শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ঘিরে বছরজুড়ে চলেছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। শেষদিকে এসে তা গড়িয়েছে আন্দোলনে। নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করে গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক-শিক্ষকও। শিক্ষাক্রম নিয়ে তুমুল বিতর্কের বছরে ছিল নানান ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের উত্তাপও। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২৩ দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করেন শিক্ষকরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব বেসরকারি স্কুল-কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা। বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতির দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও।
Advertisement
এছাড়া এসএসসি-এইচএসসিতে নিম্নমুখী ফল, ডেঙ্গুতে একের পর এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নতুন পাঠ্যবই ছাপাতে দেরি, এক দশক পর প্রাথমিকের শিক্ষকদের পদোন্নতি, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, কিন্ডাগার্টেন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা, এক বছরে তিন বিসিএসের ফল প্রকাশ, গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে ভোগান্তি, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির রেষারেষি, হরতাল-অবরোধে বার্ষিক পরীক্ষাসহ নানান ঘটনায় আলোচনায় ছিল শিক্ষাখাত।
শিক্ষার আমূল পরিবর্তনে তুমুল বিতর্ক
চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন। ২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
Advertisement
নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা ও মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতানির্ভর পড়াশোনায় জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বদলে গেছে চিরাচরিত পড়াশোনার পদ্ধতিও। তবে শিক্ষাক্রমের এমন আমূল পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এক পক্ষ বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী। একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ, যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এটি সহায়ক। অন্য পক্ষ শিক্ষাক্রমের কড়া সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
শিক্ষাক্রমের এমন আমূল পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এক পক্ষ বলছে, নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী। একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ, যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এটি সহায়ক। অন্য পক্ষ শিক্ষাক্রমের কড়া সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন>> এমপিওভুক্তি মেলেনি দুই মাসেও, কষ্টে দিন কাটছে ২৭২০ শিক্ষকের
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন অভিভাবকরা। ফেসবুক গ্রুপ থেকে গড়ে ওঠা ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’ নামের সংগঠন এখনো সক্রিয়। তবে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পক্ষ থেকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা হয়। এতে এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা বর্তমানে কারাগারে।
Advertisement
শিক্ষাবিদরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী। তবে বর্তমান বাস্তবতায় তা বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাযথ প্রস্তুতির অভাব, শিক্ষার্থীর চাপ, দক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষা-সহায়ক উপকরণের সংকট, মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও প্রথাগত মনোভাব।
শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চলতি বছরের মধ্যেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করা হবে। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে যে ধরনের ক্লাসরুম, শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ প্রয়োজন তা সরকার দেবে। আগামীতে শিক্ষা হবে দেশের সবচেয়ে বড় মেগাপ্রকল্প।
জাতীয়করণ আন্দোলনে অস্থির শিক্ষাঙ্গন
২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। সরকার সেই আন্দোলনে গুরুত্ব দেয়নি। কোনো ধরনের আশ্বাস ছাড়াই গুটিয়ে যায় আন্দোলন। ২০২৩ সালে আবারও জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা একই দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
আরও পড়ুন>> অনুমতি দিয়ে ৩০ মিনিট আগে বাতিল, পরে অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশ
১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। এতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ। টানা ২৩ দিন অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন করেন তারা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। ১ আগস্ট রাতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষক নেতারা। বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে অনশন স্থগিত করে ক্লাসে ফেরেন।
তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জাতীয়করণ দাবি পূরণে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়নি সরকার। এ নিয়ে দুটি কমিটি করে দিলেও বিষয়টি এখন ‘চাপা পড়ে গেছে’। ফলে এবারের আন্দোলনও বৃথা বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। উল্টো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকরা সরকারের রোষানলে পড়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। বিপাকে পড়াদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ। নিজ স্কুল থেকে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কাওছার আহমেদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন।
এসএসসি-এইচএসসির নিম্নমুখী ফল
২০২৩ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। ২৮ জুলাই এসএসসির ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। নিম্নমুখী এ ফলাফলে শিক্ষাবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার পর পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ায় ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে। তবে এটি অস্বাভাবিক নয়।
বই ছাপা নিয়ে লেজেগোবরে এনসিটিবি
নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবার দুই মাস আগে পাঠ্যবই ছাপানো শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে লেজেগোবরে অবস্থায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতে দেরি, টেন্ডারে অনিয়মসহ নানান কারণে এখনো সব বই ছাপানো সম্ভব হয়নি। এরপরও ১ জানুয়ারিই বই উৎসব করবে সরকার। বছরের প্রথম দিনে কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কৌশলে এগোচ্ছে এনসিটিবি। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছে দিতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ২৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। চলতি বছরের ১২ মার্চ প্রাথমিক সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ৩২ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৮ হাজারের মতো প্রার্থী ভি-রোল ফরম পূরণ করে চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে আবেদন করেন। প্রার্থীদের অপেক্ষা শেষ হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। সেদিন রাতে মোট ২৭ হাজার ৭৪ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এসব শিক্ষকরা চাকরিতে যোগ দিলেও এখনো অনেকে এমপিভুক্ত হতে পারেননি। ফলে তাদের কষ্টের দিনও কাটেনি।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকরা সরকারের রোষানলে পড়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। বিপাকে পড়াদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ। নিজ স্কুল থেকে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কাওছার আহমেদ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন।
৯ বছর পর প্রাথমিকে পদোন্নতি শুরু
প্রায় এক দশক পর পদোন্নতিজট খুলেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। গত ৩ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের ২০৫ জন সহকারী শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়ার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত চার মাসে টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার এক হাজারের কাছাকাছি সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়েছেন। শূন্য রয়েছে আরও প্রায় ২৯ হাজারের বেশি পদ। কিন্তু যোগ্য বহু শিক্ষক পদোন্নতি নিতে চাইছেন না। শেষ বয়সে প্রধান শিক্ষক হওয়াটা তাদের কাছে এখন ‘উটকো’ ঝামেলার। পদোন্নতিটাও ‘তেতো’। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
বিসিএসে জট কাটাতে তৎপর পিএসসি
এক বছরের মধ্যে আবেদন, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে বিসিএসের ফল প্রকাশের নীতিতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। মুখে এ কথা বললেও কাজের চিত্র ভিন্ন। এক বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশে তিন-চার বছর সময় নিয়ে ফেলে পিএসসি। চাকরিপ্রত্যাশীরা বিসিএসের জটে ক্ষুব্ধ। অবশেষে জট খুলতে ২০২৩ সালে দেখা মিলেছে পিএসসির কার্যকর কিছু পদক্ষেপ। এতে জট কাটিয়ে ওঠার পথে পিএসসি।
আরও পড়ুন>> বছরের প্রথম দিনেই উৎসব, সময় লাগবে সব বই পেতে
এ বছর একসঙ্গে পাঁচটি বিসিএসের কার্যক্রম চালিয়েছে সংস্থাটি। এরমধ্যে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার, ৪১তম বিসিএসের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হতে পারে ৪৩তম বিসিএসের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের চূড়ান্ত ফল। ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন চলছে।
২৭ নভেম্বর শুরু হওয়ার তারিখ থাকলেও প্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে পিএসসি। তবে সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসের ফলও প্রকাশ করা হবে। ৪৬তম বিসিএসের আবেদন প্রক্রিয়াও চলমান। ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এ বিসিএসের প্রক্রিয়াও শেষ করতে কাজ করছে পিএসসি।
একক ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে ‘রেষারেষি’
একবার পরীক্ষায় বসলেই থাকবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। কমবে ভোগান্তি, খরচ ও দীর্ঘসূত্রতা। রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায়ে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তৈরি করা খসড়া অধ্যাদেশে সাঁয় দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাধ্য হয়ে ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ চালুর চেষ্টার ইতি টেনেছে ইউজিসি। ফলে সাড়ে ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ভোগান্তি বয়েই এবারও ভর্তি পরীক্ষা দিতে ছুটতে হবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি আটকে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব’। এ প্রক্রিয়া চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ হারাবে মন্ত্রণালয়। আর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে ইউজিসির। এ কারণে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ইউজিসিকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কিন্ডারগার্টেনের লাগাম টানতে নীতিমালা
দেশজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা’ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী- কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি যেসব স্কুল রয়েছে, তা সবই ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে অভিহিত হবে। স্কুলে পাঠদান শুরু করতে অনুমতিপত্র লাগবে। অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যেই যথাযথ নিয়ম মেনে নিবন্ধন করতে হবে।
বিধিমালায় স্কুলের প্রাথমিক অনুমোদন, নিবন্ধন, নবায়ন, শিক্ষক নিয়োগ, ভবনের জমির আয়তন, তহবিল গঠন ও পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ফলে নামসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো মালিকপক্ষ কোনো অজুহাত দেখাতে পারবেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় ১০ বছর ধরে চেষ্টার পর ২০২৩ সালে এ নীতিমালা করা সম্ভব হয়েছে। এটি নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখছেন প্রাথমিক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।
হরতাল-অবরোধে আতঙ্ক নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা
সরকার পতনের আন্দোলনে নভেম্বরের শুরু থেকে একের পর এক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত। এরমধ্যেই ঘোষণা হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে শুরু হয় বার্ষিক পরীক্ষা ও নতুন শিক্ষাক্রমে বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন। সরকারের চাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হরতাল-অবরোধেও পরীক্ষা নেয়। বাধ্য হয়ে ভয়-আতঙ্ক নিয়েই এবার বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
প্রার্থীদের অপেক্ষা শেষ হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর। সেদিন রাতে মোট ২৭ হাজার ৭৪ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এসব শিক্ষকরা চাকরিতে যোগ দিলেও এখনো অনেকে এমপিভুক্ত হতে পারেননি। ফলে তাদের কষ্টের দিনও কাটেনি।
ডেঙ্গুতে এবার দেশে রেকর্ড মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু বিস্তারের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও যথারীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধশত শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে রয়েছে ভিকারুননিসার জাহিন আনাম আঁচল, মেহজাবিন সূহী, ইলমা জাহান, আইডিয়ালের শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন। এছাড়া মেডিকেল ছাত্রী দীপান্বিতা বিশ্বাসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নামে শিক্ষাঙ্গনে।
জবি উপাচার্যের মৃত্যুতে শোকাহত শিক্ষাপরিবার
উপাচার্যের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত ১১ নভেম্বর ভোরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য তাকে এক দফা সিঙ্গাপুরও নেওয়া হয়। শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাঁদিয়ে ওপারে পাড়ি জমান তিনি। তার এমন মৃত্যুতে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মাঝে শোকের ছায়া নামে।
শিক্ষা ক্যাডারদের আন্দোলনে অচল শিক্ষা প্রশাসন
ক্যাডার বৈষম্য নিরসন, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিনদিনের কর্মবিরতি কর্মসূচি করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। তারও আগে তারা সংবাদ সম্মেলন, অর্ধদিবস অবস্থান কর্মসূচি, মন্ত্রীকে স্মারকলিপিসহ বিভিন্নভাবে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা ১৭ ও ১৯ অক্টোবর ফের দুদিনের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এতে শিক্ষা প্রশাসনে স্থবিরতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ অক্টোবর রাতে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি তাদের সব দাবি পূরণে আশ্বাস দেন। এরপর কর্মসূচি থেকে সরে আসে শিক্ষা ক্যাডাররা। যদিও দাবি পূরণে এখনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভুয়া ভিডিও ভাইরাল, প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তিতে প্রথমবারের মতো লটারি মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের পরীক্ষায় জালিয়াতি-অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলন, বন্যায় এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ঢাকার নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাহাড়সম অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে ২০২৩ সালে শিক্ষাখাত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।
এএএইচ/এমএইচআর/জিকেএস