বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখের বর্ষবরণে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে উৎসবের আমেজে ভাটা পড়বে এমন আশঙ্কাই দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে, মুখোশে মুখ ঢেকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া যাবে না এবং ভুভুজেলা বা বিকট আওয়াজের বাঁশি বাজানো যাবে না। গত বছর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনাকে মাথায় রেখেই যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য কিভাবে নিরাপত্তা দিয়ে এই অনুষ্ঠান আরো প্রাণবন্ত, অংশগ্রহণমূলক এবং সার্বজনীন উৎসবে পরিণত করা যায় সেটি নিশ্চিত করাটাই হচ্ছে যুক্তিযুক্ত। কিন্তু মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার শর্টকাট রাস্তায় যাওয়াটা কোনোভাবেই দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না। এটা অনেকটা হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলার মতো অবস্থা। বাঙালির যে কয়টি উৎসব আছে তার মধ্যে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ একটি সার্বজনীন অনুষ্ঠান। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি বয়সের মানুষ এই উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। গ্রামগঞ্জ তো বটেই নাগরিক জীবনেও জায়গা করে নিয়েছে এই উৎসব। রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন, চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা আজ বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা রঙবেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে সকল বয়সী মানুষজন অংশ নেয় এই উৎসবে। বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। থাকে পান্তা ইলিশ খাওয়ার আয়োজন। সবমিলিয়ে এক অনাবিল আনন্দ উৎসবে মাতে এদিন সমগ্র বাঙালি জাতি। বৈশাখে এখন কেনাকাটার ধুমও পড়ে যায়। সরকার এ বছর থেকে বৈশাখী ভাতাও চালু করেছে উৎসবের গুরুত্ব বিবেচনায়। একদিকে উৎসব ভাতা চালু হবে অন্যদিকে উৎসবের আয়োজনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে-এটা স্পষ্টতই স্ববিরোধিতা। বৈশাখের খরতাপে মানুষজন সাধারণত বিকেল বেলাতেই বাইরে বেরুতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাছাড়া এ সময় নানা আয়োজনও থাকে। তাই ৫ টার মধ্যে উৎসব শেষ করা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত নয়। এতে যারা বাঙালির এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যই সফল হবে। সেটা কখনো কাম্য হতে পারে না। এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন জাগো নিউজকে বলেছেন-‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। এটি প্রাণের উৎসব। এই উৎসবে আনন্দ থেকে জোর করে ঘরে ফিরে যেতে বলাটা কেমন কথা? আমি বুঝতে পারছি না। নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে সার্বজনীন এই উৎসবকে শৃঙ্খলিত করা হলো। এটা ভালো কিছু নয়। বরং আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভিন্নভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথ খুঁজে বের করতে পারতো।` আমাদের প্রত্যাশা সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বাঙালির প্রাণের উৎসবকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এইচআর/এমএস
Advertisement