কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র সামনে আসার পরে ভারত যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে দিল্লির মনোভাবে বদলের ‘আভাস’ পাওয়া যাচ্ছে।
Advertisement
মাস দুয়েক আগে তিনি যখন অভিযোগ তুলেছিলেন যে কানাডিয়ান নাগরিক ও খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সঙ্গে ভারতীয় এজেন্সিগুলো যুক্ত বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রুডো। কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ওই সময় ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তার তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের তোলা অভিযোগের পরে কিছুটা সংযমী আচরণ করছে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় কূটনীতি কি শক্তিশালী হয়েছে?
সিবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাস্টিন ট্রুডো। তার এই সাক্ষাৎকারের ঠিক আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসকে একটি সাক্ষাৎকার দেন।
Advertisement
সেখানে মোদী বলেছেন, ভারতের কোনও নাগরিক যদি খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তার দেশ প্রস্তুত আছে। এ ধরনের কিছু ঘটনাকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এরকম ঘটনা আসলে বিরল।
কেন এই ‘সুর বদল’?
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মাস দুয়েক আগে অভিযোগ করেছিলেন, তার দেশের শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যার ঘটনায় ভারতীয় এজেন্সিগুলো জড়িত। তখন ভারত ওই অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে নয়া দিল্লি-অটোয়ার সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করে।
সিবিসি নিউজকে দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাৎকারটিতে ট্রুডো বলেছেন, আমার মনে হয় যে তারা (ভারত) বুঝতে শুরু করেছে, এই বিষয়টি আর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এখন আগের থেকে কিছুটা খোলা মনে সহযোগিতা করছে ভারত।
Advertisement
আরও পড়ুন: যাকে নিয়ে ভারত-কানাডা সম্পর্ক তলানিতে, কে এই হরদীপ সিং?
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রুডো বলেন, ভারতের মূলত বুঝতে পেরেছে যে কানাডাকে আক্রমণ করে কথা বললেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। তবে আমি এটাকে পরিবর্তন বলবো না। সম্ভবত এটি পরিবর্তনের একটি আভাস।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অটোয়া ভারতের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার চেষ্টা করছে না। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এবং ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশল নিয়েও একযোগেই কাজ করবে কানাডা। তবে আমাদের কাছে মৌলিক বিষয় হলো, সবার আগে আইনের শাসন নিশ্চিত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন মোদী
নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, আমাদের কোনো নাগরিক যদি মন্দ কিছু করে থাকেন, তাহলে আমরা তা খতিয়ে দেখতে প্রস্তুত। আমরাও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
‘যে মার্কিন নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর নিউ ইয়র্কের এক আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করেছে, সেই গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে ভারত আগেই ‘সন্ত্রাসী’ বলে ঘোষণা করেছিল।
আরও পড়ুন: শিখ নেতা হত্যার ষড়যন্ত্র, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫ আইনপ্রণেতাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোপন ব্রিফিং’
ওই প্রসঙ্গ টেনে এনে মোদী তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারতের বাইরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে সহিংসতার হুমকি ও উসকানি দেয়।
তবে এই ঘটনায় ভারত-মার্কিন সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন মোদী। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস-বিরোধী সহযোগিতা আমাদের বন্ধুত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি মনে করি না যে কিছু ঘটনাকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে কী অভিযোগ?
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে নিউ ইয়র্কের আদালতে যে অভিযোগপত্র পেশ করা হয়েছে, সেখানে ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলো হলো, তিনি পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন ও ওই কাজের জন্য এক ভাড়াটে খুনিকে অগ্রিম টাকাও দিয়েছিলেন।
ভারতের নিরাপত্তাবিষয়ক সরকারি কাজে জড়িত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিখিলকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ পান্নুনকে হত্যার জন্য যে ভাড়াটে খুনিকে ঠিক করা হয়েছিল, তিনি যে আসলে ছদ্মবেশী মার্কিন ফেডারেল এজেন্ট, সেটা না বুঝেই তাকে অগ্রিম অর্থ দেন নিখিল গুপ্তার এক সহযোগী।
আরও পড়ুন: কেন স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করে আসছেন শিখরা?
গুরপতবন্ত সিং পান্নুন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার যৌথ নাগরিক। বেশ কয়েক বছর আগেই ভারত তাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ঘোষণা করেছে। তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তাকে এরই মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিখিলের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ভারতে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ ছিল।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ