ফিচার

কেন বাড়ছে মোবাইল সাংবাদিকতা

মিরাজ উদ্দিন

Advertisement

সকালে হাতে গরম চা আর পত্রিকা নিয়ে কিংবা রিমোট নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসা এখন প্রায় বিলীনের পথে। এখন পত্রিকা হাতে নিয়ে বা টেলিভিশন দেখার জন্য বসে থাকার সময় ফুরিয়ে এসেছে। মুহূর্তের মধ্যেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর পাওয়া যায় এ যুগে। ডিজিটাল যুগে সবকিছুর সঙ্গে সাংবাদিকতাও পাল্টে গেছে। বাড়ছে মোবাইল সাংবাদিকতা। বলা যায়, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে সাংবাদিকতা।

মোবাইল জার্নালিজম (মোজো) আসলে কী? সহজ কথায়, মোবাইল ফোন তথা স্মার্টফোন দিয়ে যে সাংবাদিকতা করা হয়, তাকেই মোবাইল জার্নালিজম বলে। অর্থাৎ আপনি আশপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা মোবাইল ফোন দিয়ে ধারণ করে, সম্পাদনার মাধ্যমে সংবাদ উপযোগী করে তুলতে পারলেই সেটি মোবাইল জার্নালিজম।

একজন রিপোর্টার খুব সহজে যে কোনো স্থানে অবস্থান করে, যে কোনো অবস্থায়, যে কোনো বিষয়ের খবরাখবর তাৎক্ষণিক অডিয়েন্সের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন; সেটাই মোবাইল জার্নালিজম। চিরায়ত পদ্ধতিতে সাংবাদিকতা করতে হলে একজন রিপোর্টারকে অনেক উপকরণ, যেমন- ভারী ক্যামেরা, বুম, সরাসরি সম্প্রচারের সরঞ্জাম এবং এগুলো পরিচালনার জন্য বাড়তি ক্রু বহন করতে হয়। ফলে তিনি চাইলেই যখন ইচ্ছে তখনই সংবাদ দেওয়া শুরু করতে পারেন না।

Advertisement

একজন মোবাইল জার্নালিস্টের এসব নিতে হচ্ছে না। তিনি ইচ্ছে করলেই একা কাজ করতে পারেন। সরাসরি সম্প্রচারের জন্য বিশাল ও জটিল আউটসাইড ব্রডকাস্টিং ভ্যান ব্যবহার করতে হয় না। দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে তিনি শুধু স্মার্টফোন দিয়েই সরাসরি সম্প্রচার করতে পারেন। রিয়েল-টাইম সাংবাদিকতার জন্য বিশ্বে মোবাইল জার্নালিজম একটি অনন্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: আমরা কীভাবে মানবাধিকার সংজ্ঞায়িত করবো? 

২০২০ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে ৫২০ কোটি মুঠোফোন গ্রাহক ছিল, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের তুলনায় ২২ কোটি বেড়ে ২০২০ সালে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪০০ কোটিতে পৌঁছেছে। গত বছরের শেষে বিশ্বের ৯৪ শতাংশ মানুষ থ্রি-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ফোরজি এবং ফাইভ-জি পৌঁছেছে বিশ্বের ৮৭ এবং ১৭ শতাংশ মানুষের কাছে। এ থেকেই বোঝা যায়, মোবাইলের জনপ্রিয়তা কতটা। কেননা মোবাইল জার্নালিজমের মাধ্যমে সাংবাদিকরা ঘটনা বা সাবজেক্টের খুব কাছে চলে যেতে পারেন। মোজো জার্নালিস্ট কারহুনেন এগারো জন মোবাইল জার্নালিস্টের কাছ থেকে ইন্টারভিউ নেন। তারা বলেছেন, ‘যেসব জায়গায় টিভি ক্যামেরা ও একাধিক ক্রু নিয়ে যাওয়া অসম্ভব; সেসব জায়গাতেও তারা স্টোরি কাভার করেছেন স্মার্টফোন দিয়ে।’ বেশিরভাগ মোবাইল জার্নালিস্টের মতে, মানুষ টিভি ক্যামেরার চেয়ে মোবাইল ক্যামেরায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ দাবি প্রমাণ করতে কারহুনেন একটি পরীক্ষার আয়োজন করেন।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির একটি শপিং সেন্টারে একজন মোবাইল জার্নালিস্ট ও দুজন টিভি ক্যামেরা ক্রু ৪০০ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেন। এর মধ্যে ২০০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একজন মোবাইল জার্নালিস্ট। আর বাকি ২০০ জনের ইন্টারভিউয়ের জন্য একটি টিভি ক্যামেরা ও দুজন টিভি ক্রুকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলাফল হলো চমকপ্রদ। দেখা গেল, ৩৩.৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল জার্নালিস্টকে ইন্টারভিউ দিয়েছেন; যেখানে মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ টিভি ক্যামেরায় কথা বলেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: নারীর মুক্তি ও জাগরণের অবিস্মরণীয় নাম বেগম রোকেয়া 

তবে শুধু সুবিধার কথা বললে ভুল হবে। এতে অসুবিধাও একটু আছে। যেমন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি হলে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বন্যার সময় নিউজ কাভার করতে গেলে সঙ্গে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যেতে হবে। তাহলে চার্জের জন্য কোনো টেনশন করতে হবে না।

ফলে বিশ্বে মোবাইল সাংবাদিকতার গুরুত্ব বাড়ছে। কেননা মোবাইল জার্নালিস্টরা ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন। এ জায়গাগুলো দখল করে রাখছেন তারা। সুতরাং মোবাইল সাংবাদিকতাকে আগামীর ভবিষ্যৎ বলা যেতেই পারে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/জিকেএস