ফরিদপুরে ডিসি অফিসের রেকর্ডরুমের তালা ভেঙে চুরি করা ১২টি ল্যাপটপের মধ্যে ১১টি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় চুরি ও চোরাই ল্যাপটপ কেনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয়েছে একটি মোবাইলফোন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে ডিসি অফিসের রেকর্ডরুমে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার একদিনের মধ্যে রেকর্ডরুম থেকে চুরি হওয়া ১১টি ল্যাপটপসহ চোরচক্রের সদস্য ও ক্রেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন পেশাদার চোরচক্রের সদস্য ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর এলাকার সুলতান মুন্সী (২৬), শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার শহিদুল শেখ (২২), শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার পারভেজ শেখ (২২), চোরাই ল্যাপটপ ক্রেতা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিনোকদিয়া এলাকার বাসিন্দা শহরের ধানসিঁড়ি হোটেলের ওয়েটার লিয়ান শেখ (৩০) ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকার উত্তর দৌলতদিয়া এলাকার মীম খান (৩০)।
Advertisement
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ডিসি কার্যালয়ের রেকর্ডরুম তছনছ, ১২ ল্যাপটপ চুরি
অভিযানের বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, প্রথমে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার পারভেজ খানের বাসা থেকে পারভেজ খান ও সুলতান মুন্সীকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে সুলতানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহরের চরকমলাপুর মহল্লায় তার বাড়ি থেকে চারটি ল্যাপটপ, চোরাই ফোন, চোরাইকাজে ব্যবহৃত একটি সেলাই রেঞ্জ, একটি হাতুড়ি ও একটি রড উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহিদুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে শহরের আলীপুর থেকে লিয়নকে গ্রেফতার ও তিনটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। এরপর দুটি ল্যাপটপসহ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শামীমকে।
গ্রেফতাররা জানান, রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় রেকর্ড রুমের দরজার তালা ও দরজা সেলাই রেঞ্জ, রড ও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রুমের ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে ল্যাপটপ ও মোবাইল চুরি করে সরে পড়েন।
পুলিশ সুপার জানান, ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় জড়িত তিন সদস্য মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্যই তারা চুরির পথ বেছে নেন। এরমধ্যে সুলতান মুন্সীর নামে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি এবং পারভেজ শেখের নামে ১২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই মাদক সংক্রান্ত।
Advertisement
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিটির অহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রামানন্দ পাল। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। কীভাবে চুরি সংগঠিত হয়েছে এবং কোথায় কোথায় দুর্বলতা রয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিটন আলী বলেন, রেকর্ডরুমে যে সিসি ক্যামেরা ছিল তা নাইট মুড না থাকায় ততটা কর্যকর ছিল না।
তিনি আরও বলেন, রেকর্ডরুমের যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) শৈলেন চাকমা (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাহউদ্দিন, ট্রাফিক পরিদর্শক তুহিন লস্কর, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর গফফার এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন বিশ্বাস।
এন কে বি নয়ন/এসআর/জেআইএম