দেশজুড়ে

একতলা ফাউন্ডেশনে তিনতলা পৌর মার্কেট!

পাবনার বেড়া উপজেলার সদরে পৌর মার্কেটটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। প্রথমে একতলা ফাউন্ডেশনের উপর মার্কেটটি তৈরি করা হলেও, পরবর্তীতে আরও দুতলা নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে পৌর মার্কেটটি চরম ঝঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

Advertisement

জানা যায়, ২০১৩ সালে ভবনটি ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ নোটিশ দেয় বেড়া পৌর কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করে ব্যবসায়ীদের আবারও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন অর্ধশত ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা বলছেন ব্যবসা বন্ধ হলে জীবিকার পথ বন্ধ হবে তাই তারা ঝুঁকি নিয়েই রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের বেশ কয়েকটি পিলারে ফাটল ধরেছে। দেওয়ালের অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। আবার ভবনের বিভিন্ন অংশে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। এরই মাঝে ব্যবসা করছেন অর্ধশত ব্যবসায়ী।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বেড়া পৌরসভার তৎকালীন মেয়র এস এস আমির আলী পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ করেন। এর আগে সেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সকাল-বিকাল অস্থায়ী দোকান পেতে ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে আব্দুল বাতেন বেড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে একতলা ফাউন্ডেশনের ওপর আরও দুতলা ভবন নির্মাণ করেন। দোতলাতে দোকান এবং তৃতীয় তলায় অডিটরিয়ামসহ পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। ভবনের একতলা ও দোতলায় মোট ৫০জন ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এখন পলেস্তারা ও ঢালাই খসে পড়ছে। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে দেওয়ালে উচ্ছেদ নোটিশ সেঁটে দিয়েছে।

Advertisement

পৌর মার্কেট এর প্রধান ফটকে দেখা যায়, সেখানে টাঙানো রয়েছে ‘একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামের ডিজিটাল নোটিশ। সর্বশেষ নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ইতিপূর্বেই এই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে ভবনের ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। পুনরায় ব্যবসায়ীদের মালামাল স্থানান্তরের অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় জানমালের কোনো ক্ষতি হলে পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।’ এরপরও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ীরা এ ভবনেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ভবনটি ধসে যাওয়ার আতঙ্কে থাকেন। এর ওপর ভূমিকম্প হলে তো কথাই নেই। চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর সকালে ভূমিকম্পের সময় তারা ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন বলে জানান।

পৌর সুপার মার্কেট এর পাশের মোল্লা সুপার মার্কেট, হাজী সুপার মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী জানান, পৌর মার্কেটটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মনে হয় ঝড়েই ভবনটি ধসে পড়বে। তারাও আতঙ্কে থাকেন।

পৌর সুপার মার্কেটের উত্তর-পশ্চিম দিকের ১৭ নম্বর দোকান ভাড়া নিয়ে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা চালাতেন মনিরুজ্জামান। সপ্তাহখানেক আগে তিনি মার্কেট থেকে তার দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দোকানের সামনের অংশ ও ভেতরের ছাদ থেকে প্রায়ই ইটের টুকরা ও প্লাস্টার খুলে পড়ে। মাস তিনেক আগে দোকানের ভেতরে ছাদ থেকে বড় একটি অংশ আমার সামনে খুলে পড়েছিল। সেদিন অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।’

Advertisement

তবে অনেকেই বিকল্প না থাকায় এখান থেকে যেতে পারছেন না। এরকম একজন মুদি দোকানি লিটন চৌধুরী। তিনি জানান, বছর দশেক আগে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছিল। সম্প্রতি আবারও দিয়েছে। কিন্তু দোকান ছেড়ে দিলে আয়ের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও এই মার্কেটে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

কাঁসা-পিতলের ব্যবসায়ী আব্দুল মমিন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, যখন ছাদের দিকে তাকাই ভয়ে আঁতকে উঠি, সব সময় ভয়ের মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে হচ্ছে। জামাল নামে আরেক ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। ছাদ থেকে সিমেন্ট খসে পড়ছে। ভয় নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। কিন্তু অন্য কোথাও দোকান করার জায়গা নেই, তাই এখানেই পড়ে আছি।

মার্কেটের ১৬ নম্বর দোকানে চাল-ডাল, মসলার ব্যবসা করেন লিটন চেীধুরী। তিনি বলেন, এখন ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি নামলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। এর মধ্যেই ব্যবসা করতে হচ্ছে। যাওয়ার তো জায়গা নাই। তাই বাধ্য হয়ে ভয় নিয়েই করে ব্যবসা করছি।

পৌর মার্কেটের পাশে আবদুল জলিল সুপার মার্কেটের মালিক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘পৌর মার্কেট ভবনের দক্ষিণ দিকের ১০ থেকে ১২টি দোকান পুরোপুরি আড়ালে পড়ে গেছে। এসব দোকানে প্রবেশের রাস্তা একেবারে সরু হয়ে গেছে। পৌর মার্কেটের ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে আমাদের সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়।’ এ বিষয়ে বেড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-আর-রশিদ জাগো নিউজকে জানান, ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১০ বছর আগেই চিহ্নিত হয়েছিল। সে সময়ও তাদের উচ্ছেদের জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল। জানমালের ক্ষতি এড়াতে পৌর মার্কেটটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মাসিক ভাড়া স্থগিত করা হয়েছে। তৃতীয় তলা থেকে পাবলিক লাইব্রেরি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের দোকান ছেড়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এনআইবি/এএসএম