর্মসূচি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব কর্মসূচি ছিল অনেকাংশেই অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ। বরং দলটির নেতাদের অভিযোগ ছিল, বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করতে সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। নেতাকর্মীরা যেন বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে আসতে না পারে সেজন্য সড়ক, নৌ ও রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও সরকারদলীয়রা বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।

Advertisement

বছরের শুরু থেকেই বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্যবিন্দুতে পরিণত হয় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই লক্ষ্যের ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুলাই সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওইদিন গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দফা ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে ছিল- বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছানো; ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন; সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা; পরপর দুই মেয়াদের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না; সংসদে ‘উচ্চ-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিবেচনা করা; স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল; ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন; ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন; ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন; সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ; দেড় দশকে গুম-খুনের বিচার; ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন; ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত না করা; মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন; যুক্তরাজ্যের আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন এবং সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা।

ঠিক তার একদিন আগেই গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে আসে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা। এক দফা ঘোষণায় ওইদিন মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার লক্ষ্যে এই এক দফা।

বছরের শুরু থেকেই ‘এক দফা এক দাবি’র ইঙ্গিত দিতে থাকে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় একের পর এক কর্মসূচি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব কর্মসূচি ছিল অনেকাংশেই অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ। বরং দলটির নেতাদের অভিযোগ ছিল, বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করতে সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে

Advertisement

বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানও এক দফার অন্তর্ভুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপিসহ আরও প্রায় ৩৬টি রাজনৈতিক দল এই এক দফা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের গতিপথেও আসে বৈচিত্র্য। ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে জোট মিত্ররা। শরিকদের সঙ্গে টানাপোড়েন কাটিয়ে সম্পর্কোন্নয়নেও মনযোগী হয় বিএনপি। তবে বছরের শুরুটা বেশ সম্ভাবনা আর স্বস্তি নিয়ে শুরু হলেও শেষভাগে রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি আর হতাশা বেড়েছে। বছরজুড়ে মাঠের রাজনীতিতে চাঙ্গা থাকলেও দল নির্বাচনের বাইরে থাকার কারণেও নেতাকর্মীদের একটি অংশ মানসিকভাবে ঝিমিয়ে পড়ছেন। বিশেষত গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর এর প্রতিফলন আরও স্পষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন>> খোলস ছেড়ে ফের প্রকাশ্যে নেতারা, নতুন বার্তা দিচ্ছে বিএনপি?

তবে এসময়ে বিএনপির রাজনীতিতে দৃশ্যপটে আসেন তারেক রহমান। ১২ জুলাই নয়াপল্টনের সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তার বক্তব্য দেওয়া ছিল দলের নেতাকর্মীদের কাছে বড় চমক। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ দলের কর্মসূচিকে বেগবান করেছে। বিভিন্ন সময় তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও ঢাকাসহ সারাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে এর প্রভাব পড়েনি। বরং সেসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল আশা জাগানিয়া। ফলে ধীরে ধীরে দলে তারেক রহমানের একক নেতৃত্ব আরও সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।

এরই মধ্যে ঘনিয়ে আসে নির্বাচনের সময়। দিন যত যায় বিএনপির এক দফার দাবি আরও জোরালো হয়। বিপরীতে চলে দল ভাঙার বহু চেষ্টা-ফিকির। নির্বাচন ঘিরে বিএনপির একাধিক নেতা ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা বিএনপিতে চূড়ান্ত ভাঙন ধরাতে পারেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বিএনপির এই ‘অখণ্ডতাকেই’ বছরের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

শুধু মাঠের রাজনীতি নয়, বছরজুড়ে কূটনৈতিক মহলেও বিএনপির জোড়ালো তৎপরতা দেখা গেছে। বিশেষ করে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে চায়ের আমন্ত্রণে বিএনপি নেতারা ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

আরও পড়ুন>> হারুনকে মনোনয়ন দিলেও নৌকা উঠলো শাহজাহানের হাতে

বছরের শুরু থেকেই সরকারিবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সমমনা ৬০টি রাজনৈতিক দল নিয়ে পদযাত্রা, অবস্থান কর্মসূচি, গণমিছিল ও রোড মার্চ কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের শক্তির জানায় দেয় দলটি। ধারাবাহিকভাবে এসব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন হলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ নেয় গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলটির মহাসমাবেশ ঘিলে। ওইদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পরদিন ২৯ অক্টোবর ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় তিনদিনের অবরোধ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের গতিপথেও আসে বৈচিত্র্য। ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে জোট মিত্ররা। শরিকদের সঙ্গে টানাপোড়েন কাটিয়ে সম্পর্কোন্নয়নেও মনযোগী হয় বিএনপি। তবে বছরের শুরুটা বেশ সম্ভাবনা আর স্বস্তি নিয়ে শুরু হলেও শেষভাগে রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি আর হতাশা বেড়েছে

ওই মহাসমাবেশের পরপরই দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হন। তাদের অনেকে বর্তমানে কারাগারে। এরপর বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে। ৩১ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ এবং ৪ দফায় পাঁচদিন হরতাল পালন করে বিএনপি ও সমমনারা। এরই মধ্যে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে সর্বসাধারণের প্রতি সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। গত ২০ ডিসেম্বর সরকারের পদত্যাগ দাবিতে সারাদেশে এই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় দলটি। একই দিন ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে গণসংযোগ এবং ২৪ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করে বিএনপি। যে কর্মসূচি এখন চলমান।

আরও পড়ুন>> ‘নির্বাচন ঠেকাতে’ ডিসেম্বরে আসনভিত্তিক আন্দোলনে যাবে বিএনপি

বছরের অধিকাংশ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষ ভীষণ অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। বিশেষত গত ৩০ জুলাই পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে বিএনপির যে অবস্থান কর্মসূচি ছিল সেই কর্মসূচি ঘিরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানদের দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পুলিশ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে দৌড় দেওয়ার ভিডিও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। ওইদিন সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজপথে রক্তাক্ত হয়ে বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সেই ভিডিও প্রকাশ হলে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ড. আব্দুল মঈন খানের আয়োজিত নৈশভোজ নিয়েও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ শোরগোল তৈরি হয়।

গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান মাঠে সক্রিয় থাকা অন্য অনেক নেতাকর্মীও। ফলে বছরজুড়ে আন্দোলনের যে জমাট অবস্থা তৈরি ছিল বছরের শেষভাগে এসে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। যে ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি বিএনপি। বিক্ষিপ্ত ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিলের ওপর ভর করে চলছে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি। বলা চলে, স্বস্তিতে শুরু হলেও অস্বস্তিতে বছর পার করছে বিএনপি।

গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান মাঠে সক্রিয় থাকা অন্য অনেক নেতাকর্মীও। ফলে বছরজুড়ে আন্দোলনের যে জমাট অবস্থা তৈরি ছিল বছরের শেষভাগে এসে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। যে ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি বিএনপি। বিক্ষিপ্ত ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিলের ওপর ভর করে চলছে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি। বলা চলে, স্বস্তিতে শুরু হলেও অস্বস্তিতে বছর পার করছে বিএনপি

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদধারীসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন নেতা দল ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেন। সাংগঠনিক ও ভোটের মাঠে এই নেতাদের তেমন গুরুত্ব না থাকলেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীককে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পারাটা বিএনপির নেতৃত্বের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করার পাশাপাশি বছরজুড়েই দলের চেয়ারপাসন অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ইস্যুটিও ছিল বিএনপির আলোচনার কেন্দ্রে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে কারামুক্ত খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কখনো কেবিনে আবার কখনো আইসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় এসে ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচার করেন। ২৮ অক্টোবর সেই চিকিৎস দল যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান।

আরও পড়ুন>>  আওয়ামী লীগ–বিএনপি আলোচনায় না বসলে সংকট বাড়বে

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সারাদেশে বিএনপির ৯৩ জন নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান।

সব মিলিয়ে বছরটা কেমন কাটলো বিএনপির, জানতে চাইলে দলটির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, বছরের শুরু থেকেই আমরা আন্দোলনে আছি। এ বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে মিথ্যা বানোয়াট কাল্পনিক মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। অগণিত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকে বাড়িছাড়া। দলের নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে রয়েছেন। অতীতেও সবসময় জনগণের বিজয় হয়েছে, এবারও বিজয় হবে, ইনশাল্লাহ্।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গুম, নির্যাতন, আন্দোলন সব মিলিয়ে দুঃসময়ে বছর পার করেছেন নেতাকর্মীরা। বছরজুড়ে দলের নীতি নির্ধারণী মহল দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ, এটিই বছরের বড় সার্থকতা। আওয়ামী লীগ একদিকে, গোটা দেশ অন্যদিকে, এটিই সার্থকতা।

কেএইচ/এমকেআর/জেআইএম