শরীরজুড়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা। চাকু দিয়ে হাত পায়ের বিভিন্ন অংশে কেটে বিকৃত করা। এমন বর্বর নির্যাতনের পর স্বামীর দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে পাঁচদিন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে মারা গেছেন গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা (৩৯)।
Advertisement
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে তিনি মারা যান।
রেবেকা গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লার নবির সরদারের মেয়ে। তার স্বামী মেহেদী হাসান গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চলনালী কান্দিপাড়া গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে দগ্ধ রেবেকাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রেবেকাকে রোববার শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বছর খানেক আগে আদালতের মাধ্যমে মেহেদী হাসানের সাথে রেবেকার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে কলহ হতো। কোনো পেশা না থাকায় রেবেকার টাকাতেই সংসার চলতো। সম্প্রতি টাকার জন্য রেবেকাকে চাপ দিচ্ছিলেন মেহেদী। এজন্য শারীরিক নির্যতানও করা হতো।
রেবেকার মা লালবি বেগম জাগো নিউজকে বলেন, যৌতুক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রেবেকাকে অমানুষিক নির্যাতন করছিলেন মেহেদী। এসব ঘটনায় মেহেদীর বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলাও করেছেন রেবেকা। এরপর থেকে রেবেকাকে আমার সাথেই থাকতো। সম্প্রতি মামলা প্রত্যাহার করতে তাদের পরিবারের ওপর চাপ দিচ্ছিলেন মেহেদী।
তিনি আরও বলেন, আগুন দেওয়ার পর মেহেদী হাসান (৩৫), দেবর তানজিল (৩০) ও শাশুড়ি মেহেরজানকে (৫৫) অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে। তবে রেবেকা মারা গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়া মেনে নিহত রেবেকার লাশ আনার প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলমান।
Advertisement
এর আগে বার্ণ ইউনিটে নেওয়ার সময় দগ্ধ রেবেকা সুলতানা জানান, তার আগের পক্ষের দুই বছরের সন্তানকে আটকে রেখেছিলেন মেহেদী। সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে শুক্রবার রাতে মেহেদী তাকে বাড়িতে ডাকেন। সন্তানের কথা বিবেচনা করে তিনি মেহেদীর বাড়িতে যান। সেখানে যাওয়া মাত্রই স্বামী মেহেদী, দেবর তানজিল ও শাশুড়ি মেহেরজান তার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর মেহেদী প্রথমে সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন। চাকু দিয়ে হাত পায়ের বিভিন্ন অংশ কেটে দেন। একপর্যায়ে কেরোসিন ঢেলে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তখন তিনি নির্যাতনের বিষয়টি থানায় জানিয়েছিলেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক বলেন, দগ্ধ অবস্থায় রেবেকাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। রেবেকার শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ জায়গা পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন জানান, চিকিৎসার জন্য রেবেকাকে থানার পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছে। রেবেকার মা একটি মামলা করেছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর।
রেজাউল করিম রেজা/এনআইবি/জেআইএম